মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পারিবারিক জীবন

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে বলেন-‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো’ (সুরা আল ইমরান : ১৫৮)। যার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয় যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের জন্য ছিলেন কোমল, ভদ্র, নম্র, শান্তশিষ্ট। উগ্র বা বদ মেজাজের নন। যিনি সার্বিকভাবে সবার জন্য উত্তম আদর্শের অধিকারী ছিলেন। পারিবারিকভাবেও তিনি ছিলেন সকলের প্রিয়, সর্বোৎকৃষ্ট, আদর্শবান। যার তুলনা হয় না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-‘তোমাদের মধ্যে সে সর্বোত্তম, যে তার পরিবার বর্গের নিকট সর্বোত্তম। আর আমি আমার পরিবার বর্গের নিকট সর্বোত্তম’ (তিরমিযী)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সর্বক্ষেত্রে আদর্শ বিদ্যমান। পারিবারিক জীবনও এর বহির্ভূত নয়। পারিবারিক সম্পর্ক ও আদর্শের ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার প্রধান। নিজের খাদেমের সাথে যে আচরণ করেছিলেন বর্তমান সময়ে তা নিজের পিতা-মাতার সাথেও এরকম আচরণ পাওয়া দুষ্কর। শুনে নেয়া যাক-হজরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, (যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম ছিলেন) তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হিসেবে দশ বছর খেদমত করেছি, তিনি কখনও আমার ক্ষেত্রে উফ: শব্দ ব্যবহার করেন নি। আমি কোন কাজ করলে কখনও বলেননি, কেন তুমি এটা করলে? অথবা আমি কোন কাজ করিনি তখনও তিনি বলেননি, কেন তুমি এটা করনি? আর তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে চরিত্রের দিক থেকে অধিক উত্তম।’ (বুখারী, মুসলীম)।
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারের সকলের প্রতি ছিলেন সদয়। উম্মাহাতুল মুমিনীন গণের সকলকে বেশি পছন্দ করতেন। তাদের প্রতি মহব্বতের কারণে হজরত আনাস রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-‘দুনিয়ার মধ্য হতে তিনটি জিনিসকে আমার নিকট প্রিয় করে দেয়া হয়েছে। নারী, সুগন্ধী এবং নামাজে চক্ষুর শীতলতা।’ (আহমদ)। যার কাছে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য প্রিয় থাকেন তিনিই তো পরিবারের সকলের প্রিয় হয়ে উঠেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন পরিবার পরিজনের প্রতি অধিক উদারশীল। আর তাইতো তিনি এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই মুমিনদের মধ্যে ঈমানের, দিক থেকে ঐ ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি সচ্চরিত্রবান এবং তার পরিবার পরিজনের প্রতি অধিক উদারশীল। (তিরমিযী)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহাতুল মুমিনীনগণের সাথে সদা হাসিসুলভ, প্রসন্ন মনোভাবের থাকতেন। তাদেরকে মাঝে মধ্যে সুড়সুড়ি দিতেন। তাদের প্রতি ব্যয় করতে প্রসারিত এবং উদার ছিলেন। এমনকি মাঝে মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। সেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমি তাঁর অগ্রবর্তী হয়ে যাই। পরবর্তীতে আরেকবার দৌড় প্রতিযোগিতায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান। অতঃপর তিনি বলেন, এবারের প্রতিযোগিতা ঐ প্রতিযোগিতার প্রতিশোধ।-(তিরমিযী)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীগণকে ঘরোয়া কাজে সাহায্য করতেন। হজরত আসওয়াদ (র.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনি সাধারণত ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আর নামাজের সময় হলে উঠে নামাজে চলে যেতেন। (বুখারী)।
রাসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহাতুল মুমিনীনগণের সাথে একসাথে গোসল করতেন। এক্ষেত্রে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করে বলেন, ‘আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতাম।’-(বুখারী)। শুধু তাই নয়, তাদের সাথে একত্রে পানাহার করতেন। চলাফেরা, বসবাস করতেন। রাসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথা আঁচড়ে দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ঋতুবর্তী অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথা আঁচড়ে দিয়েছি’। (বুখারী)
তিনিই তো মহানবী, তিনিই তো আদর্শ, তিনিই তো সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। যার আদর্শ সর্বক্ষেত্রে সবার জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। যার আদর্শ মানব জাতির নাজাতের একমাত্র উসীলা। মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই, যে পর্যায়ে মহানবী সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম আদর্শ প্রস্ফুটিত হয়নি। রাসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-আমি উত্তম আদর্শ পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’। পারিবারিক ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ছিল পরিপূর্ণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সুরা আহযাব : ২১)
মহান আল্লাহ যেন তাঁর হাবীবের উত্তম আদর্শ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তাওফীক আমাদেরকে প্রদান করেন। আমীন।

Comments

comments

About

Check Also

আল-কুরআনের আলোকে একনজরে মহানবি স.-এর পরিচয় ও অধিকার

মহানবি স.-এর গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়-০১আল-কুরআন অনুসারে তিনি ছিলেন একাধারেÑ১. নবি২. রাসুল৩. উম্মি বা অক্ষরজ্ঞান অর্জন না …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *