আরবী সহজ ভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা

ইসলাম ধর্ম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম” -(সুরা আল ইমরান : ১৯)। এই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের মৌলিক ভাষা হচ্ছে আরবী। কেননা, সকল হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ সবকিছুই আরবী ভাষায় বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। আরবীতেই বর্ণিত হয়েছে হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ সকল কিছু। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশে-পাশের লোকদেরকে সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে” -(সুরা আশ শুরাঃ৭)। সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের মৌলিক ভাষা অবশ্যই শ্রেষ্ঠ হওয়ার যথোপযুক্ত। যেহেতু আরবী ভাষাই ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভাষা, তাই স্পষ্ট হয় যে আরবী ভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা।
পৃথিবীর আদি হতে আল্লাহ প্রদত্ত বিভিন্ন আসমানী কিতাব নবীগণের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে মানবজাতির হেদায়াতকল্পে। এসব আসমানী কিতাব ১০৪ খানার মধ্যে বড় হলো চার খানা। তার মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব হলো পবিত্র কোরআনুল কারীম। মানবজাতির জীবন বিধান। তা অবতীর্ণ হয়েছে আরবীতে। যা আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত ফেরেশতা জিব্রীলে আমীনের মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন। যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এসেছে-“এই কোরআন তো বিশ্বজাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্থ ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হন। সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায়”-(সুরা আশ শুয়ারাঃ ১৯২-১৯৫)। সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। যেহেতু আরবী ভাষাতে কোরআনুল কারীম অবতীর্ণ হয়েছে তাহলে বুঝতে আর বাকী নেই আরবী ভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা। এই কোরআনকে সহজ সরল ও সাবলীল করে দেয়া হয়েছে যাতে সকলেই সহজে বুঝতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বারবার উল্লেখ করে বলেন, “আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্য। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি?” -(সুরা আল ক্বামারঃ ১৭, ২২, ৩২ ও ৪২)। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, কোরআনুল কারীমকে সহজতর করে অবতীর্ণ করা হয়েছে। যার ভাষা হলো আরবী ভাষা। আর এই আরবী সহজতর ভাষা। কেননা, আল্লাহ তায়ালার বর্ণনানুযায়ী পবিত্র কোরআনুল কারীমকে সহজ করে দেয়া হয়েছে। আর কোরআনুল কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ। তাই প্রমাণিত হলো আরবী ভাষা সহজ, সরল এবং সাবলীল।


যুগে যুগে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা এবং একত্ত্ববাদের প্রচার প্রসারে প্রেরিত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ নবী ও রাসুল। যাদের সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি নিজেই বলেন, “আমি আদমের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান”। যার সম্মান ও স্মরণকে করে দেয়া হয়েছে সুউচ্চ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি আপনার আলোচনাকে সমুন্নত করেছি” -(সুরা আল ইনশিরাহঃ ৪)। সেই প্রিয় নবীর ভাষা হলো আরবী। অর্থাৎ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নবী ও রাসুলের ভাষা ছিল আরবী। তাই আরবীই সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা।
ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদীস। “সাধারণ অর্থে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগণের বাণী এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদীস বলে”। হাদীস আল্লাহ প্রেরিত পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ। মিথ্যা বা বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারী জাহান্নামে নিপতিত হবে। যার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে হাদীসের মর্যাদা সুউচ্চে। আর এ হাদীসের ভাষা হলো আরবী। অতএব আরবী ভাষা সম্মানীত ভাষা, শ্রেষ্ঠ ভাষা
নামাজ। সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। জান্নাতের চাবি। মুমিনদের মেরাজ। কেননা, বান্দাহ তখন তার রবের বেশী নিকটবর্তী যখন সে সেজদারত অবস্থায় থাকে। আর এই নামাজে কোরআন শরীফের আয়াতসমূহ হতে তেলাওত করতে হয়। অন্যথায় নামাজ বিশুদ্ধ হয়না। আর পবিত্র কোরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। মোটকথা, সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজে আরবী ভাষা ব্যবহৃত হয়। তাই আরবী ভাষা শ্রেষ্ঠ ভাষা।
মানুষ মরণশীল। দাফনের পর মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আসবেন মৃত ব্যক্তিকে সোওয়াল-জাওয়াব করতে। তারা এসে প্রশ্ন করবেন, তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবী কে? এই প্রশ্নগুলো আরবীতেই করা হবে। তথায় ফেরেশতাগণের ভাষা হবে আরবী ভাষা। আর সেখানে আরবীতেই উত্তর দিতে হবে। আরবী শ্রেষ্ঠ ভাষা হওয়ার কারণে সেখানে আরবী ভাষাকেই চয়ন করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেন, আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। তোমরা এগুলোকে আকঁড়ে ধরলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো হলো আল্লাহর কিতাব (কোরআনুল কারীম) ও তাঁর রাসুলের সুন্নত (হাদীস)। বুঝতে আর বাকী নেই যে এগুলো হলো মুসলমানদের মূলগ্রন্থ। আর এই দুটি জিনিসই আরবী ভাষায়।
সর্বোপরি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রা. বলেন- “তোমরা আরবী ভাষা শিক্ষা কর। কারণ, তা তোমাদের দ্বীনের অংশ”। তাই আমাদের উচিৎ সম্মানীত ও শ্রেষ্ঠ ভাষা আরবী ভাষাকে রপ্ত করে কোরআন-হাদীস কে ভালভাবে উপলদ্ধি করে বাস্তবজীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথকে সুগম করা।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *