কবিতা

তাসাউফপন্থী কবি আল মাহমুদ

By mumin

April 10, 2019

বাংলা ভাষার শক্তিমান কবি আল মাহমুদ। তাঁর মতো স্বঘোষিত তরিকত বা তাসাউফপন্থী সাহিত্যিক আধুনিক বাংলা সাহিত্য জগতে বিরল। তাঁর মনে প্রাণে ছিল ইসলাম ধর্ম। মোল্লাবাড়ির ছেলে আল মাহমুদের দাদা মীর আবদুল ওয়াহাব ছিলেন আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত। আর পিতা মীর আবদুর রবের কাছে কবির ধর্ম-কর্ম রপ্তের হাতেখড়ি। পিতা সম্পর্কে আল মাহমুদের মন্তব্য- ‘আমার আব্বা একজন দরবেশ মানুষ ছিলেন। আধ্যাত্মিক ধরনের মানুষ ছিলেন। নিয়মিত নামাজ রোজা করতেন। তাহাজ্জুদ গোজারি মানুষ ছিলেন। ছিলেন নাক বরাবর শরিয়তপন্থী।’ ঐতিহ্যগতভাবে কবির হৃদয়ে পীর-ফকিরী তথা তাসাউফের বীজ বপন ছিল। কবির বক্তব্য- ‘আধ্যাত্মিক মানুষ হওয়ার কারণে আব্বার কাছে ফকির দরবেশদের আসা যাওয়া ছিল। বড়ই অদ্ভুত ছিল তাদের আচার আচরণ। আমার শিশুমনে গভীর প্রভাব ফেলে তারা।’ কবি আল মাহমুদের ‘যেভাবে বেড়ে ওঠি’ পাঠ করলে আরও জানা যায় যে, কবির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তাঁর জন্মই হয়েছে পীর-দরবেশের দোয়ার ফলে। কেননা, তাঁর পিতা মাতার বিয়ের চৌদ্দ বছর অতিক্রম হলেও কোনো পুত্রসন্তান তারা পাননি। অবশেষে এক দরবেশের বাতানো ওসিলায় তিনি মাতৃগর্ভে আসেন। কবির মা রওশন আরা মীরও ছিলেন আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী এবং পীর-দরবেশগণের ভক্ত। কেননা আল মাহমুদ স্বীয় মায়ের মুখেই বার বার শুনেছেন তাকে নিয়ে পীর-দরবেশগণের পক্ষ থেকে অনেক অলৌকিক কথা। তাই কবি আল মাহমুদ প্রথম জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও নাস্তিক্যবাদকে গ্রহণ করেননি, ইসলাম ধর্ম থেকে ঈমান হারাননি। কবির বদ্ধমূল ধারণা, পারিবারিক ঐতিহ্যগত কারণে আধ্যাত্মিকতার প্রভাবে তিনি রক্ত-মাংসে ইসলাম ধর্মে নিমজ্জিত ছিলেন বলেই তাঁর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হয়েছে। আল মাহমুদ আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করে তালিম গ্রহণ করেন বায়তুশ শরফ দরবার শরীফের পীর শাহ সুফি আব্দুল জব্বারের কাছে। ফলশ্র“তিতে তাঁর সাহিত্য ভাণ্ডারে পড়েছে আধ্যাত্মিক জগতের ছাপ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে স্বতন্ত্র মহিমায় সমৃদ্ধ করেছেন। কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ রচনা করলেও তিনি বাংলাভাষার একজন প্রধান কবি হিসেবে সুধীমহলে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর মেধা ও প্রতিভার প্রখরদ্যুতি রাজনৈতিক মতানৈক্যের বিশিষ্টজনকেও বিমুগ্ধ করেছে। পীর-দরবেশ বা তরিকতপন্থী হিসেবে আল মাহমুদকে অভিহিত করার জন্য তাঁর রচিত ‘কবি শিল্পীদের মাতৃভূমি প্যারিস’ গ্রন্থের ১১ নং পৃষ্ঠার নিম্নোক্ত অংশটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন- ‘আমার শত্রু পক্ষ শুধু ইসলামের শত্রু নয়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বেরও শত্রু।… তারা বিজয়ী হলে এদেশে ইসলামী ঐতিহ্য সংস্কৃতি বহুকষ্টে গড়ে তোলা ইসলামের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে দেবে। বাঙালি মুসলমানদের, কৃষি পটভূমি থেকে উঠে আসা মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নির্বাপিত করবে। তারা ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মক্তব, মাদরাসা, খানকা, তরিকতপন্থী আত্মনিবেদিত দরবেশ, পীর মাশায়েখদের আস্তানাসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আমি একজন দেশের অন্যতম আধ্যাত্মিকবাদী কবি হিসেবে তা হতে দিতে পারি না।’… ‘আমি গত বিশ-পঁচিশ বছর যাবৎ ইসলামের পক্ষে ইসলামী ঐতিহ্য এবং পবিত্র কোরআনের নানা সূত্র কাহিনী অবলম্বন করে এতো কবিতা লিখেছি- যা আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন মহিমা দিয়েছে।… এখন বুঝছি আমার ওপর আমার পীর মুর্শিদ, আলেম ওলামা এবং অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দোয়া আছে। আর আছে কয়েক লক্ষ মুসলিম তরুণ তরুণীর দৃঢ় সমর্থন।’ (কবি শিল্পীদের মাতৃভূমি প্যারিস, পৃষ্ঠা- ১৭) শিকড়ের সাথে তথা ইসলামের রক্ষক-প্রচারক গোত্র তাসাউফবাদীদের সাথে কবির যে অদৃশ্য বন্ধন তা শেষ জীবনে আরও বিকশিত ও সুস্পষ্টতায় রূপ পায়। এতে তাঁর শত্রুপক্ষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও ধীরে ধীরে সটকে পড়েন কবি আল মাহমুদের নিকট থেকে। এতেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি তারা। কবিকে সর্বদিক দিয়ে সর্ব বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরম আঘাত দিতে থাকে। বাঁধা প্রদানে বঞ্চিত করে কবির ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে। একজন মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের একজন প্রধান কবি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। এই হিংসাত্মক বিভাজন ও নীতি বাঙ্গালী জাতিকে লজ্জিত করে। কবি আল মাহমুদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্প্রতি প্রকাশিত এক কলামে লিখেছেন- ‘কবি শামসুর রাহমান ও কবি আল মাহমুদের মধ্যে পার্থক্য, শামসুর রাহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কবি। এই চেতনার বিরোধীরা তাকে ঘাতক পাঠিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে। জাতি তার মাথায় প্রধান কবির শিরোপা পরিয়েছে। আল মাহমুদ প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কবি ছিলেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগরে চলে গেলেও দেশের স্বাধীনতার পর কী করে ধীরে ধীরে জামায়াত ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ভিড়ে গেলেন, তা আমার কাছে এক বিস্ময়। মানুষ হিসেবে তার এই বিচ্যুতির জন্য কবি হিসেবে তার যে বিরাট কাব্যকৃতি, তার যথোচিত সরকারি স্বীকৃতি হয়তো মৃত্যুর সময় পেলেন না। এটা পাওয়ার তার অধিকার ছিল। আল মাহমুদ অসাধারণ শক্তিশালী কবি ছিলেন, ‘সোনালী কাবিন’ তার প্রমাণ। আমি আজ তার কাব্যকৃতির মূল্যায়ন করতে কলম ধরিনি। সেটা তার অনুরাগী সমালোচকরা করবেন।…. আল মাহমুদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। একাত্তর সালেই কলকাতায় তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তখন তার কবিতা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে অগ্নিবর্ষী। এই কবিতাগুলোর কোনো সংকলন আমি দেখিনি। কলকাতায় পৌঁছার কিছুদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আধুনিক কবিকুলের কাছে আল মাহমুদ পরম সমাদৃত হন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাকে ‘বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কবি’ বলে কলকাতার পত্রপত্রিকায় মন্তব্য করেন। ষাটের দশকে বা সত্তরের দশকের গোড়ার দিকেও আল মাহমুদের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া রাজনীতির সঙ্গে কোনো সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সেই আল মাহমুদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কী করে উগ্র বাম জাসদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং তাদের দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক হন, তা আমার জানা ছিল না।…. ইত্যবসরে তিনি কেমন করে চরম বাম থেকে চরম ডানে মোড় নিয়েছেন, জামায়াতিদের খপ্পরে পড়েছেন তা আমার জানা ছিল না। তার কবিতায় কবি ফররুখ আহমদের কবিতার মতো ধর্মীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের প্রতি আকর্ষণ ও আনুগত্য পরবর্তীকালে ছাপ ফেলেছিল, যা কখনও কবিতার শিল্পরস ও আবেদনকে ক্ষুণœ করেনি। জামায়াতিরা তাকে তাদের কালচারাল ফ্রন্টের নেতা হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, তাতে কবি আল মাহমুদের কোনো লাভ হয়নি, বরং ক্ষতি হয়েছে। ইউরোপের ফ্যাসিবাদ এবং হিটলার-মুসোলিনির অভ্যুত্থানকালে বিখ্যাত কবি এজরা পাউন্ড এবং বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ন্যুট হামসুন ফ্যাসিবাদকে সমর্থনদানের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এজন্য তৎকালীন ইউরোপীয় সরকারগুলো তাদের যথেষ্ট হেনস্থা করেছে, কিন্তু বিরাট প্রতিভাশালী কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে তাদের অবদান অস্বীকার করেনি, তাদের মর্যাদা কেড়ে নেয়নি। বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত আল মাহমুদের শেষ বয়সের রাজনীতিকে নয়, তার অসাধারণ কাব্য প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং সম্মান জানানো। আল মাহমুদ আমার বয়সে ছোট। তবু তাকে আমার শেষ শ্রদ্ধা জানাই।’ (পঞ্চাশের অবশিষ্ট নক্ষত্রের একজন চলে গেলেন – তৃতীয় মত, দৈনিক যুগান্তর, ১৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৯) মানবীয় ভুলত্রুটির উর্ধ্বে কেউ নন। কবি আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তিনি প্রবাসী সরকারে ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক হন। তবে কবি রাজনীতিতে যোগ দেননি। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দেশ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের অভিযোগ কখনো শুনা যায়নি। কবির ভেতর লুকিয়ে থাকা ধার্মিকতা স্ফুলিঙ্গের মতো যখন স্পষ্ট হতে লাগলো এবং ইসলামবাদী মানুষেরা তাঁর অনুরাগী-ভক্ত হতে থাকলো তখন বিরুদ্ধবাদীরা এটাকে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করেছে। এটাকে একধরনের ভুলবোঝা বলা যায়। আল মাহমুদ তাদেরকে বিভিন্নভাবে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি রাজনীতি করেন না। তিনি স্পষ্ট বলেছেন- ‘আমি রাজনীতিক নই, আমি একজন কবি মাত্র।’ ইসলাম ধর্মের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী হওয়ার কারণে ইসলামী ঘরানার লোকরা কবির ভক্ত অনুরাগী হতেই পারে। তাই বলে তিনি তাদের রাজনৈতিক দলভুক্ত হয়ে যাননি। কিন্তু কে শুনে তাঁর কথা। এ সম্পর্কীয় আল মাহমুদের এক সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ হলো- ‘রাজু : ঠিক আছে। আপনার সম্পর্কে ভুল বা সঠিক যেটাই হোক না কেন তা হলো আপনি জামায়াতের সক্রিয় সদস্য কিনা? মাহমুদ : না। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না। রাজু : তাহলে জামায়াত আপনার পৃষ্ঠপোষক কেন? মাহমুদ : আমি দৈনিক সংগ্রামে চাকুরি করি। আপনি তো জানেন আমি সরকারী কর্মচারী হিসেবে রিটায়ার করেছি। লিখে-টিখে খেতে হয় আমাকে। সংগ্রামে লিখি, পালাবদলে লিখি এবং আরও কয়েকটা পত্রিকায় লিখে-টিখে খাই। এখন আপনি বলছেন যে তারা পৃষ্ঠপোষক কিনা। হতে পারে। আমি যেহেতু ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্মের কথা বলি; শুধু এখানেই নয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে। তারা আমাকে সমর্থন করে। রাজু : তারা ভাবে যে আপনি তাদের লোক। মাহমুদ : তারা হয়তো ভাবতে পারে। তাদের লোক বলে আমাকে ভাবে কিনা সেটা তো আমি আর তাদের মনের কথা জানি না। রাজু : তাদের মনের মানুষ ভাবে আপনাকে। মাহমুদ : আমাকে তারা ভালোবাসে। রাজু : ভালোবাসে? সাধারণত ভালোবাসা তখনই ঘটে-একটা লোককে আমরা ভালোবাসি কেন? কিংবা আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে কেন? ভালো লাগে এই কারণে যে মনে হয় যেন এটা আমার মনের কথা। তো ওরা যে আপনাকে ভালোবাসে, তার মানে ওদের মনের সঙ্গে আপনার মনঃগঠনের কোনো ঐক্য আছে বলেই কি ভালোবাসে? মাহমুদ : আমি আগেই বলেছি যে আই অ্যাম নট এ পলিটিশিয়ান। আমি যেহেতু ইসলামে বিশ্বাস করি ইসলামের কথা বলি। রাজু : ইসলামের নাকি ‘জামায়াতে ইসলামী’র? মাহমুদ : না, এই ধরনের প্রশ্ন করা সঠিক নয়। দলকে নিয়ে একজন কবিকে এই ধরনের প্রশ্ন করা কি সঠিক? আমি তো আগেই বলেছি আমি রাজনীতিক নই। রাজু : কিন্তু আপনাকে তো জামায়াতে ইসলামীর অনেক দলীয় কর্মকাণ্ডে দেখা গেছে। মাহমুদ : না, এটা আপনি ঠিক বলেন নি। রাজু : অনেক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে; আপনি সভাপতিত্ব করছেন বা গেস্ট হিসেবে আছেন। মাহমুদ : আমি হয়তো তার কোনো ছাত্র সংগঠনের কালচারাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছি। অনেক ছাত্র সংগঠনেই আমি করে থাকি। কিন্তু যেহেতু আমি কোনো একসময় বা কোনো একবার বা দুইবার বা তিনবার তাদের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি তাতে আমাকে এভাবে চিহ্নিত করা ঠিক না। রাজু : আপনি জামায়াতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা? মাহমুদ : জামায়াতের রাজনীতি কী, সেটা আমার কাছে প্রথম ব্যাখ্যা করতে হবে। তাহলে আমি বুঝতে পারবো আমি সমর্থক কিনা। জামায়াতে ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শরিয়ত প্রচলনের জন্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, আমি একজন কবি। কোথাও যদি তাদের সাথে আমার মিল হয় সেটা তো ভালো কথা আমি মনে করি, অসুবিধা কী? এবং তারা যদি সে-কারণে আমাকে খানিকটা পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে সেটা আমার লভ্য; এটাকে বলি না যে এটা দোষনীয়। যেহেতু তারা আদর্শগতভাবে আমার কবিতা বা আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে এটা দোষণীয় মনে করি না। এ কারণে আমাকে রাজনীতি করতে হবে বা রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে-এটা জরুরী না। রাজু : না, কিন্তু ওদের রাজনীতিতে আপনি বিশ্বাস করেন কিনা? মাহমুদ : আমি ইসলামে বিশ্বাস করি। (সূত্র- আর্টস বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম। ২৬ অক্টোবর ২০০৮) কবি আল মাহমুদ মূলত একজন তাসাউফপন্থী মানুষ। বিরুদ্ধবাদীরা কবির গায়ে ভুলবোঝে এমন এক রাজনৈতিক দলের লেবেল লাগিয়ে জোরপূর্বক তাদের দলভুক্ত করেছে, যে দলটি পীর-ফকিরী, তরিকত-তাসাউফকে স্বীকার-তো করেই না বরং এসব আদর্শের ঘোর বিরোধী। অথচ কবি আল মাহমুদ বিভিন্ন পীর দরবেশের দরবার শরীফে গিয়ে পীর দরবেশগণকে নিবেদিত করে যেরূপ উঁচু মার্গের কবিতা রচনা করেছেন তা কিংবদন্তি হয়ে থাকবে। মোদ্দাকথা, আল মাহমুদ কোন রাজনৈতিক দলভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন তাসাউফপন্থী কবি। ইলমে তাসাউফ বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান কবির সাহিত্যভাণ্ডারকে করেছে মহিমান্বিত।

Comments

comments