অন্যান্য

কুরআনের আলোকে কৃপণের স্বভাব ও পরিণাম

By lazy-coder

April 05, 2016

কুরআনের আলোকে কৃপণের স্বভাব ও পরিণাম দানশীলতার বিপরীত স্বভাব হচ্ছে কার্পণ্য। যারা কার্পণ্য করে তারাই কৃপণ। কৃপণ শব্দের অর্থ অত্যন্ত ব্যয়কুন্ঠ, কিপটে, কঞ্জুস, খরচ না করে কেবল সঞ্চয় করতে চায় এমন লোক। এরা লোক সমাজে নিন্দিত, ঘৃণিত এমনকি উপহাসের পাত্রও বটে। আল্লাহতা’লা মানুষকে সম্পদ দান করেছেন। সম্পদের হক আদায় করতে তাগিদ দিয়েছেন। দান করতে উৎসাহিত করেছেন। অভাবগ্রস্থদের জন্য ব্যয় করতে সামর্থ্যবানদের আদেশ করেছেন। কিন্তু কৃপণের জন্য তা পাহাড়ের চেয়ে ভারি বোঝার মতো। এদের সম্পর্কে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: “যারা কার্পণ্য করে এবং মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়, যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে জেনে রাখুক আল্লাহ তো অভাবমুক্ত। [হাদীদ-২৪] দেখ, তোমরাইতো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে। যারা কার্পণ্য করে তারাতো কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।’ যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না। [মুহাম্মদ-৩৮] কৃপণের বৈশিষ্ট্য : কৃপণের মন এতই সংকীর্ণ যে, তার কাছে আল্লাহর রহমতের আশার চেয়ে তার সঞ্চিত সম্পদ শেষ হয়ে যাবে যে আশংকাই প্রবল, যদ্দরুণ নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত খরচ করেনা। আর দানের বেলায় তো তার মন চায়ই না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা স্পষ্ট জানিয়ে দেন: বলুন, যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে থাকতো, তবুও ব্যয়িত হয়ে যাওয়ার আশংকায় অবশ্যই তা ধরে রাখতে। মানুষতো অতিশয় কৃপণ। [বনী ইসরাইল-১০০] এবং দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়। [নজম-৩৪] কৃপণের পরিণাম : যারা নিজেরাও কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তা গোপন করে। আমি এরূপ অকৃতজ্ঞদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। [নিসা-৩৭] যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। [তওবা-৩৪] আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ (সম্পদ) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে এটা তাদের জন্য ভাল কিছু। বরং এটা তাদের জন্য অতিমন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মিরাশ কেবল আল্লাহরই জন্য। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। [আল-ইমরান-১৮০] সে দিন সে ধনসম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তাদ্বারা তাদের কপাল, পাঁজর ও পিঠে দাগ দেয়া হবে (এবং বলা হবে) এ হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে, তার মজা ভোগ কর। [তওবা-৩৫] জাহান্নাম সে ব্যক্তিকে ডাকবে, যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল। [মাআরিজ ১৭-১৮] দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও বার বার তা গণনা করে; সে ধারণা করে তার অর্থ সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে; কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (-জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুনে)। [হুমাযা: ১-৪] শয়তানের কাজ : কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল। সে মানুষের অন্তরে সম্পদের মোহ সৃষ্টি করে, দারিদ্রের ভয় প্রকট করে তোলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাপাকের ইরশাদ : শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং অশ্লীতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি প্রদান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [বাকারা-২৬৮] কৃপণের সম্পদ কোন কাজে আসবে না : সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজপথ। (পক্ষান্তরে) কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। এবং তার সম্পদ কোন কাজে আসবেনা, যখন যে ধ্বংস হবে। [লাইল: ৫-১১] যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই : যারা সীমা-লংঘন করে, আল্লাহর নির্দেশ পালনে কার্পণ্য করে, আর যারা মানত আদায় করে না, তারা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে : তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা মানত কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। [বাকারা-২৭০] পরীক্ষা করা হবে : দুনিয়া মানুষের আখিরাতের শস্যক্ষেত্র, পরীক্ষা ক্ষেত্র। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: তোমাদেরকে নিশ্চয় তোমাদের ধনৈশ্বর্য ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে।… [আল ইমরান-১৮৬] আর আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে উত্তীর্ণ হতে হবে এ পরীক্ষায়। সফলতার শর্তাবলী : মানুষের জীবন ও সম্পদ সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে বলেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি বরং বাত্লে দিয়েছেন পরীক্ষা পাশের গাইড লাইনও। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের বাণী : তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো, এবং শোন, আনুগত্য করো ও ব্যয় করো তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য; যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম। [তাগাবুন-১৬]

Comments

comments