আসুন ভালো কাজে নিয়োজিত থাকি

ভাল কাজ মানুষকে ভালো করে তুলে। আর ভালো মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটা সুন্দর পরিবেশ, ভাল সমাজ। ভাল কাজ বিভিন্ন ধরণের। যা গুণে শেষ করার মত নয়। রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক জিনিস দূর করাও ভাল কাজ। অন্য ভাইকে দেখে মুচকি হাসিতে কথা বলাও ভাল কাজ। হাদীসের বাণী, ‘হজরত আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে কর না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার’ -(মুসলীম -১৪৪, তিরমিজি -২৩০৪, বায়হাকী -৩১৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ -১৮৯৪)। যে কোন মানুষকে পথ দেখানো ভাল কাজের শামিল। আর প্রত্যেক ভাল কাজের জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা পুরষ্কৃত করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী, ‘যে ব্যক্তি ভাল কাজ করবে তার জন্য রয়েছে তার দশগুণ সাওয়াব’ -(সুরা আল আন’আম ঃ ১৬০)। একজন মানুষ চাইলে দিনে হাজারো রকমের ভালো কাজ করতে পারে। সুপরামর্শ প্রদান, ঋণ প্রদান, অন্যের খুশিতে খুশি হওয়াও ভাল কাজ। আর প্রত্যেকটি ভাল কাজই সাদকা। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ভাল কাজই একটি সাদকাহ’ -(বোখারী -৬০২১, মুসলীম -৫২, আবু দাউদ -১৯৭০, তিরমিজি -২৩০৪, বায়হাকী -৯৫, মিশকাতুল মাসাবীহ -১৮৯৩)। আমরা সমাজের সকলেই যদি প্রত্যেকটি ভাল কাজে উদ্যোগী হই, চাই তা সামান্য হোক তখন আমাদের সমাজ ভাল না হয়ে পারে না। আমরা প্রত্যেকে ভাল হলে আমাদের চারপাশের সবাই ভাল হবে। হবে আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণ। এজন্য তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ, বড় থেকে বড় প্রত্যেকটি কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই সামাজিক জীব। এক্ষেত্রে আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। আজ কেউ আমার মুখাপেক্ষী হলে তাকে অসহযোগিতা বা ধমক দিয়ে দূর করতে নেই। হতে পারে কাল আমি তার মুখাপেক্ষী হতে পারি। তখন সেও আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে। আমি ভাল আচরণ ও সহযোগিতার মনমানসিকতা দেখালে সে কাল আমার প্রতি সহনশীল ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। যা সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। ছোট-বড় কাউকে অবহেলা করতে নেই। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট-বড়, ধনী-গরীব, সাদা-কলো, আরব-অনারব ভেদাভেদ না করে সবাইকে নিজের আপন করে নিতেন। কাউকে পর ভাবতেন না। সবার প্রতি তাঁর দয়া, ভালোবাসা, দান, উত্তম ব্যবহার ছিল অতুলনীয়। তাঁর আচার-আচরণ ব্যবহার দেখে তাঁর প্রতি ঈমান আনতে দ্বিধাবোধ করত না। আমাদের সমাজের লোকজন রাসুলের আদর্শে আদর্শিত হতে পারলে আজ আমরা এত মনুষত¦্যহীন ভাবে সমাজে বসবাস করতাম না। আমাদের সামজের প্রতি থাকালে ভাল কাজ করার মত এবং উপকার করার মত মানুষ খুব কমই দেখা যায়। যা অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক বটে।
আমরা যদি ভাল কাজ না করতে পারি, তাহলে মনের মধ্যে যেন ভাল কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করি। সদিচ্ছা থাকার কারণে মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সাওয়াব দান করবেন। হাদীসের বাণী, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, আমার বান্দা যখন কোন ভাল কাজের নিয়্যাত করে অথচ এখনো তা করেনি, তখন আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি তা কাজে পরিণত করে তবে দশ থেকে সাতশগুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখি’ -(মুসলীম -২০৪)। প্রতিটি ভাল কাজের ইচ্ছা পোষণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারি। তাই, ভাল কাজ না করতে পারলেও আমরা যাতে খারাপ বা ঘৃণিত কাজে জড়িত না হই। শুধু তাই নয়, ভাল কাজের পথ দেখানোর মাধ্যমে আমরা ভাল কাজ পালন কারীর সমপরিমাণ পূণ্য পেতে পারি। এ সকল মহৎ কাজ থেকে কোনভাবেই আমাদের দূরে থাকা সমীচিন নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আবু মাসউদ উক্ববাহ ইবনে আমর আল আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে’ -(মুসলীম -১৩৩, আবু দাউদ -৫১২৯, তিরমিজি -২৩০৪, আহমদ -১৭০৮৪, বায়হাকী -৭২৪৯, মিশকাতুল মাসাবীহ -২০৩)। আমরা কাউকে ভাল কাজে উৎসাহিত করে সাওয়াব অর্জন করতে পারি। পাশাপাশি আদর্শ সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি আমাদের চারপাশ।
আমরা কি ভাল কাজ করছি না খারাপ কাজ করছি তা কেমন করে বুঝব? হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলল, আমি ভাল কাজ করেছি, না মন্দ কাজ করেছি, তা কিভাবে জানতে পারব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি ভাল কাজ করেছ, তাহলে তুমি (সত্যিই) ভাল কাজ করেছ। আর যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছ, তাহলে তুমি সত্যিই মন্দ কাজ করেছ’।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদা সর্বদা ভাল কাজ করতেন। এরপরও আল্লাহ তা’আলার কাছে ভাল কাজ করার জন্য তিনি প্রার্থনা করতেন। আমাদেরও উচিৎ সর্বদা ভাল কাজ করার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করা। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেতেন, আমাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করো যারা ভাল কাজ করে খুশী হয় ও মন্দ কাজ করে ক্ষমা চায়’ -(ইবনে মাজাহ -৩৮২০, আহমদ -২৪৯৮০, মিশকাতুল মাসাবীহ -২৩৫৭)।
আমরাও আমাদের প্রিয় নবীর অনুসরণে ভাল কাজে উদ্ভুদ্ধ হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিতে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই সমাজ হবে আদর্শময়।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট।

Comments

comments

About

Check Also

চিনে মুসলমানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির ব্যবসা

সিরাজুল ইসলাম সা’দ নজিরবিহীন ভাবে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী উইঘুর মুসলমানদের ওপর কমিনিষ্ট পার্টির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *