রাসূল সা.-এর রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের মহাত্ম্য

যুগে যুগে আল্লাহ্ পাক মানুষের হেদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় যখন সমস্ত বিশ্ব পাপ পঙ্কিলতায় ছেয়ে গিয়েছিল, মানুষ তার আপন স্বকীয়তাবোধ হারিয়ে ফেলেছিল, যুগের সেই ক্রান্তিলগ্নে আল্লাহ্ পাক সকল নবীদের শ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। শাফিউল মুজনিবীন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে আল্লাহ্ পাক তাঁর মাধ্যমে এই জগৎ সংসার হেদায়াতের নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছিলেন। ইহ জগতের নিয়মানুযায়ী আল্লাহ্ পাক তাঁর বন্ধুকে মানুষের চক্ষুর অন্তরালে নিয়ে গেছেন। যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব চক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন তথাপি তিনি তাঁর আশিকদের নয়নযুগলে সর্বদা বিরাজমান।
যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রেমে নিমগ্ন আছেন তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফয়েজ, বরকত ও দিদার লাভে ধন্য হচ্ছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রকৃত আশিকগণ তাঁদের মনের অব্যক্ত জ্বালা মেটাতে বারবার ছুটেন পবিত্র রওদ্বা মোবারকের অভিমুখে। তাঁরা তাঁদের মনের সুপ্ত ব্যথাগুলো দরবারে রিসালাতে প্রেরণ করেন।
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের ফজিলত অত্যাধিক। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওদ্বা মোবারক যিয়ারত সুন্নত। শাহ্ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহ্লবী (রহ.) তাঁর ‘জাযবুল কুলুব’ গ্রন্থে এবং কাজী ইয়াজ (রহ.) তাঁর ‘শিফা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, প্রিয় নবীর রওদ্বা মোবারক যিয়ারত করা সুন্নত। এটা ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রসিদ্ধ চার ইমাম (রহ.) গণেরও একই মত। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের জন্য স্বয়ং রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন এবং গুণাহ মার্জনার উসিলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে-‘আর যদি তারা তাদের নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে তাহলে তারা যেন আপনার নিকট আসে এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূল যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে তারা আল্লাহ তায়ালাকে তওবা কবুলকারী দয়াবান হিসেবে পাবে।’ (সূরা নিসা)
প্রখ্যাত ফকীহ্ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) লিখেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র রওদ্বা যিয়ারত গুণাহ থেকে পরিত্রান এবং উচ্চ মর্যাদা লাভের অন্যতম উপায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাঁর রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের তাগিদ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে। ‘হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবর যিয়ারত করল তাঁর জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (দারে কুতনী)
অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মৃত্যুর পর যে আমার কবর যিয়ারত করল সে যেন আমি জীবিত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত করল।’ (বায়হাকী)
মিশকাত শরীফে এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমার যিয়ারত করবে, কিয়ামত দিবসে সে আমার প্রতিবেশীদের মধ্যে গণ্য হবে। শুধু তাই নয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করল এবং আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করল সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাত করল। (মিশকাত শরিফ)
আরও অনেক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের ফদ্বিলত বর্ণিত হয়েছে, কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় তা উল্লেখ না করাই শ্রেয় মনে করছি। উল্লেখিত হাদিসসমূহ দ্বারা বিবেকসম্পন্ন পাঠকগণ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র রওদ্বা মোবারক যিয়ারতের ফজিলত কতটুকু।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু মুনাফিক আমাদের সমাজে এবং সমস্ত বিশ্বে মুসলমান নাম নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্কলহ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ সুমিষ্ট বক্তব্য দ্বারা প্রচার করছে। তারা তাদের মতবাদ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে বেছে নিয়েছে। তাদের এ মতবাদগুলো আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের এ ভ্রান্ত মতবাদগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যা আজ থেকে অনেক পূর্বে ইবনে তাইমিয়্যা একটি সুস্পষ্ট হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সমস্ত বিশ্বের আশিক্বে রাসূলদের অন্তরে আঘাত করেছিল এবং সমস্ত বিশ্বের আশিকে রাসূলদের নিকট ঘৃণিত হয়েছিল। তার অনুসরণ করে আজ আহ্লে হাদিস নামধারী কতিপয় নরকিট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওদ্বা মোবারক যিয়ারতে বাঁধা প্রদান করে। এ কুচক্রী মহল যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তা স্বয়ং রাহ্মাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথার সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রকম দাজ্জালদের সম্পর্কে বলেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার যিয়ারত করল না সে আমার সাথে অন্যায় আচরণ করল। (শরহে লুবাবা)
সুতরাং আমাদের জানা উচিত যে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে অন্যায় আচরণ করা মানে তাঁর অসন্তুষ্টি লাভ করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি মানে আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি।
প্রিয় পাঠকগণ! আমাদের উচিত এসব সুমিষ্ট বক্তব্য শুনা থেকে বিরত থাকা এবং এসব শুনে বিভ্রান্ত না হওয়া। আল্লাহ্ পাক যেন আমাদেরকে এসব আহ্লে ফিত্না থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁর প্রিয় হাবিবের নৈকট্য লাভে ধন্য করেন। আমিন।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *