আধ্যাত্মিকতায় আল্লামা ফুলতলী রহ.

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবীবের রিসালাতের উত্তরাধীকারী হিসেবে সমাজের মানুষকে আলো দেখাতে আলোকবর্তিকা হিসেবে পাঠিয়েছেন আলেম উলামা গণকে। আর উলামাগণের মধ্যে কতেক ছিলেন সূফী-সাধক বা আধ্যাতিœক জ্ঞানের অধিকারী। শরীয়তের জ্ঞানের পাশাপাশি ছিল মা’রিফাত বা তাসাউফের জ্ঞান। যারা সমাজের মানুষদেরকে যেভাবে ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীস, ইলমে ফিকহ সহ নানাবিধ জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে সমাজের একদল মানুষকে তাজকিয়াতুন নাফস বা আতœার পরিশুদ্ধির দীক্ষা প্রদান করেছেন। তাযকিয়াতুন নাফস, ইলমে তাসাউফ বা আধ্যাতিœকতার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দা হিসেবে তৈরী করতে সবসময় ছিলেন তৎপর। আমাদের প্রিয় রাহবার, মুর্শিদুনা আল্লামা ফুলতলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন ইলমে তাসাউফের ক্ষেত্রে উচ্চাসনে আসীন। যার কারণে, তিনি সমাজের সর্বসাধারণের কাছে সহজে মিশে গিয়ে ইসলামের বাণী প্রচার করতে পেরেছিলেন। যা তাঁর মাঝে পরিলক্ষিত হতো। তিনি প্রতিটা মাহফিলে ইলমে শরীয়তের আলোচনার সাথে ইলমে মা’রিফাতকে গ্রহণ করতে জ্ঞানবানদেরকে নসীহত করতেন। এমন খুব কমই মাহফিল ছিল যেখানে তিনি ইলমে শরীয়তের পাশাপাশি ইলমে মা’রিফাত গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীবের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেন নি। রাষ্ট্র, সমাজ, দেশের বিভিন্ন অন্যায়-অমূলক কার্যকলাপকে দূর করতে আন্দোলনের পাশাপাশি আল্লাহ পাকের আরো প্রিয় হতে খানকা, যিকির আর মাহফিলের আয়োজনে ছিলেন সদানিষ্ট। নিজেকে আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল সাল্লালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয় থেকে প্রিয়তম করে তুলতে নির্জনে আল্লাহপাকের ধ্যানে মগ্ন হতেন। কখনও বা ছুটে যেতেন নির্জন গুহায়।
আধ্যাতিœকতার মাধ্যমে বান্দার মধ্যে ইহসান বৃদ্ধি হয়। ইহসান হলোঃ হাদীস শরীফের পরিভাষায়, ‘ইহসান কি? তিনি বললেনঃ এমনভাবে আল্লাহ্ র ইবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহ্ কে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখতে পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন -(সহীহ বোখারী-৫০, সুনানে নাসায়ী-৪৯৯০/৪৯৯১, সুনানে আবু দাউদ-৪৬৯৫)। ইহসান পরিলক্ষিত হতো আল্লামা ফুলতলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মধ্যে। তাঁর বয়ান-নসীহত, ইসলামের খেদমত বা ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে উপলদ্ধি করা যেতো। ইহসান আধ্যাতিœকতা ছাড়া অর্জন করা কঠিন। তাযকিয়াতুন নাফস বা আতœার পরিশুদ্ধি ছাড়া মানুষ আল্লাহর প্রিয় হতে পারে না।


আমাদের রাহবার আল্লামা ফুলতলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইলমে তাসাউফের দীক্ষায় ছিলেন দীক্ষিত। ইলমে তাসাউফের ক্ষেত্রে তাঁর সিলসিলা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁেছছে। তিনি কুতবুল আওলিয়া হযরত বদরপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র নিকট থেকে চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশ্বন্দিয়া, মুজাদ্দিদিয়া ও মুহাম্মদিয়া তরীকার সিলসিলা গ্রহণ করেছিলেন। তাসাউফের ক্ষেত্রে তাঁর উর্ধ্বতন উস্তাদগণের তালিকা হলোঃ শামছুল উলামা হযরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ কুতবুল আওলিয়া হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ শামছুল আরিফিন হযরত শাহ হাফিজ আহমদ সিদ্দিকী জৌনপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ তাঁর পিতা ও মুর্শিদ হযরত মাওলানা কারামত আলী সিদ্দিকী জৌনপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ ইমামুত তরীকত, আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আযিয দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ তাঁর পিতা ও মুর্শিদ হযরত মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, তাঁর উস্তাদ তাঁর মুর্শিদ হযরত মাওলানা শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি । আর শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র ইলমে তাসাউফের সিলসিলা সারা দুনিয়া ব্যাপি সবার কাছে প্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি হযরত বদরপুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র অনুমতিক্রমে চিশতিয়া নিযামিয়া তরীকায় বায়আত গ্রহণ করেছিলেন হযরত মাওলানা গোলাম মুহিউদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র কাছে। তাঁর চিশতিয়া নিযামিয়া তরীকার সিলসিলা ও রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁেছছে।
তার জীবদ্দশায় আমরা তাকে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের সাথে মিল খুঁেজ পাই। মহান আল্লাহ পাকের বাণী, ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন’ -আল আনকাবুতঃ ৬৯। আর তাঁর মাকবুলিয়্যাতের কারণেই ইন্তেকালের পরেও তার সার্বিক খেদমত সমূহ তাঁর উত্তরসূরীরা সঠিকভাবে আঞ্জাম দিচ্ছেন। মহান আল্লাহ পাক যেন তাঁর এ ওলীর দরজাকে বুলন্দ করেন। আমীন। ওয়া সাল্লাল্লাহু আ’লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *