রঙ্-বাহারি

কুকুরের দিকে যদি ‘কুলুখ’ ছুড়ে মারো, সে একে হাড্ডি মনে করে এগিয়ে আসবে। লোভী ব্যক্তি যদি দেখে সামনে দিয়ে মৃত লাশ বহন করে নেয়া হচ্ছে দ, সে ভাবে এর আড়ালে খাদ্যের খাঞ্চা রয়েছে। সে লোলুপ হয়ে ওঠে।
-শেখ সাদী রহ.
প্রশ্ন-উত্তরে মনীষা জীবনী:
(শেখ সাদী রহ.। ইসলামী সাহিত্যাঙ্গনে এক আলোকিত নাম। আরবী-ফারসি কবিতা দুনিয়ায় যাঁর আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা। নিম্নে প্রশ্নাকারে এ মনীষীর জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরছি)
১. কবি শেখ সাদী রহ. এর পূর্ণ নাম কি?
উ: শেখ আবু আব্দুল্লাহ মুসলেহউদ্দিন শরফুদ্দিন সাদী।
২. তিনি কবে জন্মগ্রহন করেন?
উ: ১১৭৫ সালে মোতাবেক ৫৭১ হিজরীতে।
৩. তাঁর জন্মস্থানেরর নাম কি?
উ: সিরাজ, ইরাক।
৪. তাঁর পিতার নাম কি?
উ: আব্দুল্লাহ সিরাজী।
৫. ‘সাদী’ উপাধীর নেপথ্যে?
উ: ফারেস প্রদেশের শাসনকর্তা তখন ছিলেন আতাবেক তোগলার সাদ ইবনে জুংগী। তাঁর পিতা সেই সুলতানের দরবারে কাজ করতেন। সুলতানের নামানুসারে শেখ সাদীর পিতা তাঁকে ‘সাদী’ বলে ডাকতেন। বাবার ডাকা সে নামেই সারা পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ তিনি শেখ ‘সাদী।
৬. ‘সিরাজি’ উপাধীর নেপথ্যে?
উ: সিরাজ নগরে জন্মগ্রহণের ফলে তাঁর নামের শেষে ‘সিরাজি’ উপাধীও সংযুক্ত হয়।
৭. তাঁর সমসাময়িক প্রসিদ্ধ দু’জন কবির নাম?
উ: জালালুদ্দিন রুমী (মৃ. ১২৭৩), ফখরুদ্দিন ইরাকি (মৃ. ১২৮৯)
৮. প্রাচ্যের শেক্সপিয়র উপাধী পান কে?
উ: শেখ সাদী।
৯. তিনি কতবছর ভ্রমণ করেন?-
উ: ৩০ বছর।
১০. পায়ে হেঁটে হজ্জ্ব করেন তিনি কতবার?
উ: চৌদ্দবার।
১১. শেখ সাদী বাগদাদের ‘ইতিহাস বিখ্যাত’ কোন মাদরাসার ছাত্র ছিলেন?
উ: মাদরাসায়ে নেযামিয়া
১২. নিযামুল মুলক ‘মাদরাসায়ে নিযামিয়া’ কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
উ: ৪৫৯ হিজরীতে।
১৩. বড়পীর রহ.র ইন্তেকালের কত বছর পর শেখ সাদী রহ. জন্মগ্রহণ করেন?
উ: ১০ বছর পর।
১৪. শেখ সাদী রহ. সাক্ষাত পান এমন একজন বুযুর্গ হলেন?
উ: জিলানীপুত্র শাহাবুদ্দিন ওমর সোহরাওয়ার্দী জিলানী।
১৫. শেখ সাদী ইন্তেকাল করেন কবে?
উ: ১২৯৪ সালে।
দর্শনীয় স্থান : ছাতকের লালপাহাড়
শিল্পনগরী ছাতক সিমেন্ট কারখানার জন্য বিখ্যাত। চুন এবং পেপার মিলও তার গর্বের ধন। ছাতক সিমেন্ট কারখানা দেশের প্রাচীনতম কারখানাগুলোর অন্যতম। ছাতক শহর ও তার উল্লেখযোগ্য শিল্পগুলোর মধ্যখানে প্রবাহিত সিলেটের সুরমা নদীর এক উপনদী। ছাতক শহর থেকে পাঁচ টাকা ভাড়ায় ফেরি পার হলেই যাওয়া যায় সিমেন্ট কোম্পানি, চূণ কারখানায়। ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে উত্তর-পশ্চিম হয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই পাওয়া যায় ‘লাল পাহাড়’। নামের মতো পাহাড়টিও সত্যিই দেখতে লাল। এই ‘লাল’কে অনেকটা সোনালী টাইপের মনে হয়। বালিগুলো হলদে-লালচে। তবে পাহাড় তেমন উঁচু না হলেও এর বিচিত্র রং এর ছটা দেখার মতো। পূর্বদিকে ঘাড় ফিরালেই এক পলকে দেখে নেয়া যায় ছাতক শহর। পাহাড়ের গা ঘেষে বসে ভালো কোনো ক্যামেরা দিয়ে কয়েকটা ফটো তুললে আপনি নিশ্চিত দেখতে পারবেন যেন বসে আছেন কোনো সোনার পাহাড়ে। সত্যিই বিস্ময়কর দৃশ্য।
ফিরতি পথে সড়ক দূর্ঘটনার ভয় থাকলে ট্রেন সুবিধা রয়েছেই। ছাতক থেকে সিলেট আসতে সি.এন.জি এবং ট্রেনের মধ্যে সময়গত পার্থক্য ১০/১৫ মিনিটের। পাহাড় দেখার পাশাপাশি ট্রেন ভ্রমণও করতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

কবি কালাম আজাদ’র দুটি কাব্যগ্রন্থ:
সিলেট সাহিত্যাঙ্গনের সর্বতোমুখ অভিভাবক, বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি কালাম আজাদ। সুরমা পাড়ের গর্ব কবি দিলওয়ার এর ইন্তেকালের পর সিলেট সাহিত্যাঙ্গনের অভাব পুরণ হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ-‘বায়বীয় শব্দমালা’ ও তুচ্ছ কথার গুচ্ছ’।
‘বায়বীয় শব্দমালা’ প্রকাশিত হয়েছে গত মার্চে অনুষ্ঠিত কেমুসাস বইমেলায়। প্রকাশ করেছে পায়রা প্রকাশন। সংগ্রহ করতে পারেন সিলেটের রংমহল টাওয়ারস্থ ‘পায়রা প্রকাশন’ থেকে। বাস্তবধর্মী কবিতা সমৃদ্ধ এই কাব্যটি। অনায়াসেই হৃদয় কাড়বে যে কোনো সাহিত্যপ্রেমীর। শব্দচয়ন, ছন্দগাঁথন ও ভাষার উৎকর্ষ সত্যিই অসাধারণ।
‘তুচ্ছ কথার গুচ্ছ’ প্রকাশিত হয়েছে গত পহেলা বৈশাখে। ‘ইয়্যুথ শপ’ কর্তৃক প্রকাশিত পকেট সাইজের এই কাব্যটি। বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয় এই কাব্যগ্রন্থে। ‘গুচ্ছ’ কবিতা বলেই সুখপাঠ্য এর কবিতাগুলো। ৭১ বছর বয়স্ক এক প্রাজ্ঞ কবির কাছ থেকে যা চাওয়ার তার সবটুকুই বিদ্যমান এই কাব্যগ্রন্থে। ৪/৬ ছয় লাইনের কবিতাগুলোতে রয়েছে জীবনগড়ার উপদেশও। শিশু-কিশোর, যুবা-বুড়ো সবার জন্য পাঠ উপযোগী। ছোটো ছোটো কবিতা হওয়ায় তা সহজেই মুখস্ত করে রাখা যাবে। এই কাব্যগ্রন্থ খানাও পাওয়া যাচ্ছে সিলেটের রংমহল টাওয়ারস্থ ‘ইয়্যুথ শপ’- এ।

শিক্ষণীয় গল্প:
বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল যুবক। দেখল এক ভালুককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে একটি দানব। দয়াপরবশ হয়ে যুবকটি দানবের সঙ্গে লড়ে রক্ষা করলো ভালুকটিকে। দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ভালুক যুবকটির ভক্ত হয়ে গেল। বন্ধুত্ব করলো যুবকের সাথে। নিয়ত করলো সারাজীবন সে যুবকের গোলাম হয়ে কাটাবে।
পথ চলতে চলতে এক পথিকের সাথে দেখা হলো যুবকের। পথিক জিজ্ঞাসা করলো, তোমার সাথে ঐ ভালুকটা কেনো? যুবক বলল, সে আমার বন্ধু। সে আমার মঙ্গল করবে। পথিক বুঝালো, দেখো যুবক পশু কোনোদিন মানুষের বন্ধু হতে পারে না। সে ভালো-মন্দ বুঝবে না। তোমার ক্ষতি করতে পারে। যুবক ভাবলো, পথিক তার সাথে হিংসা করছে। তাকে কুবুদ্ধি দিচ্ছে। তাই পথিকের কথায় কর্ণপাত না করে সে পথ চলতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত যুবক একটি গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ল। একটু দূরে বসে পাহারা দিচ্ছিল ভালুক। ভালুক দেখল কিছু মাছি যুবকটিকে ডিস্টার্ব করছে। কাছে এসে মাছি তাড়ানোর বহু চেষ্টা করলো ভালুক। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। পাশে একটি বড় পাথর দেখে ভালুক ভাবল, এই পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে মারবে মাছি গুলোকে। বহুকষ্টে পাথর তুলে মাছির উপর চুড়ে মারলো ভালুকটি। মাছি বসেছিল যুবকের নাকের উপর। পাথরটি পড়ল ঠিক সেখানেই। মাথা ফেটে খন্ড-বিখন্ড হয়ে মারা গেলো যুবকটি।
শিক্ষা: নির্বোধকে বন্ধু গ্রহণ করা প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।

কৌতুকঃ
একদিন নাসিরুদ্দিন হোজ্জা গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল। গাধাসহ নদী পার হলেন। কিন্তু নদীর পানিতে লবণ গলে একাকার। পণ্য হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত। গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে। এর পরের বারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে। গাধা যখন নদী পার হাে তখন তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল। গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।
‘হাহ্!’ হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, ‘ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না?

Comments

comments

About

Check Also

রঙ্-বাহারি

২০১৯ শেষে… বহু ঘটন-অঘটনে কাটলো ২০১৯ সাল। দীর্ঘ কয়েক দশক দশক পর জাতি দেখলো ‘ডাকসু’ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *