প্রেম-উদ্বেলিত

কেমন আবেগ-উচ্ছ্বাসের ¯্রােতে প্রবাহিত এ হৃদয়, কেমন গতিময় প্রেমে উদ্বেলিত হৃদয় তা কি তোমার অজানা! হে প্রিয়তম! ্এ মনে যে ভক্তি-ভালবাসা ও সখ্যতার চেতনা জাগ্রত আছে, তোমার প্রতি যে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মনোভাব তা কারো জন্য নেই এবং কেউ তা ছিন্ন করতে পারবে না। আমার হৃদয় পুলকিত হয়ে এ বিশ্বাসে সুদৃঢ় হয়েছে যে আমার অটুট বন্ধনে আসবে তুমি এ নিলয়ে। ধন্য করবে আমাকে।
জীবনের আগাগোড়া তোমার সাজে সাজানো আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। আমার হৃদয় বার বার উথলে উঠে, তোমার প্রেমে দোল খেতে খেতে নয়নের অশ্রুতে সিক্ত হয়ে অপূর্ব প্রেমে শুধু তোমাকে চায়। হে নবী-তোমাকে এমন করে ভালবাসি, এমন ভাবে ভক্তি- শ্রদ্ধার অর্ঘ নিবেদন করি যেন তোমাকে পেয়ে আমার হৃদয় নতুন সৌন্দর্যে অবগাহন করে সে ¯্রােতধরায় ভেসে যেতে পারি। আল্লাহর ইচ্ছায় সে আলোয় জীবন কাটাতে পারি।
হে নবী ! পূর্বেই ধারণা ছিলো, তোমার দিদার পাওয়া খুব সহজ নয়। বাস্তবে দেখা গেল এ যে আমার ধারণার চেয়েও কত কঠিন। কেননা তোমাকে যারা পেয়েছে , তাদের মনোভাব ও আবেগের উচ্ছ্বাস এত প্রবল, প্রেম ও ভালবাসা এত উচ্ছল, চলার পথে মেধা প্রয়োগের কুশলতা এত চমৎকার যে আমার মত দুর্বল মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এরপরে তাদের মত, চিন্তা-চেতনা, ভাব ও ভাবনা এবং ভক্তি-ভালবাসার নিজস্বতা তা আমার পক্ষে অক্ষত রাখাও বেশ কঠিন। অথচ তোমাকে পাওয়ার জন্য তা অতীব জরুরি। হে নবী! তবে এতটুকু বলতে পারি যে সাধ্যের সীমানায় আমার চেষ্টা অবিরাম চলছে। তোমাকে যদি কমপক্ষে একমুহূর্তের জন্যও পাই, আল্লাহ মেহেরবান যদি কবুল করেন তবেই এ প্রেম-উদ্বেলিত সার্থক হবে।
হে নবী! জীবনের প্রতিটা পদে পদে তোমার প্রেমের আবে কাউছার যেন ফোটায় ফোটায় ঝরাতে পারি। আবে কাউছারের সেই বিন্দুপতন এর যে স্বাদ ও সৌন্দর্য এবং যে সুর মাধুর্য এ জীবনে তা ধরে রাখার চেষ্টা করছি এবং এই ধরে রাখার কারণে পৃথিবীর কিছু অনিবার্য প্রয়োজন পরিবর্তন ও পরিমার্জনও করেছি। তোমাকে হৃদয়ঙ্গম করে পেতে আমার ভাব ও আবেগ অক্ষুন্ন রাখতে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। হে আল্লাহ, এ প্রেমের গতি প্রশংসনীয় করে দাও। নবীকে দেখার জন্য আমার যে স্বপ্ন তা বাস্তব করো। জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে সাধনা ও বিনিদ্র রজনীর নিমগ্নতার প্রয়োজন আমাকে সে তৌফিক দান করো।
হে নবী ! তোমার প্রেমে এ হৃদয়ে সুরভি মাখার কারণে যে অনবদ্য ফুল সৃষ্টি হয়েছে তা প্রেম-উদ্বেলিত। আমার শুধু একটি প্রশ্ন- যারা তোমার দেখা পেয়েছে, তোমার প্রেমের সুরভিত পুষ্প প্রস্ফুটিত করেছেন আমি কি পাব না সে দলে ঠাই! পাব কি! না কি অল্প সময়ের মধ্যেই পাব তোমার দেখা! তাই যেন হয়। আমার অক্ষম হৃদয়ের প্রার্থনা-শিঘ্রই দেখা দিয়ে পূরণ কর এ মনোবাসনা।
তোমার যে প্রতিভা তা অমৃতজলের সন্ধান, যে মহাগুণ তোমার তাতে অতি পাষান হৃদয় পেল নবপ্রাণের সঞ্চার এবং চরিত্রে এল এমন মহাবিপ্লব যে সময়ের মুহূর্ত ব্যবধানে রাহজান থেকে হয়ে গেল রাহবার। তোমাকে যে পেল সেই মুক্তির মহাসড়কে পথচলা শিখলো। আমিও চাই মুক্তির মহাসড়কে পথ চলতে, ও পেতে চাই তোমার স্বর্গীয় জ্যোতির্ময়তার হাতছানি। বিভ্রান্ত মানুষ যে ভাবে পথের দিশা পেলো ও এ বিশ্ব বাগানে যারা গোলাপের খুশবু ছড়ালো আমাকে সে দলভুক্ত কর।

তোমার চেয়ে মহাবিস্ময় নেই এ মহাবিশ্বে। তুমি যে চিররহস্যঘেরা। এ জনম সার্থক করো, এ জীবনের স্বপ্ন সফল করো। এ মনে তোমার প্রেমের কাতরতা নিয়ে, এ নয়নে দর্শন-পিপাসা নিয়ে, বিপুল বিষ্ময় নিয়ে চেয়ে আছি মদিনার পানে।
তোমার পদধূলিই আমাকে দিবে নবজীবনের নবসাজ। শান্ত হবে উতালা হৃদয়। তবে যে প্রেম উদ্বেলিত তা নিয়ে বিরহ বঞ্চনা আর কি করে সইবো বলো! তোমার দিদার পেতে তো এ জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। তবুও শান্ত-শীতল কর এ প্রেমতপ্ত হৃদয়, দেখাও তোমার মোহিনী রূপ নুরানীদীপ্তি। যতদিনে দেখা না পাই তোমার, কী আছে আমার মাথা উচিয়ে গর্ব করার। দিনে দিনে কত বিপদ যায় আমার উপর দিয়ে- আঘাতে আঘাতে কত রক্ত ঝরলো এ বুক থেকে সবই সহ্য করেছি ধৈর্য্য ধরেছি কিন্তু তোমাকে না পাওয়ার ধৈর্য্য আমার সহ্য হয় না। তোমার প্রেমে উদ্বেলিত এ হৃদয়, স্বপ্নের বাতায়ন পথে হলেও দেখা দাও আমায়। আর সহ্য হয় না, বঞ্চনার দহনে আর দগ্ধ করো না। তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি শোন। তোমার জন্য সাজানো এ হৃদয় সিংহাসনে একবার এসো।
তুমি এমন সূর্য যার স্বর্ণ-কিরণে পৃথিবী এখনো ঝলমল করে। তুমি এমন চাঁদ যার স্নিগ্ধ জোছনায় পৃথিবী স্নাত হলো। তুমি আমেনার এমন সুপুত্র, তোমার আগমন পুলকে আরশ-জমিন পুলকিত হলো। সৃষ্টির প্রতিটা কণা হলো উদ্ভাসিত। তুমি সৃষ্টিকর্তার সর্বোত্তম সৃষ্টিকুশলতার প্রকাশ। তোমার কারণেই পৃথিবীর প্রতিটা কনা নবীণ করে নব উজ্জ্বলতা লাভ করলো, স্নিগ্ধতার নতুন ছোয়া পেল। কিন্তু মুছে দিলে না এ বিষন্ন বিবর্ন মুখমন্ডলে তোমাকে না পাওয়ার দুঃখের ছায়া।
লোকজগতে তোমার তুলনা হয় না। নুরানী সত্তার নুর তুমি, দেহ ও মৃত্তিকার ধাঁধায় হারিয়ে ফেলতে চাই না। এ প্রেম-উদ্বেলিত এমন যে,বিবেকবুদ্ধি ও সংযমসাধনার রক্ষাপ্রাচীর একেবারে ভেঙে যায়। উর্ধ্বজাগতিক উদ্ভাসে আত্মসমহিত হতে চাই। তোমার জ্যোতির্ময় রূপ অবোলোকন করতে চাই। হে মানবকুলের মধ্যমণি মানবতার সঞ্জীবনী, মুগ্ধ হয়ে অভিভূত হয়ে তোমাকে খুঁজি। তোমার স্বান্তনা কে দিবে আমাকে! কী সান্ত¦নাই বা দেবে। কে মনোরঞ্জন করবে আমার! কি ভাবেই বা করবে! তোমার মত আছে কোন আদমের বেটা! আমার আঁধার হৃদয়ে আশার রোশনি জ্বেলেছি এখন তুমি কি নতুন সজীবতা দিবে না! অপরিসীম আনন্দ কি দিবে না!
তুমি এমন পবিত্র, এতই নির্মোহ, যোগ্যতা ও সততার এমন মহামিলন তা তুমি ব্যতিত অসম্ভব। যা জানি, যা শ্রবন করি তা সুখ্যাতি যোগ্যতার অতি সামান্য। তোমাকে না দেখেও এ হৃদয়ে শ্রদ্ধার সবুজ বৃক্ষটি ছায়া-বিস্তার করে যাচ্ছে, প্রেমের প্রজ্বলিত প্রদীপটি ¯িœগ্ধ আলো বিস্তার করে যাচ্ছে তোমার ঐশী নুর অবলোকন করার আশায়। এ হৃদয়রাজ্যে শুধু তোমার নুরানী সৌন্দর্য পাওয়ার বাসনা,অন্তরাত্মার পবিত্র প্রেম তোমার জন্য।
হে নবী! তুমি কি বুঝবে না আমার মনের কথা! বুঝবে না আমার মনের ব্যাথা! দেখাবে না নুরাণী চেহারা যার সৌন্দর্যসুষমার নেই কোন তুলনা। এভাবে অদ্ভুত দোদুল্যমানতায় কত দিন যাবে! মনের সুপ্ত পবিত্র বাসনা কবে পূর্ণ হবে!
মহামহিম তোমার পবিত্র হাতে যে চিরন্তন আলোক প্রদীপ জ্বালিয়েছেন, যুগে যুগে দিকভ্রান্ত মানব যে আলোতে সত্যের পথ খুঁজে পেয়েছেন, সেই পথ শক্ত করে ধরতে মানবদরদী হৃদয় অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারি মহামানবকে চাই। এ হৃদয়ে তোমার জন্য যে ভালবাসা আন্তরিকতা তা সবকিছুর উপরে। তবুও যেন রহস্যের কুল কিনারা পাই না। সমাধান দাও, সমাধান দাও! এ আত্মার জিজ্ঞাসা, চিন্তার আকুলতা এবং হৃদয়ের উত্তাপ ও সান্নিধের ব্যকুলতা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়, আরো গভীর হয়। কাক্সিক্ষত শুভচাওয়া কি অত্যাসন্ন! সেই পরম মুহূর্ত কি খুব কাছাকাছি! রহস্যের পর্দা কি উম্মেচিত হবে খুব তাড়াতাড়ি! শুভ আলিঙ্গনের আর কত দেরি!
তুমি তো স্রষ্টার প্রেমে পূর্ণস্নাত হয়েছ এবং সৃষ্টির কল্যাণে পূর্ণ নিবেদিত হয়েছ। আপন-পর সকলকে ভলোবাসতে পেরেছো। কিন্তু আমার লালটে কি নেই তোমাকে পাওয়ার এ মহাসৌভাগ্য। এ মুখে আশা-নিরাশার ছায়া, হৃদয়ে উৎকন্ঠার জোয়ার ভাটা। হে আমেনার দুলাল, হে প্রিয়তম মুহাম্মদ! তুমি কি পার কাউকে নিরাশ করতে! কারো মনের আশা অপূর্র্ণ রাখতে! প্রেম-উদ্বেলিত হৃদয় নিংড়ানো ভক্তি ভালোবাসার সাড়া দাও। দেখবে আনন্দোচ্ছাসে এ হৃদয় আকাশে রংধনুর যে অপরূপ রূপ ধারণ করব তা কীভাবে বোঝাবো তোমাকে! হৃদয়ের সবটুকু দরদ ও আকুতি ঢেলে দিচ্ছি তোমার চরণে। মুহূর্তকালের জন্য হলেও এসো এ জীবনে। কবুল কর আহাজারি ও ফরিয়াদ, দীর্ঘদিনের কান্না ও অশ্রুপাত। অনুভবের জগতে তন্ময় হয়ে রয়েছি আমি। বিশ্ব বিধাতার জয়গানের চিরন্তন ব্যবস্থা তোমার কারণে, তোমার প্রচেষ্টায় এ দ্বীন পরিপূর্ণ, সুপরিণত ও সুবিকশিত। তাই তোমার দিদার পেলে এ হৃদয়ে শান্তি ও প্রশান্তির যে অপূর্বভাব ও অনুভূতি বিদ্যমান থাকবে তা তোমার অজানা নয়।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *