হোলি উৎসব : প্রতারণার রঙে আমরা রঙিন

এবারের হিন্দু ধর্মের একান্ত নিজস্ব ধর্মীয় উৎসব ‘হোলি’ খেলায় আমরা প্রতারণার রঙে রঙিন হলাম। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ ‘সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব’ এইসব প্রতারণার স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের হোলি খেলায় অবাধ মেলামেশা ও রঙ ছোড়াছুঁড়িতে মুসলিম মেয়েরাও রক্ষা পেলেন না, তাদেরকেও জোর করে রঙ মাখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হলো এটা সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু ও কিছু নামধারী মুসলমান যুবকদের নোংরা রঙ মাখামাখির অশ্লীল খেলায় আক্রান্ত হয়ে অনেক মুসলমান মেয়েরা অসহায় ভাবে কাঁদলেন, কিন্তু তাদের মন গলেনি, তারা ধর্মীয় উৎসবের নামে নোংরামি করলো, ইভটিজিং করলো, সাধারণ মেয়েদের রাস্তাঘাটে হয়রানি করলো, মেয়েদের সাথে অশ্লীলতা করলো, কিন্তু তাদের বিচার হলোনা, কেউ কিছু বললোনা, কারণ এগুলো একটি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে সংঘটিত হয়েছে, তাও আবার সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব! এগুলো নিয়ে কথা বললে আপনি হয়ে যাবেন চরমপন্থি। আপনি হয়ে যাবেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী।
আর হলুদ মিডিয়া “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” জাতীয় স্লোগান সামনে রেখে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকলো।
আর অন্যদিকে কিছু মুসলমান ছেলেমেয়েরা “সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব” প্রতারণার মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে নিজের নিজস্বতা ভুলে, হোলি খেলার নোংরা ইতিহাস ভুলে সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসবের নামে অবাধ মেলামেশার সুযোগকে কাজে লাগালো, গা ভাসিয়ে দিলো প্রতারণার রঙের সাগরে, তারা মনে হলো রাধিকার লজ্জায় লজ্জিত হয়ে রঙ মেখে লজ্জা ঢাকছে।

হিন্দু ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করবে এটা স্বাভাবিক, এটা তাদের অধিকার। সেখানে অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকুক, বা এর কোন নোংরা ইতিহাস থাকুক, অথবা রাধার লজ্জা ঢাকার রঙে তারা ডুব দিক সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি কারণ আমাদের উপর তাদের ধর্মীয় উৎসব কে সর্বজনীনতার দোহাই দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি কারণ আমাদের যুব সমাজকে সর্বজনীনতার নামে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে, আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি কারণ আমাদের অনেককে উৎসবের সর্বজনীনতা রক্ষায় জোর জবরদস্তি পর্যন্ত করা হচ্ছে। আমরা উদ্বিগ্ন কারণ বাম-রাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, নাস্তিক সহ তথাকথিত প্রগতিশীলরা ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মের ধর্মীয় উৎসবকে সর্বজনীন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এদেরকে মুসলমানদের কোন ধর্মীয় উৎসবকে সর্বজনীন হিসেবে প্রচার করতে দেখা যায় না, আসলে এরা কখনো সেটা করবেনা কারণ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলো নামাজের মতো ইবাদত ঘিরে। ইসলামের কোন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দ্বারা বামদের অবাধ মেলামেশা, নোংরামি, কদর্য নষ্টের উদ্দেশ্য সফল হয় না, তারা ইসলামের ধর্মীয় উৎসবে সর্বজনীনতার ঘ্রাণ খুঁজে না, বরং তারা আমাদের উৎসবকে কোণঠাসা করে রাখে, তখন তাদের ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগান কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
একটু পিছনে ফিরে তাকালেই দেখা যায়, একসময় হিন্দুরা মুসলমানদেরকে হেয় করতো, ঘৃণার চোখে দেখতো, এমনকি হিন্দু ময়রারা মুসলমানদের তাদের দোকানে পর্যন্ত ঢুকতে দিতো না, তারা মনে করতো মুসলমানরা তাদের দোকানে ঢুকলে দোকান অপবিত্র হয়ে যাবে, টাকা দিলে ময়রারা দোকান থেকে সন্দেশ ছুঁড়ে দিতো কিন্তু দোকানে ঢুকতে দিতোনা, সেই সময় তাদের সর্বজনীনতা কোথায় ছিলো? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়-হিন্দু ধর্মের নিম্নশ্রেণীর লোকেরা যখন উচ্চবর্ণের লোকদের জাত-ভেদের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্মে দলে দলে চলে আসছিল তখন তারা তাদের ধর্মে যুব সমাজকে ধরে রাখার জন্য সর্বজনীনতার ফাঁদ পাতায়, সব কিছুতে সর্বজনীনতা চলে আসে। ইসলামের সাথে মিল রেখে তারা জাত-ভেদ ভুলে যায়, বিভিন্ন একেশ্বরবাদী দল গঠিত হতে থাকে, বিভিন্ন নির্মম প্রথার বিলুপ্তি ঘটে, তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে আসে ব্যাপক পরিবর্তন, তখন ধর্মীয় উৎসবে সর্বজনীনতা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়, আর এই সর্বজনীনতার ফাদে পা দেয় মুসলমান যুবক যুবতীরা, তারা নিজের স্বকীয়তাকে ভুলে গা ভাসিয়ে দেয় রঙের খেলায়। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলছি প্রতারণার স্বীকার হওয়ার আগে একটু ভাবুন, একটি ধর্মের একান্ত ধর্মীয় উৎসব কখনো সর্বজনীন হতে পারে না, আর তা না হলে যদি সর্বজনীন হয় তবে আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কুরবানির ঈদ কেন সর্বজনীন নয়? কেন তারা কুরবানিতে বাধা দেয়?অনেক ধর্মনিরপেক্ষ দেশেও তো আযান নিষিদ্ধ। কিন্তু কেন? ধর্মীয় উৎসব সর্বজনীন হলে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিলোনা। তবে আমরা কি প্রতারণার রঙে রঙিন হচ্ছি না? আমরা কি নিজের ধর্মীয় সংস্কৃতিকে ভুলে, আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে ভুলে, ভুলের সাগরে গা ভাসিয়ে দিচ্ছিনা? আর বিশেষ করে এই হোলি উৎসবের ‘হোলির রঙ খেলা’ ঘিরে রয়েছে অশ্লীল ইতিহাস, এবং এই খেলায় যথেষ্ট অশ্লীলতার সুযোগ রয়েছে সুতরাং এই খেলায় মুসলামান এমনকি কোন বিবেকসম্পন্ন মানুষও অংশগ্রহণ করতে পারেনা।
পরিশেষে, একটি কথাই বলা যায়, আমাদের বোধোদয় হোক, আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।সত্য হোক সমাগত, মিথ্যা হোক বিতাড়িত।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *