রহস্যময় ‘ওয়াদি আল-জ্বিন’

রহস্যেঘেরা এই পৃথিবী। রহস্যময় এই পৃথিবীতে অনেক বিস্ময়কর স্থান রয়েছে। এই বিস্ময়কর স্থানগুলি নিয়ে সুদীর্ঘ কাল থেকে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। কিন্তু এই স্থানগুলির রহস্য কেউ ভেদ করতে পারছে না। পৃথিবীর বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হলো ‘ওয়াদি আল-জ্বিন’।
বিস্ময়ঘেরা ওয়াদি আল-জ্বিন ঘুরে এসেছিলাম। মদিনা শরীফে গিয়ে আমরা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করি। গাড়িতে চড়ে আমরা চললাম ওয়াদি আল-জ্বিন অভিমুখে। পবিত্র উহুদ পাহাড়ের কোল ঘেষে বড় রাস্তা দিয়ে আমরা চলছি। চলতে চলতে হঠাৎ আমরা ঢুকে পড়লাম ওয়াদি আল-জ্বিন এলাকায়। প্রবেশ করেই এ বিস্ময়কর স্থানের বিস্ময় আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। কি ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর পাহাড়! গাড়ি চালকের বর্ণনা এবং আমাদের চাক্ষুস উপলব্ধি দুইটা মিলে এক অন্যরকম অনুভূতি জেগে উঠছিল। যে স্থানে রাস্তা শেষ সেই স্থানে গাড়ি থামালে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। গাড়ি থেকে নেমেই আমরা বিষ্ময়াভিভূত হয়ে যাই। কি বিস্ময়কর পাহাড়! মহান আল্লাহ কি নিপুণভাবে তা সৃষ্টি করেছেন। এই স্থানের কোন পাহাড় লাল কোনটা কালো আবার কোনটা সবুজ রঙ্গের।

ওয়াদি আল-জ্বিন এলাকায় বিস্ময়কর কাণ্ড ঘটে সেখান থেকে ফিরে আসার পথে। যাবার পথে শুধু অপেক্ষা করছিলাম কবে দেখব লোকমুখে শুনা সেই বিস্ময়কর কাণ্ড। আমাদের গাড়ির চালক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গিয়ার নিউট্রলে রেখে দিল। আস্তে আস্তে গাড়ির গতি আপনা আপনিই বাড়তে লাগল। গাড়ির গতি বাড়তে বাড়তে ১২০ কি. মি. হওয়ার পর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনে। এভাবে ১২-১৩ কি.মি রাস্তা চলার পর গাড়ির গতি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। এই স্থানে গাড়ি এমনিতেই চলে। শুধু তাই নয় পানির বোতল উপর দিক থেকে ঢালুর দিকে ছেড়ে দিলে পানির বোতল নিচ দিকে না নেমে উপর দিকে উড়তে থাকে। যাবার পথে ড্রাইভার এই স্থানের বর্ণনা দিচ্ছিল শুনে মনে প্রশ্ন হচ্ছিল এটা কি করে সম্ভব? নিজ চোখে অবাক করা কাণ্ড দেখে আমার সকল প্রশ্ন, সংকোচতা দূরীভূত হয়ে যায়।
এতসব পড়ার পর পাঠক মনে প্রশ্ন হতে পারে, রহস্যময় এই স্থান কোথায় অবস্থিত। তাহলে শুনুন, মসজিদে নববীর উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কি.মি. দূরে অবস্থিত এই ওয়াদি আল-জ্বিন। এর আসল নাম ‘ওয়াদি আল বায়দা’। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে ‘ওয়াদি আল-জ্বিন’। তাই স্থানটি ওয়াদি আল জ্বিন নামেই পরিচিত হয়ে গেছে।
সৌদি সরকার এই স্থান দিয়ে একটি সুদীর্ঘ রাস্তা করার পরিকল্পনা করে। এ লক্ষ্যে তারা হাজার হাজার শ্রমিক কাজে লাগায়। কাজ ৩০-৪০ কি. মি. হওয়ার পর দেখা গেল বিস্ময়কর কাহিনী। শ্রমিকরা কাজ করার যন্ত্রপাতি একস্থানে রেখে গেলে তা পরের দিন তারা এই স্থানে পেত না। তা বহুদূরে চলে যেত।
এমনকি তাদের পানীয় বোতল পর্যন্তও। মনে হত যেন তা কেউ ঠেলে মদিনার দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনা দেখে কর্মরত শ্রমিকরা ভয় পেয়ে যায়। ফলে সেই স্থানে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও রাস্তাটি ২০০ কি. মি. হওয়ার কথা ছিল। যে স্থানে কাজ বন্ধ হয়ে যায় সে স্থানে গোল চত্বরের মতো করে দিয়ে তা দিয়ে আবার মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই স্থানে যেতে চাইলে কোন সৌদি ট্যাক্সি চালক যাবে না।
এই স্থানকে নিয়ে অনেক রটনা আছে। সৌদিরা বলে; এই স্থানে নাকি একদল জ্বিন বসবাস করত, তাদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চুক্তি হয়েছিলো যে, তাদের এলাকায় কোন মানুষ যাবে না এবং গেলে তাদের ক্ষতি করবে না। সসম্মানে ফিরিয়ে দিবে। তাই জ্বিনেরা কোন গাড়ি গেলে তা ঠেলে মদিনার দিকে দিয়ে দেয়। এ রহস্যময় স্থান নিয়ে আরো মিথ্যা ও আজগুবি রটনা রয়েছে। যার কোন সত্যতা নেই। ওয়াদি আল-জ্বিন এলাকার রাস্তা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এর পরে আর কোন মানুষকে এই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সৌদি সরকারের কঠোর নীতির ফলে এই রহস্যঘেরা স্থান বিশ্ব মিডিয়ায় তেমন আসে নি।
প্রিয় পাঠক, যদি আপনার পবিত্র মদিনা শরীফ যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তাহলে এই বিস্ময়ঘেরা ও রহস্যময় স্থানটি না দেখে আসবেন না।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *