ইসলাম

কোরবানী নিছক একটি অনুষ্ঠান নয় বরং ইবাদত

By mumin

September 15, 2017

কোরবানী শব্দটি আরবি ‘ক্বুরব’ ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ আল্লাহর নৈকট্য বা সান্নিধ্য। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তার নামে আতেœাৎসর্গ করা বা পশু জবেহ করাকেই কোরবানী বলে। এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে পাকে বর্ণনা করেন ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই আমি কোরবানী নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। যাতে তারা এই নেয়ামতের কারণে শুকর আদায় করে যে, আল্লাহ তাদের জন্য চুতুষ্পদ জন্তু জবেহের সুযোগ দিয়েছেন’। (সূরা হজ্ব- আয়াত ৩৪) একমাত্র সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানী করা হয় বিধায় ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করলে তা কুফর ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ফকিহগণের মতে উক্তরূপে জবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। তাই কোরবানীর দ্বারা তাওহীদ ও একত্ববাদের আকীদাগত বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা যে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা সে কথারই প্রমাণ পাওয়া যায়। কোরবানী নিছক একটি অনুষ্ঠান নয় বরং ইবাদত অর্থাৎ আল্লাহ ত’আলার নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। মহান রবের হুকুমেই হযরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) পর্যন্ত সব নবী রাসূল এবং তাদের উম্মতেরা ইবাদত মনে করেই কোরবানী আদায় করেছেন।

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর প্রেমে নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে আল্লাহর রাহে কোরবানী করতে সানন্দে সম্মত হয়ে আতœত্যাগের যে অবিস্বরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন পৃথিবীর বুকে এটাই হল স্রষ্টা প্রেমের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট কোরবানী। তাঁর এই কোরবানীর অনুপম দৃষ্টান্তকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম একটি ইবাদত হিসাবে কবুল করে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়ালা কোরবানী করাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। শরীয়তের এই বিধান কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে পাকে বর্ণনা করেন ‘আল্লাহর কাছে পৌছায়না (কোরবানীর) গোশত এবং রক্ত বরং পৌছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্টত্ব ঘোষণা কর’। (সূরা আল-হজ্ব, আয়াত-৩৭) হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, আদম সন্তান কোরবানীর দিন যে নেকীর কাজ করে থাকেন তন্মধ্যে আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হল কোরবানী করা। কাল কিয়ামতে কোরবানীর পশু, তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে (যা কোরবানী দাতার পাল্লায় দেয়া হবে যাতে নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে) কোরবানীর পশুর রক্ত জমীনে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহ পাকের নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা এই পুরস্কারে আন্তরিকভাবে খুশি হও। -ইবনে মাজাহ। উপরোল্লেখিত আয়াতে কারিমা ও হাদিস পাকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় কোরবানী নিছক কোন অনুষ্টান নয় বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলাম ধর্মের একটি অন্যতম নিদর্শন। নামাজ রোযার ন্যায় কোরবানীও পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতদের জন্য আবশ্যকীয় হলেও উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওয়াজিব করেছেন, তবে এ বাধ্যবাধকতা সবার ক্ষেত্রে নয়। ইমাম আবু হানিফা (র.) ও ইমাম মুহাম্মদ (র.) সহ বেশির ভাগ ফকিহদের মতে মুসলমান, স্বাধীন, বালিগ, বিত্তবান (মালিকে নেছাব) ও মুক্বীমের পক্ষে তার নিজের কোরবানী করা ওয়াজিব। কোরবানী আদায় না করে যদি সেই অর্থ অন্য কোন খাতে দান করা হয় তাহলে আল্লাহর একটি বিধান লঙ্ঘন করা হবে এবং যাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব তারা গোনাহগারের দলে অন্তর্ভূক্ত হবে। কোরবানীর গোশত শুধু নিজে খাওয়ার জন্য নয় বরং কোরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের, একভাগ গরীবদের ও একভাগ আতœীয় স্বজনদের মধ্যে বন্টন করা মুস্তাহাব। কোরবানীর পশুর বিক্রিকৃত চামড়ার নগদ অর্থ গরীব-মিসকিন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে আক্রান্ত দ্বীন-দুঃখিদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া উত্তম। অসহায় বনী আদমও যাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে কেবল ভোগ নয়, ত্যাগ তিতিক্ষার মনোভাব নিয়ে হালাল উপার্জন থেকে আদায়কৃত কোরবানী, দান, সদকা অকাতরে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমেই অর্জিত হয় তাকওয়া, একনিষ্টতা ও আল্লাহর নৈকট্য। পশু কোরবানী মূলত নিজের নফস তথা কুপ্রবৃত্তিকে কোরবানী করার প্রতীক। পশু কোরবানীর সাথে সাথে মানব মনে কুফর, শিরক, লোভ-লালসা, হিংসা বিদ্বেষ, রিয়া, গিবত, অহংকার, কৃপণতা, সম্মান কামনা, দুনিয়ার মহব্বত সহ আরো অসংখ্য পাপ পংঙ্খিলতা ও কলুষতা কোরবানী করার মাধ্যমেই দূরীভূত হয় এবং অর্জন হয় মহান রবের নৈকট্য ও তাকওয়া। মুসলমানদেরকে কোরবানী একটি প্রতীক হিসাবে শুধু পশু জবেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা বরং বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণের জন্য সবাইকে উৎসর্গিত হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে কোরবানীর সঠিক দীক্ষা নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ধনী গরীব সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে কোরবানীর স্বার্থকতা যাতে অর্জন করতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।

Comments

comments