নির্বাচিত ‘ফিকহুস্ সুনান’১ মূল আরবি গ্রন্থকার: মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী বারকাতী রহ.২

দুই ঈদে রাত জেগে ইবাদাত (মূল কিতাব, পৃ. ১০৬)৩
১. হজরত উবাদা বিন সামিত রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ স. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় (সালাতে/ইবাদাতে) রাত জাগরণ করবে, তার অন্তঃকরণ সেই দিনও মারা যাবে না যেদিন অন্তরসমূহ মরে যাবে।
(১) হাদিসখানা ইমাম তবারানি (আল-মু’জাম আল-আওসাত) হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন; সূত্র: আল-মাজমা’, ২/১৯৮ (হা. ৩২৩১)
(২) (পাদটীকা থেকে) মাজমা’ গ্রন্থকার বলেন, এই হাদিসের সনদে ওমর বিন হারুন বলখি রয়েছেন; তার ওপর দুর্বলতার প্রাধান্য ছিল। তবে ইবনুল মাহদি এবং অন্যান্যরা তাঁর প্রশংসা করেছেন। আমি (ফিকহুস সুনান গ্রন্থকার) বলি, ইমাম বুখারি রহ. বলেছেন, তিনি ‘মুকারিবুল হাদিস’। কুতায়বা তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। Ñদ্রষ্টব্য: আত-তাহজিব, ৭/৫০১
২. ইবনে মাজাহ এই মর্মে হজরত আবু উমামা রা. থেকে একখানা মারফু হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(১) ইবনে মাজাহ, পৃ. ১২৮
(২) (পাদটীকা থেকে) হাদিসখানার বাকি সমস্ত রাবিই মুসলিম শরিফেরও রাবি; অসুবিধা হচ্ছে হাদিসখানা ‘মুদাল্লাস’ অথচ ‘আনআনা’ পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে (যা সাধারণত মুত্তাসিল সনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ‘মুদাল্লাস’-এর ক্ষেত্রে নয় Ñঅনুবাদক)।

ঈদের নামাজের বিবরণ ও তাকবির-সংখ্যা (মূল কিতাব, পৃ. ১২৩-১২৪)৩
১. হজরত আলকামা ও আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, ইবনে মাসউদ রা. বসা অবস্থায় ছিলেন, তাঁর কাছে ছিলেন হুজায়ফা ও আবু মূসা আশআরী রা., এমতাবস্থায় হজরত সাইদ বিন আস রা. তাঁদের কাছে ঈদের নামাজের তাকবির (সংখ্যা) সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। হুজায়ফা রা. বললেন, আবু মুসা আশআরি রা.-কে জিজ্ঞেস করুন; আশআরী বললেন, বরং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে জিজ্ঞেস করুন; কারণ, তিনি হচ্ছেন আমাদের মধ্যে অগ্রবর্তী এবং সর্বাধিক বিজ্ঞ ব্যক্তি। সাইদ তখন ইবনে মাসউদ রা.-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন ঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪ তাকবির৩ দিয়ে কিরাআত পড়তেন অতঃপর তাকবির দিয়ে রুকু করতেন। পরে ২য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, কিরাআতের পরে আবার ৪ তাকবির৪ দিতেন।
(১) হাদিসখানা হাফেজে হাদিস মুহাদ্দিস আবদুর রাজ্জাক (হা. ৫৬৮৭) সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন। Ñসূত্র: আসারুস সুনান, ২/১০৬ (হা. ৯৯৬)
(২) (পাদটীকা থেকে) হাদিসখানা উল্লেখ করার পরে ইবনু হাজম বলেন, এই হাদিসের সনদ চূড়ান্ত পর্যায়ের সহিহ। Ñআল-মুহাল্লা, ৫/৮৩ (হা. ৫৪৩)
(৩) পাদটীকা থেকে) হাফেজ ইবনু হাজার আল-আসকালানি, ইবনে মাসউদ রা. থেকে এই হাদিস তাঁর দিরায়া গ্রন্থে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন। Ñআদ-দিরায়াহ, পৃ. ১৩৫ (হা. ২৮৬)
২. ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ মৃতের নামাজের৫ মতই ঈদের নামাজে (প্রতি রাকাতে) তাকবির ৪টি।৬
(১) হাদিসখানা তবারানি (হা. ৯৫২২) জাইয়্যেদ সনদে বর্ণনা করেছেন।Ñসূত্র: মাজমাউজ জাওয়াইদ, ২/২০৫ (হা. ৩২৮২)
৩. ইমাম তহাভি রহ. জনৈক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন (ঈদের) নামাজ পড়লেন, তিনি (প্রতি রাকাতে) ৪ তাকবির৭ করে দিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ঃ ভুলে যেও না, ঈদের নামাজের তাকবির (সংখ্যা) জানাজার নামাজের তাকবিরের মতই। একথা বলে তিনি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুড়ো আঙুল গুটিয়ে বাকি আঙুলগুলো (চার আঙুল) দিয়ে ইশারা করলেন।৮
(১) হাদিসখানা ইমাম তহাভি রহ. হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। Ñশারহু মাআনিয়িল আছার, ২/৪০০ (হা. ৬৭৫৩)
(২) (পাদটীকা থেকে) এই হাদিসের সনদে ইয়াহইয়া বিন উসমান নামের একজন রাবি রয়েছেন, যিনি সত্যবাদী, অবশ্য তাঁকে কতক মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন। তাকরিবে নববিতে এমনটিই রয়েছে। তবে, ইবনে আবদুর রহমানের মুতাবাআত৯ দিয়ে তাঁর রিওয়ায়াতের দুর্বলতা বিদূরিত হয়ে গেছে।
৪. এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং মুগিরা বিন শু’বা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস পাওয়া যায়, যা হাফেজ আবদুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনা করেছেন।
(১) হাফেজে হাদিস মুহাদ্দিস আবদুর রাজ্জাক রহ.-এর মতে (হা. ৫৬৮৯)-এর সনদ সহিহ। Ñসূত্র: আদ-দিরায়াহ, পৃ. ১৩৫ (হা. ২৮৬)
৫. এ বিষয়ে আবু দাউদ-এ আবু মুসা আশআরি রা. এবং হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকেও মারফু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(১) আবু দাউদের মতে হাদিসের সনদ হাসান। Ñসূত্র: আবু দাউদ, ১/৪৪৭ (হা. ১১৫৩)
(২) (পাদটীকা থেকে) এই হাদিসের সনদে আবদুর রহমান বিন সাবিত বিন সাওবান নামের একজন বিতর্কিত রাবি রয়েছেন। Ñদ্রষ্টব্য: আত-তা’লিকুল হাসান, ২/১০৫
৬. হজরত নাফে’ বলেন, আমি আবু হুরায়রা রা.-এর সাথে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর-এর নামাজে উপস্থিত ছিলাম, তিনি ১ম রাকাতে কিরাআতের আগে ০৭ বার তাকবির দিলেন এবং শেষ রাকাতে কিরাআতের আগে ০৫ বার তাকবির১০ দিলেন।
(১) হাদিসখানা ইমাম মালেক রহ. বর্ণনা করেছেন। Ñমুআত্তা, পৃ. ৬৩ (হা. ৬১৯)১১
(২) ইমাম মালেক থেকে ইমাম মুহাম্মাদ রহ. তাঁর মুআত্তা গ্রন্থেও হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন আর বলেছেন ঃ দুই ঈদের তাকবির সংখ্যার ব্যাপারে লোকেরা ইখতিলাফ করেছে; এসবের মধ্যে তুমি যেটিই গ্রহণ করবে, ভাল। আমাদের মতে সর্বোত্তম হচ্ছে ইবনে মাসউদের রেওয়ায়াত (যা ইতিপূর্বে বিগত হয়েছে)।১২ Ñমুআত্তায়ে মুহাম্মাদ, পৃ. ১০৯ (হা. ২৩৭)
(৩) (গ্রন্থকারের পাদটীকা অনুসারে প্রতি রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির বিষয়ক সেই) পূর্ণ হাদিসটি এ রকমÑ
৭. হজরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাকবিরগুলোয় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন।১৩
(১) ইমাম বায়হাকি রহ. (হা. ৬১৮৯) হাসান সনদে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন। Ñসূত্র: আত-তালখিসুল হাবির, পৃ. ১৪৫ (হা. ৬৯২)
(২) (পাদটীকা থেকে) তালখিস গ্রন্থকার (ইবনু হাজার) বলেন, এই হাদিসের সনদে ইবনু লাহিআহ আছেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় হাসান স্তরে গণ্য। যাঁর বিবরণ ইতিপূর্বে বিগত হয়েছে।

নারীদের অলংকারের১৭ জাকাত (মূল কিতাব, পৃ. ১৫৫-১৫৬)১৭
১. হজরত আমর বিন শুআইব তাঁর পিতা শুআইব থেকে এবং তাঁর পিতা শুআইব তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, একজন মহিলা তার সাথে তার একটি মেয়েকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আসলেন, মেয়েটির হাতে ছিল স্বর্ণের দু’টি মোটা চুড়ি। রাসুলুল্লাহ স. মহিলাকে বললেন, তুমি কি এই স্বর্ণালংকারের জাকাত দাও? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ স. বললেন, এই চুড়ি দু’টির বদলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা তোমাকে দু’টি আগুনের চুড়ি পরিয়ে দিবেন এমনটি কি তোমাকে আনন্দ দেয়? রাবি বলেন, এ কথা শুনে মহিলা তার মেয়ের হাত থেকে চুড়িদু’টি খুলে ফেলল এবং নবিজি স.-এর কাছে রেখে দিয়ে বলল, এদু’টো আল্লাহ আর তাঁর রাসুলের জন্য।
(১) আবু দাউদ, ৪/২ (হা. ১৫৬৩)
(২) নাসায়ি, ১/৩৪৩ (হা. ২৪৭৯)
(৩) মুহাদ্দিস ইবনুল কাত্তান হাদিসখানাকে সহিহ বলেছেন। Ñসূত্র: নাসবুর রায়াহ, ১/৪০৩
(৪) ইমাম মুনজিরি বলেছেন, হাদিসের সনদ প্রমাণে পেশ করার যোগ্য।
২. ইমাম হাকেম এ বিষয়ে হজরত আয়েশা রা. থেকে একই মর্মের মারফু হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(১) মুসতাদরাকে হাকেম, ১/৩৮৯
(২) হাদিসখানাকে ইমাম হাকেম সহিহ বলে মত দিয়েছেন।

পাদটিকা
৭. মাকতাবাতুল হাসান সংস্করণ, পৃ. ২৮৩; হাদিস বা ভুক্তি নং ৭৯৫।
৮. মাকতাবাতুল হাসান সংস্করণ, পৃ. ৩১৪-৩১৫; হাদিস/ভুক্তি নং ৯০২-৯০৬।
৯. তাকবিরে তাহরিমা হিসেবে ১ তাকবির এবং অতিরিক্ত ৩ তাকবির।
১০. অতিরিক্ত ৩ তাকবির এবং রুকুতে যাওয়ার মূল তাকবির।
১১. জানাজার নামাজের মত।
১২. অর্থাৎ প্রতি রাকাতে অতিরিক্ত ৩টি তাকবির; ১ম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমাসহ ৪টি আর ২য় রাকাতে রুকুর তাকবিরসহ ৪টি।
১৩. ১ম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা বাদে ৩ তাকবির আর ২য় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার তাকবির বাদে অতিরিক্ত ৩ তাকবির; মোট ৬টি তাকবির অতিরিক্ত হিসেবে দিতে হয়।
১৪. অর্থাৎ, ১ম রাকআতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৪টি আর ২য় রাকাতে রুকুর তাকবিরসহ ৪টি।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *