কুরআনের আলো-হাদীসের আলো

আদর্শ স্বামী, আদর্শ স্ত্রী এবং অবাধ্য স্ত্রী’র সংশোধন-প্রক্রিয়া [ইসলামের পারিবারিক জীবন-০১]

By mumin

September 14, 2016

নির্বাচিত আয়াত পুরুষ নারীর ওপর কর্তৃত্বপ্রাপ্ত। কারণ, আল্লাহ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আর এ কারণে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে থাকে। সুতরাং সতীসাধ্বী স্ত্রীরা হয়ে থাকে স্বামীর অনুগত এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করেছেন, তার হিফাযতকারিনী। স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার ভয় কর, তাদেরকে ওয়াজ কর (সদুপদেশ দাও), তারপর বিছানায় তাদেরকে বর্জন কর অতঃপর (প্রয়োজনে) তাদেরকে লঘু প্রহার কর। এতে যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় উপায় অন্বেষণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মহান, শ্রেষ্ঠ। আর (এরপরও) তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধের আশংকা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন মীমাংসাকারী নিযুক্ত করবে; তারা উভয়ে সমাধান চাইলে আল্লাহ তাদেরকে তাওফীক দিবেন (অর্থাৎ, তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে জ্ঞানী, সম্যক অবহিত। -আল-কুরআন, সূরা নিসা ৪:৩৪-৩৫ প্রাসঙ্গিক আলোচনা শানে নুযূল ঃ আনসার সাহাবীদের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সা’দ বিন রবী রা.। তাঁর স্ত্রী হাবীবা বিনতে যায়দ রা. তাঁর অবাধ্য হলে তিনি স্বীয় স্ত্রীকে চড় মারেন। এতে স্ত্রীর বাবা তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বলেন ঃ আমি আমার আদরের মেয়েকে তার কাছে সোপর্দ করেছি আর সে তাকে চড় মেরেছে। নবীজী স. স্ত্রীকে উক্ত স্বামীর কাছ থেকে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বললেন। ঠিক এই সময় বিষয়টিতে বাধা দিয়ে স্বামীর কর্তৃত্বমূলক আয়াতখানা নাযিল হয়। তখন আল্লাহর নবী স. ইরশাদ করলেন ঃ আমরা একটি বিষয় চেয়েছিলাম আর আল্লাহ (আর) একটি বিষয় চেয়েছেন; আল্লাহ যেটা চেয়েছেন সেটাই উত্তম। -তাফসীরে কাশশাফ, পৃ. ১/২৯০; সূত্র: সফওয়াতুত্ তাফাসীর, পৃ. ১/২৫০ নিকৃষ্টতম স্বামী, নিকৃষ্টতম স্ত্রী ঃ হাদীছে পাকে ইরশাদ হয়েছে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বনিকৃষ্ট মানুষ হবে এমন পুরুষ বা মহিলা যারা পরস্পর সঙ্গত হয় অতঃপর একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয় প্রচার করে বেড়ায়। -আবুস্ সাঊদ-এর বরাতে সফওয়াতুত্ তাফাসীর, পৃ. ১/২৫১ আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা প্রতিটি জনসমষ্টির পারস্পরিক শৃংখলা এবং সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে কাউকে না কাউকে নেতা বানাতেই হবে। ইসলামী পরিবারও একটি জনসমষ্টি; আল-কুরআন এই জনসমষ্টির নেতৃত্ব অর্পণ করেছে স্বামীর হাতে। অতএব, স্বামী-ই স্ত্রীর ভরণপোষণ, প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিষ্টাচার শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করবেন। – স্বামীকে এই শ্রেষ্ঠত্ব এবং কর্তৃত্ব প্রদানের কারণ হচ্ছে দু’টি: ১) পুরুষকে আল্লাহ তাআলা বিবেক, চিন্তাশক্তি, মতামতপ্রদান, মানসিক ভারসাম্য এবং দৈহিক শক্তির দিক থেকে সৃষ্টিগতভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ২) দ্বিতীয়ত, পুরুষকেই বিশেষভাবে উপার্জন এবং ব্যয়বহনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। -সূরা নিসা ৪:৩৪ এসব কারণে নবুয়াত, সালাতের ইমামাত, রাষ্ট্রপরিচালনা, অভিভাবকত্ব, সাক্ষ্যদান, জিহাদের ময়দান প্রভৃতির জন্য পুরুষকেই খাস করা হয়েছে। -ইরশাদুল আক্লিস্ সালীম, পৃ. ১/৩৩৯; সূত্র: আবুস্ সাঊদ-এর বরাতে সফওয়াতুত্ তাফাসীর, পৃ. ১/২৫১ আল্লাহর এই বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত বিধান মেনে নিয়ে যেসব স্ত্রী আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত থাকবে এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতেও নিজের করণীয় ও স্বামীর অধিকার রক্ষা করবে, তারাই হবে নেক বিবী। -সূরা নিসা ৪:৩৪ তার মানে পাত্রী বাছাই এবং স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারাই অগ্রাধিকারযোগ্য যাদের ভেতরে ২টি বৈশিষ্ট্য আশা করা যায়- ১) স্বামীর আদেশ-নিষেধ এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছার আনুগত্য করা। ২) স্বামীর সন্তান, সম্পদ, সংসার এবং নিজের সতীত্বের ব্যাপারে রক্ষণশীলতা ও বিশ্বস্ততার পরিচয়দান। -তাফসীরে জালালাইন, সফওয়াতুত্ তাফাসীর অতএব, স্ত্রীরা মোট ২ ধরনের- ১) অনুগত এবং ২) অবাধ্য। -সূরা নিসা ৪:৩৪-৩৫ স্ত্রী অনুগত না হয়ে যদি তার অবাধ্যতার আশংকা করা হয়, তাহলে সেই স্ত্রীর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট স্বামীর ধারাবাহিক করণীয় ৩টি, অতঃপর আরও একটিসহ মোট চারটি। -সূরা নিসা ৪:৩৫ প্রথমত, স্ত্রীকে স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয় দেখিয়ে পথে আনার জন্য উপদেশ দিয়ে বোঝানো। -তাফসীরে জালালাইন এই উপদেশ নিজে না দিয়ে অন্য কোন মুরব্বী-আপনজনকেও ব্যবহার করা যায়, যদি এতে তুলনামূলক উত্তম ফল পাওয়ার আশা থাকে। যদি এ পথে সংশোধন না আসে, তাহলে সংশোধনের নিয়্যাতে তাকে পরিত্যাগ করতে হবে। এটি বিভিন্নভাবে হতে পারে; যেমন: ১) তার সাথে সহবাস ত্যাগ করা, ২) সহবাস বর্জনসহ একই বিছানায় আলাদা করে রাখা, স্ত্রীর দিকে পিঠ ফিরিয়ে অন্যদিকে মুখ করে শোয়া, ৩) এমনকি, প্রয়োজনে তার কাছে ঘেষা, তার সাথে হাস্যরস, কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়া। -বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ, হাদীছগ্রন্থ এবং ফিকহের কিতাব-এর আলোচনার সারমর্ম এতেও যদি স্ত্রী নিজেকে সংশোধন করে না নেয়, তাহলে তৃতীয় পন্থা হচ্ছে, তার শরীরে লঘুপ্রহার করা। তবে এই প্রহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে- ১) অঙ্গহানি করা যাবে না, ২) চেহারায় আঘাত করা যাবে না, যাতে সে সমাজের কাছে ছোট হয়ে যায়, ৩) স্পর্শকাতর কোন অংগে আঘাত করা যাবে না, ৪) তাকে ইনজিউরড বা আহত করা যাবে না; অর্থাৎ, আঘাতে বড় কোন দাগ পড়তে পারবে না। -বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ, হাদীছগ্রন্থ এবং ফিকহের কিতাব দ্রষ্টব্য তবে মারধর-এর এই বিষয়টি অবশ্য করণীয় নয়; বরং নবীদের সুন্নাত, উক্তি, কর্মপন্থা ও রুচি-বিরোধী। মারধরকারী স্বামীদের সম্বন্ধে আল্লাহর নবী স. ইরশাদ করেছেন- “ভাল লোক এমন করে না।” -তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন অবশেষে যদি সে নিজেকে সংশোধন করে স্বামীর অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্ট দেয়ার বাহানা করা যাবে না। যদি কোন স্বামী এরকম কোন অজুহাত তৈরি করে, তবে তার জেনে রাখা উচিত, এই স্ত্রীর যিনি মালিক ও পরম অভিভাবক, সেই আল্লাহ মহান ও পরাক্রমশালী। অর্থাৎ, স্ত্রীর ওপর স্বামী যতটা ক্ষমতাবান, সেই তুলনায় উভয়ের পরম প্রভু স্বামীর ওপর অনেক বেশি ক্ষমতাশালী, যিনি স্ত্রীর পক্ষ হয়ে স্বামীর কাছ থেকে দুনিয়া-আখিরাতে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য খুবই যথেষ্ট। -সূরা নিসা ৪:৩৫ (চলবে)

Comments

comments