জ্ঞানের কথা মুমিনের হারানো সম্পদ

(পূর্বে প্রকাশের পর)
মুহিবুন্নবী হযরত মাও: মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন ফখরে জাহান (র.) যিনি ছিলেন যুগের কুতুব, তৎকালিন যুগের শাহান শাহে বেলাযে়ত, শীর্ষস্থানীয় বুযুর্গ এবং অসংখ্য কারামতের অপূর্ব ভাণ্ডার। হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওর্দী (র.) এর সূত্র ধরে তাঁর বংশ পরম্পরা আমীরুল মু’মিনীন সাযি়্যদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর (রা.) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
মুহিব¡ন্নবী হযরত মাও: মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন ফখরে জাহান (র.) এর বাল্যবেলার একটি ঘটনা। তখন তাঁর বয়স সাত বৎসর। তিনি তাঁর মুহতারাম আব্বাজানের বিশ্রামে পা টিপে দিচ্ছিলেন। সে সময় তিনি ধ্যানমগ্ন হযে় পড়লেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সাযি়্যদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে পাঁচটি শস্যদানা হাতে অর্পণ করলেন। চেতনা ফিরে পেযে় তিনি সরাসরি প্রদত্ত দানাগুলো নিজ হাতে দেখতে পেলেন।
এদিকে তাঁর শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ আব্বাজানের নিদ্রা ভঙ্গ হল। আব্বাজান- ছেলের হাত ধরে বললেন. ঐ দানাগুলোতে আমারও ভাগ রযে়ছে। তিনি এবং তাঁর সম্মানিত আব্বাজান ঐ দানাগুলো খেযে় সাবাড় করলেন। সুবহানাল্লাহ।
মুহিবুন্নবী হযরত মাও: মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন ফখরে জাহান (র.) এর মূল্যবান বাণীসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হল।
১. মহান স্রষ্টার স্মরণই হচ্ছে সবচেযে় মূল্যবান। এদ্ব্যতিত সবকিছু অন্তর থেকে দূর করা অপরিহার্য।
২. দুনিয়া হচ্ছে পরকালের শস্যক্ষেত স্বরূপ।
৩. বাইয়াত গ্রহণকারীদের উচিত সময়কে গুরুত্ব দেয়া।
৪. বাইয়াত গ্রহণকারীদের উচিত উদর স্ফীত করে না খাওয়া।
৫. মানুষ হচ্ছে, সৃষ্টির সেরা জীব। যাদের মাধ্যমে খোদায়ী সমস্ত মর্তবা ও সৃষ্টি প্রকাশ পায়। (দিল্লীর বাইশ খাজা)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়্যিদুনা হযরত আলী (রা.) কে উদ্দেশ্য করে ফরমালেন, হে আলী (রা.)।
১. চার হাজার দীনার ছদকা দিযে় ঘুমাবেন।
২. এক খতম কুরআন শরীফ পডে় ঘুমাবেন।
৩. জান্নাতের মূল্য দিযে় ঘুমাবেন।
৪. উভযে়র বিবাদ মিটিযে় ঘুমাবেন।
৫. এক হজ্জ করে ঘুমাবেন।
সায়্যিদুনা হযরত আলী (রা.) ফরমালেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ কাজ আমার জন্য বড়ই কঠিন। আমি কী করে এ কাজ করতে পারি?
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন- হে আলী (রা.)-
১. চারবার সুরা ফাতেহা পডে় ঘুমালে চার হাজার দীনারের ছদকা তোমার আমলনামায় লিখা হবে।
২. তিনবার কুলহুয়াল্লাহু পডে় ঘুমালে এক খতম কুরআন শরীফ পড়ার ছওয়াব পাবে।
৩. তিনবার দুরূদ শরীফ পড়ে ঘুমালে জান্নাতের মূল্য আদায় হযে় যাবে।
৪. দশবার ইসতেগফার শরীফ পড়ে ঘুমালে উভযে়র বিবাদ মিটানোর ছওয়াব পাবে।
৫. চারবার কালিমাযে় তামজীদ পড়ে ঘুমালে এক হজ্জের ছওয়াব পাবে।
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিযি়্যল আযীম।
এরপর সাযি়্যদুনা হযরত আলী (রা.) ফরমালেন- ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি প্রত্যক দিন এ আমল করে ঘুমাব।
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজিরগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে মুহাজিরগণ! পাঁচ প্রকারের দোষ ও অসৎ স্বভাব হতে আমি সর্বদা তোমাদের জন্যে মহান আল্লাহপাকের দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকি।
১. যে জাতির মধ্যে অশ্লীলতা, ব্যভিচার ব্যাপক হযে় যায়, তাদের উপর মহান আল্লাহপাকের পক্ষ হতে গযব নাযিল হয় এবং তারা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, যা ইতিপূর্বে তাদের পূর্ব পুরুষেরা কখনও দেখেনি।
২. ব্যবসা-বাণিজ্যে, কাজ-কারবারে মাপে কম দেওয়া। যারা এ ধরণের গর্হিত কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, তাদের মধ্যে দরিদ্রতা, অভাব-অনটন মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তাদের শাসনকর্তা হবে যালেম। যারা যুলুম-অত্যাচার প্রতিনিয়ত তাদের উপর চালাতে থাকবে।
৩. যারা যাকাত প্রদান করেনা, মহান আল্লাহপাক এমন জাতিকে রহমতের বৃষ্টি থেকে বঞ্চিত করে দেন। দুনিয়াতে চতুষ্পদ জন্তু না থাকলে অনাবৃষ্টিতে তাদের মারাত্মক অবস্থা হত।
৪. মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। যারা এ অভ্যাসে অভ্যস্থ হয় মহান আল্লাহপাক তাদের উপর শত্র“কে প্রবল করে দেন। তাদের ধন-সম্পদ শত্র“রা দখল করে নেয়।
৫. মহান আল্লাহপাকের আইন-কানুন পরিত্যাগ করা। যে জাতি মহান আল্লাহপাকের আইন-কানুন-পরিত্যাগ করে মানুষের তৈরী আইন অনুযায়ী বিচারকার্য চালায় তাদের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্ধ কখনও দূর হয় না। তারা সর্বদা আত্মকলহে লিপ্ত হয়। (মুকাশাফাতুল কুলুব)
যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত পাঁচটি আমল সর্বদা করবে সে পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
১. সর্বদা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এর যিকির করলে।
২. বিপদগ্রস্ত হলে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এবং ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিযি়্যল আযীম’ পাঠ করলে।
৩. যখন কোন নিয়ামত প্রাপ্ত হবে তখন, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ পড়লে।
৪. প্রত্যেক কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়লে।
৫. কোন গুনাহ করে ফেললে, ‘আসতাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লী জানবিও ওয়া আতুবি ইলাইহি’ পড়বে। (পুণ্যের দিশারী)
তাক্বওয়ার ঘাঁটি পাঁচটি এগুলো অতিক্রম করতে পারলে পরহেযগারীর চরমসীমায় উপনীত হওয়া সম্ভব।
১. স্ফূর্তি ত্যাগ করে কর্কশতা এখতিয়ার করা।
২. আরাম পরিত্যাগ করে পরিশ্রম করা।
৩. ইজ্জত ত্যাগ করে অপমানিত হওয়া।
৪. অনর্থক কথা ত্যাগ করে নিরবতা অবলম্বন করা।
৫. জীবন ত্যাগ করে মরণ স্বীকার করা। (পুণ্যের দিশারী) বেলায়ত বা অলী হওয়ার পরিচয় হচ্ছে-
১. মহান আল্লাহপাকের ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা।
২. মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করা।
৩. বিপদগ্রস্ত হলে সবর করা।
৪. ক্রোধকে হজম করা।
৫. ধৈর্যধারণ করা। পুণ্যের দিশারী)
একজন কামিল মুর্শিদের কিরূপ বৈশিষ্ট্যাবলী, শর্তাবলী থাকতে হবে, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে-
১. পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফের অভিজ্ঞ হওয়া। আল্লামা শেখ সাদী (র.) বলেন, ‘মুর্খ ব্যক্তি মহান আল্লাহপাকের পরিচয় করতে পারে না।’
২. আদালত ও তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া, সৎচরিত্রে চরিত্রবান হওয়া, সর্বদা কবীরা গুনাহ হতে পরহেয থাকা। ছগীরা গুনাহ কথায় ও কাজে বারংবার না করা।
৩. দুনিয়া হতে অমনোযোগী এবং আখেরাতের প্রতি মনোযোগী হওয়া। যে সমস্ত যিকির আযকার ছহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা ছাবিত হয়েছে এগুলোর উপর পুরোপুরি পাবন্দ হওয়া।
৪. ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দকাজের নিষেধ করা।
৫. দীর্ঘকাল পীরে কামিলের মহব্বতে বা সাহচর্যে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক নূর, তুষ্টি, বরকত এবং আদব ক্বায়দা ইত্যাদি গুণাবলী শিক্ষা করা। (কৌলুল জামীল)
বেরাদরানে ইসলাম! পীরে কামিল তথা প্রকৃত অলীআল্লাহ কারা তাঁদের সঠিক পরিচয় কী? এ ব্যাপারে কিঞ্চিত আলোচনা করা জরুরী মনে করছি। কারণ অনেক লোক অহেতুক বেলায়তের দাবী করেন। অথচ তারা না নামায পডে়, না রোযা রাখে। আমাদের জানা উচিৎ যে, যতক্ষণ বিবেক এবং হুঁশ থাকবে ততক্ষণ আহকামে শরীয়ত মাফ নেই।
অলী আল্লাহগণের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে সায়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ফরমান ঐ ব্যক্তি অলী যাকে দেখলে মহান আল্লাহপাকের স্মরণ আসে। (খাযেন)
অনেক অলীআল্লাহ এমন রয়েছেন, তাঁরা যে জায়গায় অবস্থান করেন, তথাকার জীবজন্তু এমনকি ঘরবাডি় পর্যন্ত যিকিকারী হয়ে যায়।
সায়্যিদুনা হযরত আলী (রা.) ফরমান- অলী ঐ ব্যক্তি যাঁর চেহারা শুষ্ক, চক্ষু ভিজা এবং ঠোটভূখা। (রুহুল বয়ান)
চলবে

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *