হিয়ার মাঝে (৫ম পর্ব)

হিয়ার মাঝে (৪র্থ পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)
পৌষী দুহাতে কান চেপে শুতে চেষ্টা করলো। ওদিকে সাহেদার ঘুম উড়ে গেছে মেয়ের চিন্তায়! পৌষি সাফ মানা করে দিয়েছে এই প্রস্তাবে সে রাজী নয়। সাহেদা এতক্ষণ ওকে বোঝাচ্ছিলেন কিন্তু পৌষী কেঁদে কেঁদে একাকার। সে কিছুতেই টাখনুর নিচে প্যান্ট পরা দাঁড়িবিহীন মেয়েলী পুরুষ বিয়ে করবেনা। তার জন্য যদি আজীবন কুমারী থাকা লাগে তো থাকবে!
নিজের মেয়ের জেদ আর তার ভাইবৌয়ের কড়াকথার মাঝে সাহেদার অবস্থা শিলনোড়া(পাটাপুতা)র মাঝে পেষা মসলার মতো হয়েছে!
“হামে ইন্তেজার কিতনা ইয়ে হাম নাহি জানতে…
মাগার জী নাহি সাকতে তুমহারে….”
…খট করে গানটা বন্ধ হয়ে গেলে রাজ চোখের উপর থেকে হাত সরালো! সে চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে গানটা শুনছিলো। হাত সরিয়ে তাকালো,দেখলো মা নিজেই এসেছে। তার পাশে সাবুমিয়ার হাতে ট্রে! রাজ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো-“আমি বললাম না খাবোনা! এসব নিয়ে যাও আর লাইটটা অফ করে সিডিটা প্লে করে দিয়ে যাও! “
রাণী ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত রাখলেন-
-“আমার বাবাটার মন এতো খারাপ কেন? রাগ করেছিস আমার উপর? “
-“আরে…মা তোমার উপর রাগ করবো কেন? “
-“তাহলে? কি হয়েছে তোর? আর আজ তোর কোনো বান্ধবীকেও তো পার্টিতে দেখলাম না! ওদের বলিসনি? সিঁথি তো তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড! ওকে তো বলতে পারতি..? “বলে রাণী সাবুকে ট্রে রেখে চলে যেতে ইশারা করলেন! সাবু চলে গেলো।
রাজ উঠে বসে বিমর্ষ মুখে বলল-“না…ওদের সাথে ওঠাবসা এখন কমিয়ে দিয়েছি। “
-“কেন রে? ঝগড়া হয়েছে কারো সাথে?”
-“আরে না…মেয়েদের সাথে চলাফেরাটা সবাই ভালো চোখে দেখেনা। তাছাড়া এটা নাকি অনেক বড় গুণাহের কারণ। আচ্ছা মা,তুমি কখনো আমাকে এসব শেখাওনি কেন? বরং মেয়েদের সাথে চলতে উৎসাহ দিয়েছো! কেন বলোতো?”
রাণী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন-“কি সব আজগুবি কথা শুরু করলি হঠাৎ? কি হয়েছে তোর?
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“যারা এসব মানেনা,গুনাহ মনে করে তাদের চোখে নিশ্চয়ই আমি অনেক গুনাহগার,তাই না? “
“তোর আজ কি হলো বলতো? কেউ কিছু বলেছে? আমাদের এত কাউকে তোয়াক্কা করার কিছু নেই! যার কাছে তোর এসব ভালো না লাগবে সে দূরে গিয়ে মরুক। আমার ছেলেকে কষ্ট দেবার অধিকার কারো নেই!”
রাজ হতাশ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে…আজ না হোক কাল..! কেউ না কেউ পৌষীকে একদিন ওর চোখের সামনে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে! কি করে সহ্য করবে রাজ? পৌষী কি কোনোদিন ওকে নিজের করে নিতে আগ্রহী হবে? সে তো কথাটুকু পর্যন্ত বলতে চায়না।


ভাবনার এ পর্যায়ে রাণী কাস্টার্ডের বাটি হাতে তুলে নিয়ে বললেন-‘আরে এসব রাখ, তোকে আরেকটা ভালো খবর দেই। তোর সাহেদা ফুপ্পির দুঃখ এবার দূর হতে চললো! আমাদের ইরার দেবরকে চিনিসনা? ঐ যে ইসতিয়াক! ওর মা আমাদের পৌষীকে বিয়ের প্রস্তাব করবে মনে হয়! ওর মামী আমাকে ডেকে বলেছে!’
রাজের বুকে ড্রাম বাজা শুরু হলো! আতঙ্কিত চোখে মায়ের দিকে চেয়ে বলল-“ফুপি কি শুনেছে এসব কথা?’
-‘হ্যাঁ…শুনেছে! একটু আগে আমিইতো সব বললাম!’
-‘সে কি বললো? নিশ্চয়ই রাজী?’
ঠান্ডা স্বরে বলে চলল রাজ! তারপর দুচোখ বন্ধ করলো কারণ চোখ গুলো জালা করছে ওর! কিন্তু মায়ের কথায় হ্রৎপিন্ডটা লাফিয়ে উঠল!
-‘আরে তোর ফুপুটা যেমন বোকা মেয়েটা তারচে বড় বোকা! বলে কিনা দ্বীনদার ছেলে ছাড়া বিয়ে করবেনা! পৌষী রাজী হবেনা! বুঝে দেখ এবার কেমন বোকা মা মেয়ে এরা? এসব প্রস্তাব কেউ হাতছাড়া করে?’
রাজ শান্ত স্বরে বললো-‘কারো উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া ঠিক না মা! ফুপি যখন বলেছে ভেবে চিন্তেই বলেছে! পৌষীর মতামত না নিয়ে সে তো এখানে মত দিতে পারবেনা! দেয়া উচিতও না। তাছাড়া ইসতিয়াকের সাথে পৌষীকে একদম মানাবেনা!’
-‘কেন মানাবে না,লম্বা ফর্সা ছেলে,ভালো চাকরী করে,ফার্ষ্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার…পৌষীর তো সৌভাগ্য!’
ছেলের হাতে কাস্টার্ডের বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন-‘নে এটা অন্তত খা!’
রাজ কাস্টার্ড নাড়তে নাড়তে বলল-“আমার মনে হয় ইসতিয়াকের ব্যাপারে আরেকটু খোঁজখবর করা উচিত। আজকাল ছেলেদের ভেতরে কত রকম সমস্যা! ওর বাবা নেই বলে আমরা কি খোঁজ না নিয়েই মেয়েটাকে গছিয়ে দেবো নাকি? “
-‘এসব ঝামেলা কে করবে? খোঁজটোজ নেবে কে? “
-“কেন..আমি?” (রাজ কাস্টার্ড খেতে খেতে স্বাভাবিক সুরে বলল)!
-“তুই…? “
-“হমমম….! কেন অসম্ভব কিছু তো না। তাছাড়া ফুপি তার মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আছে। আমরা কিভাবে পৌষীকে যার তার হাতে ছেড়ে দিতে পারি? “
রাণী কোনো কথা বললেন না। ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রাজ কাষ্টার্ডের বাটি ফিরিয়ে দিয়ে বললো-
-“তুমি একটু পৌষীকে দিয়ে কাল আমার সেলফটা গুছিয়ে দেবার ব্যবস্থা করো তো! কিছু বই খুঁজে পাচ্ছিনা! উনি আমার সেল্ফটা যেন গুছিয়ে দেয়! “
-“আচ্ছা….বলবোনে। নে এবার ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়। রাত জাগিস না! “
পরদিন রাজ বাইরে চলে যাবার পরে পৌষী রাজের সেলফ থেকে বইগুলো সব নামালো! রাহেলা ওকে সাহায্য করছিলো! পৌষী যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে কাজ করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কাজ শেষ করার আগেই রাজ রুমে এসে ঢুকলো!
পৌষী ওকে দেখেই ওড়না টেনে রাজস্থানী মেয়েদের মতো নিজেকে পুরো ঢেকে ফেললো! ও বুঝতে পারেনি,রাজ এত তাড়াতাড়ি এসে হাজির হবে। ও তো বলতেও পারছেনা যে আপনি বাইরে যান।
রাজ পেছন থেকে মৃদু শব্দে বলল-“স্যরি, আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি,আপনার কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই। আমি আপনাকে সাহায্য করি? “
পৌষী দ্রুত বইগুলো তাকে তুলে রাখছিলো! রাহেলা বোকার মতো একবার রাজের দিকে আরেকবার পৌষীর দিকে তাকাতে লাগলো!
রাজ আবারো বলল-“আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন আমার উপর? “
পৌষী শেষ বইটা রেখে ত্রস্তপায়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল-“না…না…আমার কাজ শেষ। “বলে পৌষী বেরিয়ে গেলো!
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে অসহায়ের মতো সেদিকে তাকিয়ে রইলো!
(চলবে)

হিয়ার মাঝে (৪র্থ পর্ব)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *