একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও একজন ফুলতলী

জামানার শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সুলতানুল আরিফিন, আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট, মুজাহিদে মিল্লাত, শামসুল উলামা হজরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অনেকগুলো পরিচয়ের মধ্যে একটি পরিচয় হলো-তিনি ছিলেন একজন আপোষহীন সংগ্রামী বীর। তাই তার জীবদ্দশায় যখনই ইসলাম এবং মুসলমানদের উপর যেকোনো মহল থেকে আঘাত আসতে দেখেছেন, তার মোকাবিলায় তিনি ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন বীরের বেশে। সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন আমরণ। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জীবনের ঝুকি নিয়ে, জীবন সয়াহ্নে এসে তিনি করেছেন ঐতিহাসিক লংমার্চ। কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কোথাও কখনো সর্বোচ্চ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দাবিতে-লংমার্চের মাধ্যমে দাবি পেশ করার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। কোনো ইসলামি দাবি আদায়ে লংমার্চের ন্যায় কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবি পূরণ তো হয়নি, বরং তা আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ওয়াদা, প্রতিশ্র“তি ইত্যাদির সংখ্যার কথা বলতে গেলে অন্তত ১৯৭৯ থেকে ২০০০ সালের প্রথম দশকের আগ পর্যন্ত অনেক সরকারই ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা অসংখ্যবার দিয়েও কথা রাখেনি। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাদের তামাশার কথা আলেম সমাজের পক্ষে বিস্মৃত হওয়া কঠিন। হজরত আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে লংমার্চের আয়োজন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং এই দাবিকে একটি গণদাবিতে পরিণত করেন। সর্বোচ্চ একটি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দাবিতে মুসলিম বিশ্বের কোথাও কখনো লংমার্চের মতো বিশাল আন্দোলন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ‘বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদাররিসীন’ মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম প্রাচীন সংগঠন। যার ইতিহাস প্রায় এক শতাব্দীর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত ৮ দশকেরও অধিককাল একটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি উচ্চারিত হয়ে এলেও, ব্রিটিশ-ভারতে তা যেমন উপেক্ষিত হয়েছে, পাকিস্তান আমলের সরকারও সে দাবির প্রতি তেমন গুরুত্ব প্রদান করেনি। বরং বারবার প্রতিশ্র“তি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছে। বাংলাদেশ আমলে জমিয়াতুল মুদার্রেসিন ও তালাবায়ে আরাবিয়ার জোরালো দাবি আদায়ের আন্দোলনের মুখে ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর ভূমিকার কথা পুনরাবৃত্তি করা নি®প্রয়োজন। ওইসব আন্দোলনের ধারাবাহিক অংশীদার হিসেবে ২০০৬ সালে ফুলতলী ছাহেবের লংমার্চ আন্দোলন ছিলো একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। কিন্তু তাতেও ক্ষমতাসীন সরকারের টনক নড়েনি। বাংলাদেশে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দীর্ঘকালের দাবিকে উপেক্ষা করে অতি-কৌশলে কুষ্টিয়ায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আবারও দাবির মুখে ঢাকার গাজীপুরে স্থানান্তর, ফের সংগোপনে আরবি শব্দ বাদ দিয়ে কুষ্টিয়ায় পুনঃস্থাপন-এসবই ছিলো জিয়া-এরশাদ দুই সরকারের দুই প্রধানমন্ত্রীর অদ্ভুত কারিশমা। অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তা চালু হয়ে গেলেও, মূল দাবি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা সত্ত্বেও জমিয়াতুল মুদার্রেসিন ও জমিয়তে তালাবায়ে আরবিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেছিলেন যে, তাদের মূল দাবি পূরণের পরিবর্তে তাদেরকে অন্ধকারে রেখে অতি চাতুর্যের সাথে, সুকৌশলে কুষ্টিয়ায় স্থাপিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় অপরাপর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গণ্য হলেও তা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু প্রত্যাশিত ও প্রস্তাবিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায় স্থাপনের দাবি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ স্বতন্ত্র ক্ষমতা সম্পন্ন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মাদরাসার ফাজিলকে বি.এ ও কামিলকে এম.এ’র মান প্রদান করতে হবে। অথচ চারদলীয় জোট সরকার পূর্ববর্তী সরকারগুলোর চেয়েও একধাপ এগিয়ে এমন এক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন যে, তা বলবৎ হলে মাদরাসা শিক্ষা সাবেক ‘নিউস্কিম’ পদ্ধতির দুর্ভাগ্যবরণ করে মাদরাসার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে এবং সাধারণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-কলেজে পরিণত হবে। এক কথায় মাদরাসা শিক্ষা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ফাজিল ও কামিলকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এ প্রস্তাব দেশের সব মহল তথা প্রখ্যাত পির-মাশায়েখ, উলামায়ে কেরাম, জমিয়াতুল মুদারেসিনসহ ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সম্মিলিতভাবে তা তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। এর বর্ণনা জমিয়তুল মুদাররেসিনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের আহবানে অনুষ্ঠিত বিশেষ জরুরি সভার বিবরণীতে রয়েছে। মন্ত্রিসভায় তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ লংমার্চ আহবান করেন। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ফুলতলী ছাহেবের আহুত পাচ শতাধিক গাড়ি বহর সংবলিত এ সুদীর্ঘ বিশাল লংমার্চ ছিলো, ফারাক্কা অভিমুখে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর লংমার্চের পর প্রথম বিশাল এবং অবিস্মরণীয় লংমার্চ। তৎকালীন পত্রপত্রিকায় এ বিস্ময়কর ঘটনার যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে কিছু অংশ উল্লেখ করছি-
ইনকিলাব : প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র আহবানে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ-পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার (১৫-০৯-০৬) সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ হুমায়ুন রশীদ স্কয়ার থেকে সকাল ৮টায় শুরু হয়। দুপুর ১২টায় শায়েস্তাগঞ্জের লস্করপুর ঈদগাহ ময়দানে জুমার নামাজ আদায় শেষে লংমার্চের মূল বহর ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। মূল বহরে অংশ নেয় শত শত গাড়ি ও হাজার হাজার মানুষ। লংমার্চ উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সকল থানা ও প্রত্যেক অঞ্চলে ব্যাপক গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিলেটের সর্বত্র ব্যাপক সাড়া পড়ে। যার ফলশ্র“তিতে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, আলেম-উলামাসহ সকল পেশার হাজার হাজার মানুষ লংমার্চে এসে শরিক হন। বালক, যুবক, বৃদ্ধসহ সকল বয়সের সকল স্তরের লোকের উপস্থিতিতে আলাদা বৈচিত্র্যময় লংমার্চের রূপ লাভ করে। ব্যানারে ব্যানারে সজ্জিত গাড়ি, শামিয়ানা সজ্জিত ট্রাক লংমার্চের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বুলেটিন প্রচার করে এবং মিছিলে মিছিলে রাজপথ মুখর করে ঢাকার উদ্দেশ্যে কখনো ধীর লয়ে, কখনো দ্রুত লয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পথ চলে লংমার্চের বহর। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র আহবানে লংমার্চে এসে তরুণ-যুবক যেমন বিশেষ উদ্দীপ্ত, তেমনি আবেগাপ্লুত ছিলেন বৃদ্ধগণ। ছাহেব কিবলাহ’র অতীতের আন্দোলনের স্মৃতি রোমন্থন করে তাদের অনেকেই প্রেরণা অনুভব করেন। বয়সের ভার তাদের কাছে নগণ্য হয়ে যায়। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল-কামিলকে নেয়ার প্রতিবাদে মিছিলে স্লোগান উচ্চারিত হয় সকল গাড়ি থেকে। ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাযিল-কামিল মানি না, মানব না। অবিলম্বে আরবি বিশ্ববদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করো-করতে হবে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে দাও-নইলে গদি ছেড়ে দাও। ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র ঘোষণা-আন্দোলনের সূচনা। ইত্যাদি নানা শ্লোগান চলে সারা পথ ধরে। বাদ আছর ঢাকায় পৌছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে মহাসমাবেশের মাধ্যমে লংমার্চ শেষ হয়।
আমার দেশ : বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, শামসুল উলামা হজরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর আহুত লংমার্চ কাফেলা বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে ভৈরবস্থ দুর্জয় মোড় অতিক্রমকালে স্থানীয় মহাসড়ক অংশের দু’পাশে হাজার হাজার ইসলামি জনতা লংমার্চ কাফেলাকে অভিনন্দিত করেন। সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জের লস্করপুর থেকে ঢাকামুখী গাড়িবহরের অভূতপূর্ব কাফেলাপূর্ণ সড়ক পথের চলমান দৃশ্য জনতার মাঝে নতুন অনুভূতি জাগ্রত করে। গাড়ি বহরের লংমার্চকে কেন্দ্র করে ভৈরবের সর্বত্র ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ শামসুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী বজ্রনির্ঘোষে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা অবলিম্বে স্বতন্ত্র ক্ষমতা সম্পন্ন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন চাই। এর অধীনে ফাজিল ও কামিলের মান চাই। এর বিকল্প কোনকিছু আমরা মানি না-মানবোনা। গতকাল শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে লংমার্চ শেষে লাখো জনতার এক মহাসমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের কাছে জানের চেয়ে ঈমানের মূল্য বেশি, ইসলামের মূল্য বেশি। ঈমানের উপর, দ্বীন ইসলামের রক্ষাকবচ মাদরাসা শিক্ষার উপর আঘাত আসলে আমরা জান দিয়ে তা প্রতিহত করবো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার মতো মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্ববিনাশী কোনো আইন কার্যকর করতে দেয়া হবেনা। সমবেত লাখো জনতা মুহুর্মুহু তাকবির ধ্বনি দিয়ে দু’হাত তুলে ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর এ ঘোষণার প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন। সে ছিলো এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী বলেন, ‘আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি বহুদিনের। এ দাবি পূরণে বাধা কোথায়? টাকার অভাব হলে আমরা দিয়ে দেবো। আমরা তিলে তিলে মাদরাসাগুলো গড়ে তুলেছি। এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে ধ্বংস করার চক্রান্ত আমরা বরদাশত করবোনা। ইসলামের গলায় ছুরি চালালে কোনো মুমিন ঘরে বসে থাকবেনা। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন-আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে দিন, নতুবা পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন, ‘আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি আদায় ছাড়া আমরা ঘরে ফিরবোনা।
যুগান্তর : গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ শুক্রবার সিলেট থেকে প্রায় পাচ শতাধিক গাড়িবহরের এই লংমার্চ যখন ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে থাকে, তখন রাজপথে দু’ধারে দাঁড়িয়ে হাজারো দ্বীনদরদী মানুষ স্বাগত জানাতে থাকে। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অপেক্ষা করতে থাকে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনঃ জমিয়তুল মুদাররেসীন ও ছাত্র হিযবুল্লাহ এবং বিভিন্ন ইসলামি ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের ইসলামি জনতা। ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী মঞ্চে উপস্থিত হতে সমগ্র এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। পল্টন মোড় হতে দৈনিক বাংলার মোড় হয়ে পূর্বদিকের রাজপথ হয়ে যায় লোকে লোকারণ্য। এর শেষ কোথায়? তা অনুমান করা হয়ে দাঁড়ায় অসম্ভব। সবার কণ্ঠে ছিলো স্লোগান-‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাদরাসা ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত মানিনা, মানবোনা। স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা চাই, করতে হবে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল-কামিলের মান চাই। মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবোই।
যাই হোক, এরপর আরো নানা নাটকীয়তা ও টালবাহানার পর অবশেষে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় শতবৎসরের লালিত স্বপ্ন ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সংসদে ও মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে দাবি পাশ হয় এবং ২০১৫ সালে বাস্তবায়িত হয়।
ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের জন্য শামসুল উলামা আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র প্রতি বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ-এর পক্ষ থেকে গত ১০ অক্টোবর ২০১৩ সালে একটি (মরণোত্তর) শ্রদ্ধাস্মারক (ক্রেস্ট) প্রদান করা হয়। আর এই ক্রেস্টটি পেয়ে আমরা তখন আনন্দে আতœহারা হয়ে পরম তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলাম! যদিও ক্রেস্টে ‘মরণোত্তর’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আমরা তো জানি যে, এদেশে কারো ইন্তেকালের পর তাকে পুরস্কৃত করা বা সম্মাননা দেওয়ার নামই হলো ‘মরণোত্তর’! আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর পরই আমাদের দাবি ছিলো যে, (যেহেতু জাতিগতভাবেই অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের দাবি জানাতে হয়!) ফুলতলী ছাহেবের নামে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি হলের নামকরণ করা হবে। কিন্তু তা আজও হয়নি! আর কোনদিন হবে কি না? তা সরকারের উপর মহল এবং মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন ‘জমিয়তুল মুদার্রেসিনে’র মর্র্জি।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *