ঈদ উৎসবের গোড়ার কথা

ঈদ মানে হাসি,ঈদ মানে খুশি
ঈদ মানে মহানন্দের ছড়াছড়ি।
ঈদ আসে বারোমাসে দু’বার।
ঈদ হলো মুসলমানদের আনন্দ উৎসবের এক অনন্য দিন!
আল্লাহ তা’য়ালা দয়া করে আমাদেরকে যে খুশির ঈদ উৎসব দিয়েছেন তা পৃথিবীর অন্য সকল জাতির আনন্দ উৎসব থেকে সম্পূর্ণই আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের দাবি রাখে। ইসলাম ধর্মে এ উৎসব সারা বছরে মাত্র দু’বারই আসে। এরচে বেশি না!
অথচ আমরা গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখবো, পৃথিবীর বুকে বাকি অন্যান্য সকল ধর্মে সারা বছরে নানারকমের আনন্দ উৎসব রয়েছে।
যেমন খ্রিষ্ট ধর্মের উৎসব আলাদা। ইহুদী ধর্মের উৎসব আলাদা।
হিন্দু ধর্মের উৎসব আলাদা।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে নির্ধারিত এই দুটি উৎসব পালনের জন্যে যে দু’টি দিনকে নির্বাচিত করেছে তাও স্বতন্ত্র ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত। আমরা যদি অন্যান্য ধর্মের উৎসবগুলোকে একটু খুটিয়ে দেখি তাহলে দেখবো তারা অতীতকালের কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করার জন্যেই উৎসব পালন করে থাকে ।
যেমন খ্রিষ্টানরা পঁচিশে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে তাদের দাবি মতে এদিন হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
যদিও ঐতিহাসিকভাবে তাদের এই দাবি ঠিক নয়। তবুও তারা ধরে নিয়েছে এ দিনই হযরত ঈসা (আ.) এই পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তাই তারা হযরত ঈসা (আ.) এর স্মরণে পঁচিশে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে।
যেদিন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.) এবং বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছেন আর ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন সেদিনটির স্মরণে ইহুদীরা উৎসব পালন করে থাকে।
হিন্দুরাও তাদেন অতীতকালের অশ্লীলতায় ভরা বিভিন্ন ঘটনার স্মরণে নানা রকমের উৎসব পালন করে।
অথচ ইসলাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার যে অনুষ্ঠান দিয়েছে তার সাথে অতীতকালের কোন ঘটনার নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই!
এমন কোন ঘটনার স্মরণে আমরা ঈদ উৎসব উদযাপন করি না যা অতীতকালে আমাদের জীবনে একবার এসেছিলো, তারপর আবার চিরতরে গত হয়েছে, বরং ইসলাম এমন ঘটনাকে আমাদের ঈদ উৎসবের জন্যে নির্বাচন করেছে যে ঘটনা প্রতি বছরই আমাদের মাঝে আসে এবং প্রতিবছরই আমরা সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঈদ উৎসব উদযাপর করি। আমরা লক্ষ্য করছি যে, আল্লাহ তায়ালা এমন দুটি দিনে আমাদেরকে দুটি মহান উৎসব দান করেছেন যে দুটি দিনে গিয়ে আমাদের দুটি মহৎ ইবাদতের সমাপ্তি লাভ করে।

যেমন পবিত্র রমজানুল মোবারকের সমাপ্তিতে গিয়ে আমরা ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করি দীর্ঘ এক মাস আল্লাহ তায়ালার বন্দেগিতে মাশগুল থাকার পর।
তাঁর সন্তুষ্টির আশায় যাবতীয় খানাপিনা ও নফসের চিহাদাকে উপেক্ষা করে অবিরাম সংগ্রাম সাধনার পর মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই খুশির ঈদ পুরস্কার হিসেবে দান করেন।
সুতরাং সুদীর্ঘ সাধনা ও ত্যাগ তিতিক্ষার এই ইবাদতের পরিসমাপ্তিতে আমরা এই আনন্দ উৎসব উদযাপন করে থাকি। অর্থাৎ আরবী সালের শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয় আর জিলহজ মাসের দশম তারিখে উদ্যাপিত হয় ঈদুল আজহা।
অথচ এই দিন দু’টি অতীতকালের বিশেষ কোন ঘটনার স্মারক নয়।
বরং মুসলমানদের ঈদ উৎসব মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি দিন যার সাথে সম্পৃক্ত হলো নগদ আনন্দের ঘটনা। মাহে রমজানে মুসলমানগণ যখন মহান ইবাদত রোজা সমাপন করে ঠিক তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঈদ উৎসব দান করেন।
এটা রমজান মাসের নগদ পুরস্কার উৎসব। এটা কোন অতীতকালের ঘটনার স্মরণে উৎসব নয়। মুসলমানগণ প্রতি বছরই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই নিয়ামত লাভ করে থাকে। ঠিক একইভাবে মুসলমানরা যখন দ্বিতীয় আরেকটি মহান ইবাদত হজের পূর্ণতায় পৌঁছে তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দান করেন ঈদ-উল আজহা। এটাও একটি নগদ আনন্দের ঈদ।
সুতরাং আমাদের উচিত আমাদের এই স্বতন্ত্র উজ্জ্বল এ ঈদ উৎসব ইসলামের স্বতন্ত্র বিধি বিধানদ্বয় যথাযথভাবে পালন করেই উদ্যাপন করা।
কিন্তু বড্ড বেদনার বিষয় হলো, আমরা আমাদের এই স্বতন্ত্র উজ্জ্বল ও মানবিক পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে কাফের মুশরিকদের পদ্ধতিতে ঈদ উদ্যাপন করি। তারা যেভাবে গান গেয়ে নেচে খেলে, বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার মধ্য দিয়ে আনন্দ উৎসব করে আমরাও সেভাবেই আমাদের পবিত্র ঈদ উৎসবকে উদযাপন করতে চাই!
আমাদের এই চাওয়াটা নেহায়তই বেদনাদায়ক। যা আমাদের জন্য আদৌ কাম্য নয়!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ঈদ উৎসব উদ্যাপন করার তাওফিক দান করুক এবং সব ধরণের গুনাহ, নাফরমানি ও তার অবাধ্যচারিতা থেকে রক্ষা করুক।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *