ঐতিহ্য চেতনাহীন মুসলিম জাতি

আজকের এ ক্রান্তিলগ্নে আমরা বড়ই অসহায়। আমাদেরকে পথ দেখাবার মতো কোন নেতা নেই। আমরা ইসলামি রেনেসার অনেক কবি, প্রাবন্ধিক পেয়েছি কিন্তু আমরা ইসলামি রেঁনেসা ঘটাবার জন্য কোন নেতা পাইনি। কেন আমরা পাইনি তা অবশ্য সবার অনুমেয়। তার মূল কারণ হলো আমরা চেতনাহীন হয়ে পড়েছি। মানুষের শরীর থেকে নখ অথবা চুল কাটলে যেমন মানুষের কোন অনুভূতি হয় না ঠিক তেমনি আমরা আজ আমাদের মুসলিম ভাইদের শোনিতাক্ত দেহ দেখে কোন কষ্ট অনুভব করি না। যাই একটু কষ্ট অনুভব করি আমাদের অন্তরে। এর প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো আমাদের কোন সাহস নেই। কারণ আমরা ভয় করি। ওরা সবাই ঐক্যজোট হয়েছে মুসলিম নিধনে। ওরা মার খাচ্ছে খাক! আমাদের উপর যেন তাদের মতো অত্যাচার শুরু না হয়। আমাদের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির পথে যেন এটা কোন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়। এটাই হলো আমাদের মূলনীতি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো সকল কাফের যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঐক্যজোট হতে পারে তাহলে আমরা কেন সকল মুসলমান এক হতে পারি না। আমাদের তো তাদের চেয়ে অনেক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আমাদের নেতা ছিলেন বিশ্বের সকল নবীদের নেতা, বিশ্বের সকল সমর কুশলীরাও আমাদের নবীর দ্বারে কাছেও আসতে পারবে না। তিনি হলেন সাইয়্যিদুল ক্বাউনাইন নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের নেতা ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত উসমান (রা.) ও শেরে খোদা হযরত আলী (রা.)। আমাদের সিপাহসালার ছিলেন আল্লাহর তরবারি খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.)। এর চেয়ে গৌরবের আর কি হতে পারে। আমাদের অকুরণীয় ব্যক্তিত্বের কোন অভাব নেই তবে আমাদের অভাব হচ্ছে চেতনার। আমরা আবারো সেই বদরের চেতনা জাগিয়ে তুলতে পারছি না। কত আত্মনির্ভরশীলতা ছিল মুসলমানদের তা একটু বদর যুদ্ধের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি। সে যুদ্ধে মুসলমানরা ছিলেন বলতে গেলে প্রায় নিরস্ত্র। কারো কারো তরবারিও ছিল না কিন্তু মনে জোর ছিল আমাদের মধ্যে একজন আদর্শ নেতা রয়েছেন। আমরা তাঁর নেতৃত্বেই বিজয় ছিনিয়ে আনব। বদর যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করতে লাগলেন। তাঁর এ কান্নার কারণ ছিল আনসারদের সাথে একটি চুক্তি হয়েছিল যে, মদিনা বহিঃশত্র“ দ্বারা আক্রান্ত হলে আনসারদের উপর যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। আর যদি মদিনার বাইরে যুদ্ধ হয় তাহলে তাদের উপর যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কান্নার কারণ সাহাবী মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রা.) বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা মুসা (আ.)-এর উম্মত নই। যুদ্ধ শুরু হলে আপনি দেখবেন আমরা ডানে, বামে, সামনে, পিছনে কিভাবে যুদ্ধ করি। সাহাবির এ কথায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে গেল। উল্লেখ্য বদরের যুদ্ধে মুহাজিরদের তুলনায় আনসার সাহাবী বেশি ছিলেন। (বুখারী শরীফ)
এই ছিল আমাদের পূর্বসূরীদের ঈমানী চেতনা। শত্র“র সংখ্যাধিক্যকে তাঁরা কখনো পাত্তা দেননি। তার নজীর আমরা অনেক রণাঙ্গনে পেয়েছি। মুসলমানরা আজ রিক্ত। একদিন মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করার মতো সাহস কেউ দেখাতে পারে নি। মুসলমানরা সমস্ত বিশ্বে তাদের গৌরবগাঁথা বীরত্ব স্থাপন করেছিলেন। মুসলমানদের হাতে স্পেন বিজিত হয়েছিল। অথচ আজ স্পেনে মুসলমানদের কোন নাম-নিশানা নেই। মুফতি তকী উসমানী (র.) তাঁর ভ্রমণগ্রন্থ ‘দুনিয়াজোড়া বিস্ময়কর সফর’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, এক সময় স্পেনে মুসলমানদের আধিপত্য ছিল অথচ আজ সেখানে ক্বিবলা কোন দিকে তা দেখানোর মতো মানুষের অভাব। আমরা একে একে আমাদের সকল ঘাঁটি হারাতে বসেছি। আজ মুসলমানদের শত ঐতিহ্যে লালিত শহর জেরুজালেমকে জারয রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের সীমানাভূক্ত। কয়েকদিন পর গোটা ফিলিস্তিনকে ইসরাইল রাষ্ট্র বলে ঘোষণা দেওয়া হবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। শুধু আমাদেরকে চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচারের বিভৎস্য দৃশ্য। আমাদেরকে শুনতে হবে তাদের আর্তচিৎকার, বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ। তাই এখনই সময় জেগে উঠার। আমাদেরকে আবার আমাদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। একত্ববাদের ডাক সারা পৃথিবী ব্যাপি ছড়িয়ে দিতে হবে। যেভাবে আমাদের পূর্বসূরীগণ বিশ্বের দিকে দিকে ইসলামের পতাকাকে উড্ডীন করেছিলেন। সারা বিশ্বে মুসলিম একক শক্তি হিসেবে জেগে উঠবে। আমরা যদি আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে সামনে এগুতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের দুর্দশাগ্রস্থ সময় কাটিয়ে উঠতে পারব। এতে কোন সন্দেহ নেই। অতীত ভুলে সামনে এগুতে চাইলে আমরা আবারো হোঁচট খাব। তাই আমাদের উচিৎ হলো অতীতকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের চেতনা যাতে বিলুপ্ত না হয় সেই কামনাই করি। একটি বার আবারো হোক ইসলামি রেঁনেসা একজন যোগ্য নেতার হাত ধরে।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *