৫২’ র ভাষা আন্দোলন মূলত: একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও বাংলার ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম,সার্বক্ষণিক এবং সুদূরপ্রসারী। ‘টৎফঁ ধহফ টৎফঁ ংযধষষ নব ঃযব ংঃধঃব ষধহমঁধমব ড়ভ চধশরংঃধহ.’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে মি. জিন্নাহ’র এই দম্ভপূর্ণ ঘোষণার প্রতিবাদেই ভাষার দাবী আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। ভাষা শহীদেরা আমাদের পথনির্দেশনা দিয়েছিল জীবনকে নতুনভাবে জাগ্রত করতে। স্বকীয়তা, উত্তরাধিকার চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তথা স্বাধীনভাবে বাঁচার সমুজ্জ্বল শিক্ষা আমরা পেয়েছি তাদের কাছেই।
স্বার্থপর হায়েনার দল কেড়ে নিতে চেয়েছিল আমাদের ভাষা। অন্ন, বস্ত্রহীন দেশে জুলুমের সাথে আবার ভাষার উপরে চরম আঘাত, এটা অন্যায়। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা, ভাব প্রকাশের মাধ্যম উর্দু ভাষা হবে! সুজলা সুফলা বাংলার দামাল ছেলেরা তা মানবে কেন? ভাষাকে নির্বুদ্ধিতা প্রসূত কুপোকাত করতে চাইবে তাতো হতে পারে না? দেশের জন্য, জনতার মুক্তচেতনা বিকাশের পথকে প্রশস্ত করার জন্য বুকের তাজা রক্ত আর প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। মাতৃভূমির অতি আদরের সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছিল হাসিমুখে। আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভার মতো উদগিরণ হয়েছিল তাদের। ‘বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কী আশা?’ এই সত্যকে রক্ষা করতে চেয়েছিল তারা। বস্তুত আমরা কি তা পেয়েছি? তাদের স্বপ্ন কি ছিল? এই চেতনার মধ্যদিয়ে আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। আমাদের বাক স্বাধীনতা।
৫২’র একুশ আমাদের ৭১’র সাহস যুগিয়েছে। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মন্ত্র শিখিয়েছে। পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার ডগমগে লালরক্ত আহবান করছে আমাদের। শুধু শহীদমিনারে ফুল ছিটানো নয়। মিছিলের উত্তরাধিকার, রক্তে স্বাধীনতার ঐতিহ্য আশা করছে জাতি। সাহসী যৌবনে সুন্দর আগামী রচনার সুদৃপ্ত শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই হোক আমাদের একুশের কঠিন অঙ্গীকার।
Check Also
রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা
পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …