প্রতিশ্রুতি

মানুষ সঙ্গপ্রিয়। ভালোবাসে সঙ্গকে, সঙ্গিকে। সে ভালোবাসা গভীর থেকে হয় গভীরতর। আর ভালোবাসার গভীরতা থেকে সঙ্গি বা প্রিয় মানুষগুলোর সান্নিধ্যের লোভ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তার মনের কোণে আকুতি ভেসে ওঠে-ইশ! যদি প্রিয় মানুষগুলোকে সব জায়গায় সব সময় পাওয়া যেত। কারণ জীবনের কঠিন সময়ে কাছের মানুষগুলোর আশ্বাস হৃদয়ে স্বস্তি ও উদ্দীপনা এনে দেয়। তাড়িয়ে দেয় হতাশা। এনে দেয় সব জড়তা কাটিয়ে সামনে পা রাখার অবাধ উচ্ছ্বাস। এরা কথাও দেয় কাছে থাকার,কাছে রাখার। তবু মাঝে মাঝে প্রতিজ্ঞাটা নড়বড় করে। তার সঙ্গপ্রিয় মন নিরাশার ধূলোয় ধূলিত হয়। আলোর ফাঁকে ফাঁকে আঁধারের লুকোচুরি খেলায় নিজেকে কাঁচের খেলনা হিসেবে আবিষ্কার করে। হিসেব কষে আলো ছায়ার মধ্যকার প্রতিজ্ঞার। মনে মনে খুঁজতে থাকে এমন কোনো বন্ধুকে যে কখনও তাকে দেওয়া কথার বরখেলাপ করবে না। ঋণখেলাপ করবে না তার বিশ্বস্ততা। সিনখেলাপ করবে না তার আহাজারির। বেখেয়ালেও ছাড়বে না তাকে। এখানেও না, ওখানেও না। কিন্তু কোথা পাওয়া যায় সেই বন্ধুকে? দিন কাটে সেটা ভাবতে ভাবতে আর তাকে খুঁজতে খুঁজতে। বেলা যতো বাড়ে বিষণœতা ততো তাকে ঘিরে ধরে। নেমে আসে রাত। মাঝরাত, শেষ রাত। অশান্ত মনের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। আনমনেই কাঁপা ঠোঁটে বেজে ওঠে বুকছোঁয়া শব্দ আল্লাহ। আর তখনই কেটে যায় ঘোর।
আল্লাহ আল্লাহ শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে চারপাশে। কে যেন বলতে থাকে আল্লাহই তো উত্তম সঙ্গি। এখানে, সেখানে, সবখানেই যার আধিপত্য বিরাজমান। কতই না সৌভাগ্য তার যে আল্লাহকে সঙ্গিরূপে বেছে নিয়েছে। কথাগুলো শুনতে শুনতে সে উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে দাঁড়াতে পা রাখে সামনে। উদ্দেশ্য তার উত্তমরূপে অজু করা। অজুশেষে আলনায় রাখা জায়নামাজ হাতে নেয়। সযতনে জায়নামাজটা বিছিয়েই সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর নিকট। সপে দেয় সঙ্গখোঁজা অশান্ত মনকে।
বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসতে চাই। তোমার ছায়া চাই, মায়া চাই, করুণা চাই। হে আল্লাহ! আমার জন্ম, মৃত্যু, আমার গোলামি সব তোমার জন্য। আমি তোমারই সঙ্গ চাই। আমার ইহকাল পরকালের সব কাজে তোমারই অভিভাবকত্ব চাই।’ তার সেই আহাজারির সাথে দুচোখ বেয়ে টপটপ করে অশ্র“ ঝরে। কিন্তু সেই অশ্র“ আর আহাজারির ছিটাফোঁটাও বৃথা যায় না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তখন তাঁকে (আল্লাহকে) ডাকার আহবান করেন।
নেমে আসেন শেষ আসমানে আর বলতে থাকেন কে আছো আমাকে ডাকার মতো? আমাকে ডাকো, আমি তোমার ডাক শুনবো। তোমার ডাকে সাড়া দেবো। তোমাকে আমার সঙ্গ দেবো। সেই প্রতিশ্র“তির কি ব্যতিক্রম হয়!

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *