শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী

“আজ সব পথ ঘিরে অন্ধকার
থমকে যাওয়া আমি কোন পথে চলি,
আলো নিয়ে আসো-ওগো মোর প্রিয় রাহবার
পথ দেখাও হে-আমার ছাহেবে ফুলতলী” ।

ওলীয়ে কামিল, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত, ফখরে মিল্লাত, হাদিয়ে জামান, রঈসুল কুররা ওয়াল মুসসসিরিন, উস্তাদুল মুহাদ্দিসীন, সুলতানুল আরিফিন, শামসুল উলামা হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র জীবন আল্লাহর রাহে সর্বোতভাবে নিবেদিত ছিল, তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়ে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। এটা কোন অতিশয়োক্তি নয় বরং তার জীবন ও কর্মই এর বাস্তব প্রমাণ। তিনি ছিলেন তাসাউফের উচ্চমাপের একজন ওলী আল্লাহ। ইলমে হাদিসে প্রাজ্ঞ একজন মুহাদ্দিস, ইলমে কিরাতে দক্ষ কারীগণের কারী। মুসলিম বিশ্বের একজন আদর্শ দিক-দিশারী, সমাজের ইয়াতীম-অনাথ-অসহায় নিপীড়িত মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। ইলমে কিরাত, ইলমে হাদিস ও ইলমে তাসাউফ তথা আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে তার অবদান দেশ-বিদেশে স্বীকৃত। সমাজের অসহায়-দুঃস্থ মানুষের সেবায় তাঁর রয়েছে বহুবিধ খিদমত। তিনি সারাটি জীবন মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন বিভিন্নভাবে। এতো কিছুর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত লেখকও। ছাহেব কিবলাহ’র অনন্য সৃষ্টি ‘দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট’ ১৯৪০ সালের আরো আগে তিনি নিজ বাড়িতে ইলমে কিরাতের দরস চালু করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র শিক্ষকদের সুবিধার্তে ছুটির অবসরকালীন রামাদ্বান মাসকে কিরাত শিক্ষার জন্য বেছে নেন। রামাদ্বান মাস কুরআন নাযিলের মাস। তাই প্রতি বৎসর রামাদ্বান মাসে ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিজ খরচে বহন করতেন। যা আজও তার সুযোগ্য ছাহেবজাদা ও নাতীগণ অত্যন্ত নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন। দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সময়ের পরিক্রমায় এখন বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে প্রায় দেড় হাজারেরও অধিক শাখা রয়েছে, যা সরাসরি ছাহেব বাড়ি থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। এজন্য ছাহেব কিবলাহ’র জীবদ্দশায় তার ভূসম্পত্তির বিশাল অংশ (৩৩ একর জমি) দারুল কিরাত-এর নামে ওয়াকফ করে রেখে গেছেন। প্রায় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দারুল কিরাত-এর জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব এ পর্যন্ত দক্ষতা, আন্তরিকতা এবং অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অবৈতনিকভাবে পালন করে আসছেন তাঁর সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা বর্তমান গদিনিশীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী (বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী)। ছাহেব কিবলার জীবনী বা কর্ম এত বিশাল যে, যা আমার মতো লোকের পক্ষে লেখা সম্ভবপর নয় বা উচিত বলেও আমি মনে করিনা। কারণ যেখানে ছাহেব কিবলাহ’র জীবনের একেকটা দিক নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে, এমফিল এবং পিএইচডি হচ্ছে। সেখানে ছাহেব কিবলাহকে নিয়ে আমার মতো কেউ কিছু লেখা হাস্যকর বটে! মাসিক অভিযাত্রিক পত্রিকার সম্পাদক, নাতের রাজা খ্যাত বিশিষ্ট কবি, শ্রদ্ধেয় রফীকুল ইসলাম মুবীন ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় কিছু তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করলাম। এখন শুরু করবো কোথায় থেকে আর শেষ করবো কোথায় ভেবে পাচ্ছি না! এ তো এক বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রের কাছে কি খাল-বিল, নদী-নালার কোন দাম আছে? তাই প্রথমেই আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সুযোগ্য নাতী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ-এর সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী সম্পাদিত হাজারেরও বেশী পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্মারক’ এবং তারই লিখা ছাহেব কিবলাহ’র সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং পুরাতন কিছু পত্রিকায় একটু চোখ বুলালাম। ‘দৈনিক সিলেটের ডাক’ পত্রিকার একটি কলামে দেখলাম বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক, সাংবাদিক, এডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহিন লিখেছেন যে-আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের মুকুটহীন সম্রাট, হযরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম উত্তরসূরি হযরত শাহ কামালের বংশধর এবং ইসলামিক চিন্তা-চেতনার প্রচার ও প্রসারে ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান প্রাণপুরুষ শামসুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি এক জীবন্ত ইতিহাস, গৌরবের কিংবদন্তি। সত্য-ন্যায় এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, পাশাপাশি জ্ঞানের আলো বিতরণে নিরলস চেষ্টা করেছেন। দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল একটি ভালো জীবন বলতে জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত জীবনকেই বুঝিয়েছেন। শামসুল উলামা আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর সমগ্র জীবন প্রবাহে জ্ঞানের প্রচার-প্রসার এবং সত্য ও সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর চিন্তায় ও বিশ্বাসে অনিন্দ্য সুন্দর উপাসনা আর বলিষ্ঠ ও প্রখর ব্যক্তিত্বের গুণাবলী সবার মাঝে ছড়িয়ে আছে। তাঁর জীবনের বিভিন্ন গুণাবলি আমাদেরকে সঠিক পথে চলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তিনি ছিলেন একজন যুগশ্রেষ্ঠ খ্যাতিমান আলেম। তাঁর আপাদমস্তক ছিল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শে উদ্ভাসিত। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী প্রত্যেক নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত এবং মজলুম মানুষের পক্ষে সু-উচ্চ কন্ঠস্বর। তিনি ছিলেন জালিম ও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শত্রুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বিশেষ করে তাগুতের বিরুদ্ধে তাঁর সময়োপযোগী এবং সাহসী কন্ঠ ছিল ধারালো তরবারির চেয়েও কঠোর। তাইতো কবি বলেছেন-
তুমি উত্তাল মিছিলের প্রতিটি শ্লোগান,
তুমি আন্দোলনের অনুপ্রেরণা,
তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি রবে-
চির অক্ষত অম্লান
হে-শামসুল উলামা
তোমাকে হাজার সালাম ।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত এ মহান ব্যক্তির মাঝে ছিল প্রেম, প্রীতি, স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার মধুর সুর। অনাচার নির্যাতন এবং সকল বাতিলের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বিদ্রোহের প্রতীক। তিনি কখনো ছিলেন কোমল আবার কখনো কঠোর এক প্রাচীর। ইসলাম প্রচার তথা আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েম করতে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসৈনিক। ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চরিত্র, আচার-আচরণ এবং ব্যবহার ছিল নম্রতা ও ভদ্রতায় পরিপূর্ণ। জীবনের ঊষালগ্ন থেকে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। মুসলিম জাতির ক্রান্তিকালের উত্তরণের চিন্তা মাথায় নিয়ে যারা সামনে এগিয়ে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে দীপ্ত কঠিন শপথে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিযাত্রা অন্যতম। তিনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসকে সামনে রেখে বাতিলের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যেতেন সবসময়। কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস-সহ ধর্মীয় প্রত্যেক কিতাবের মর্মবাণী উপলব্ধি করে সফলতা ও কৃতিত্বের সাথে উপস্থাপন করে তিনি একজন আদর্শ শিক্ষাবিদের মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। ঈমান আক্বিদা রক্ষার আন্দোলনে তাকে পাওয়া যেত অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থাশীল, নিরহংকার, খোদাভীরু, শান্তিপ্রিয় রাসূল প্রেমিক। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের মধ্যকার শান্তি সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। ইসলামি চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সু-লেখক, সাহিত্যিক, মিষ্টভাষি সুবক্তা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম বীর সিপাহসালার শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অন্যতম চিন্তা-চেতনার হাতিয়ার তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আনোয়ারুস সালিকিন এবং নালায়ে কলন্দর’ গ্রন্থ দু’টি বরেণ্য কবিদের চেয়ে কোন ক্ষেত্রেই কম নয়! এছাড়া পবিত্র কালামে পাক সহিহ শুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের জন্য তাঁর অন্যতম একটি রচনা হল ‘আল কাউলুছ ছাদীদ’। যা বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবই-এর অন্তর্ভুক্ত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে আল্লামা ফুলতলী এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই তিনি প্রত্যেকের কল্যাণের জন্য নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করেছেন লতিফিয়া এতিমখানা, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসা, বৃদ্ধানিবাস প্রকল্প, ফ্রি ডিস্পেন্সারী, লতিফিয়া শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট, গণসংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ, ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পবিত্র কুরআনুল কারিম বিশুদ্ধভাবে পড়ার সাড়া জাগানো শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ‘দারুল ক্বিরাত মাজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট’। এছাড়াও তাঁর হাতে আরো অসংখ্য অগণিত প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে মুসলিম হৃদয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আশির দশকে জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুরে বাতিলপন্থীদের হাতে রক্তে-রঞ্জিত হয়েও ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ হতে একবিন্দু পরিমাণ বিচ্যুত হননি। আজও তাঁর রেখে যাওয়া চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার দুঃসাহস, নোংরা রাজনীতি কিংবা আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা অবশ্যই সফল হবে না। কেননা পবিত্র কোরআনের ভাষায় সত্য সমাগত আর মিথ্যা বিতাড়িত। কাজেই কোনো মিথ্যা ষড়যন্ত্র কোনো কালেই জয়ী হয়নি, আর কখনো হতে পারে না। তিনি ওয়াজ মাহফিল বা মুরিদানদের প্রতি যে নসিহতগুলো করতেন, অনেকেরই তা জানা আছে। আমার আমলে কিন্তু একটিও নেই! তবুও আংশিক কিছু কথার পুনরাবৃত্তি করছি। তিনি বলতেন- “আমি যখন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো, তখন আপনাদের দোয়া যেন হয় আমার নাজাতের উছিলা। মোনাজাতে হাত তুলেই বলতেন, ইয়া আরহামার রাহিমিন, আমার রুহানি-জিসমানী আওলাদদেরকে তোমার হাওলা করলাম। মরণের সময় তোমার হাবীবের চেহারায় আনওয়ার দেখে দেখে ঈমানের সহিত যেন আমাদের মৃত্যু হয়। তার ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থ ‘নালায়ে কলন্দর’-এ তিনি এভাবেই লিখেছেন-
মরণকালে দেখাও আমায়
রাসুল তোমার চাঁদবদন,
সিনায় রেখো হাত মোবারক
করো আমায় ভয় হরণ ।

তার সব ওয়াজের বড় ওয়াজ হচ্ছে যে, বড় কে সম্মান করবেন, ছোট কে দয়া করবেন। ছোট বলতে শুধু বয়সে ছোট নয়, লেখাপড়া বা কর্মক্ষেত্রেও হতে পারে এবং অসহায় বণী আদম, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি দয়া করো, তা যদি কোন প্রাণীও হয়ে থাকে। কারো ভাল দেখলে মন খুশি রাখবেন, কারো মন্দ করার ইচ্ছা মনে থাকলে দুনিয়া ও আখেরাত অন্ধকার হয়ে যাবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মত আদায় করবেন, শান্তি মনে নামাজ পড়লে জীবন শান্তিময় হবে। দৈনিক কমপক্ষে দুইশতবার দুরুদ শরীফ ও একশতবার ইস্তেগফার শরীফ পাঠ করবেন ।
ক্ষণস্থায়ী জীবনের ইতি ঘটে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের কাছে আজরাঈল যখন হাজির হন, তখন তারা পরম আনন্দে প্রিয়তম মাওলার দিকে পাড়ি জমান। ঠিক এভাবেই মুরশিদুনাল মুকাররম আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান ২০০৮ সালের ১৫ ই জানুয়ারি, মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রায় ২টা ৯ মিনিটের সময়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বরেণ্য এই ব্যক্তির ইন্তেকালে নেমে আসে শোকের ছায়া। চারদিকে শোকার্ত মানুষের ঢল। আপামর জনসাধারণ ছুটেছেন প্রিয় রাহবারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ফুলতলীর বালাই হাওরের প্রান্তরে। ১৬ জানুয়ারি লক্ষ লক্ষ জনতা তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সম্মান জানাতে জমায়েত হতে থাকেন ফুলতলী ছাহেব বাড়ি। ভক্তদের আহাজারি আর কান্নায় ভারি হয়ে উঠে ফুলতলী, বালাই হাওর তথা গোটা সিলেটের পরিবেশ। প্রিয় মুর্শিদের ইচ্ছা মোতাবেক তাকে নিজ বাড়ির মসজিদের উত্তর পাশে দাফন করা হয়। মহান এই ওলী এ পৃথিবীতে আর কখনো ফিরে আসবেন না। তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি জাগরুক থাকবে হাজার বছর ধরে। আমার স্বপ্নে কল্পনায় ও শ্রদ্ধায় চির অমর আল্লামা ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার আস্থার ও ভালোবাসার প্রতিক। এটি আজ আর কোনো ব্যক্তির নাম নয় একটি সংকল্পের, একটি আদর্শের, একটি সংগ্রামের, একটি লক্ষ্যের, একটি সোনালী ইতিহাসের নাম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানবতা আজ নির্বাক, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, চারদিকে আজ মুসলমানদের লাশ আর লাশ, বিশেষ করে বার্মা, ফিলিস্তিন সহ গোঠা মুসলিম জাতির হতাশা আর স্থবিরতার মাঝে আল্লাহর নেক ওলীর হুংকার কে স্মরণ করছি শ্রদ্ধানবচিত্তে। আজ যেন আমরা তাঁর রেখে যাওয়া রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করতে পারি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের দরবারে এই প্রার্থনা করছি ।
নন্দিত ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী কবি মুজাহিদুল ইসলাম বুলবুল ভাইয়ের একটি পঙক্তি দিয়ে আজকের মতো শেষ করছি-

প্রতিদিন কত কথা কত শত ব্যস্ততা
তোমাকে ভুলে থাকা যায় না,
কতজন আসে যায়, নীরবেই ঝরে যায়
কেউ তার খবর রাখেনা ।
আমার এই মনজুড়ে, এ কোন আসন গড়ে
রয়েছ হে- শামসুল উলামা
আজও কান পেতে শুনি ঐ বালাই হাওরের কান্না!

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *