ধূম্রদের অভিযান

(পূর্ব প্রকাশের পর)
(১১তম পর্ব)
ড. মাহফুজ বিড় বিড় করে কিছু বলছিলেন। ড. আশরাফ হঠাৎ অন্যমনস্কের মতো বললেন-‘আপনি কী আমাকে কিছু বলছেন?’-‘জ্বি স্যার, বলছিলাম এই প্রোগ্রামটা বাতিল করা উচিত হবে কি-না। আমরাতো মহাকাশ বিজয় বা বিশ্বরহস্য উম্মোচন, যশ-খ্যাতি, ব্যক্তিস্বার্থ এসব কোনো কিছুর জন্য নভোযানটি তৈরি করিনি। বরং মহৎ উদ্দেশ্যে আমরা এ প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছি। একদল সন্ত্রাসী মহাকাশ বিজ্ঞানীর সাথে যুদ্ধ করে পৃথিবীর মানুষকে নিরাপদ রাখতে চাইছি। এতে আমাদের উপর আল্লাহপাক অসন্তুষ্টি হবেন না, স্যার।’
ড. মাহফুজের কথায় মুচকি হাসলেন ড. আশরাফ। তিনি বুঝতে পারলেন মাহফুজ সাহেব বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন বিষয়টি নিয়ে। তবে যাই হোক, তার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। তাই তিনি আর কথা না বাড়িয়ে বললেন-‘তা-তো অবশ্যই। ঠিক আছে, সব কিচু প্রস্তুত রয়েছে; এবার সময় নির্ধারণ করুন। পারমাণবিক বিজ্ঞানী জন মেডী এই পৃথিবীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। বিশ্ব জনমতের ভয়ে আমাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কিন্তু সে গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তার আক্রমণের একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রাত ২.৩০ মিনিট। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ল্যাবরেটরির গোপন কক্ষ। বৃহৎ মনিটরে সামনে বসে গভীর মনোযোগে ড. আশরাফ ডিজিটাল কী বোর্ডে আঙুল চালাচ্ছেন। পেছনের সিটগুলোতে বসে একদল নতুন মহাকাশ বিজ্ঞানী সবকিছু পর্যবেক্ষণ ও আয়ত্ব করে নিচ্ছেন। তারা মহাকাশ গবেষণা এজেন্সি ‘কর্কটক্রান্তি’র সদস্য এবং রকেটের ক্রু। ‘বিএসএ-৭১’ উপগ্রহকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে মহাশক্তিধর রকেট ‘ডি কিউ-১০’।

এই কক্ষটি সাধারণ কোনো কক্ষ নয়। ছুটে চলা রকেট ‘ডিকিউ-১০’ এর ক্রু কেবিনের অবিকল আদলে তৈরি এই কক্ষ। রকেটের কেবিনে বসে যা অনুভূত হবে এখানেও তাই হয়। তাই এ মুহূর্তে কক্ষটির সিটে যারা বসে আছেন সবার পরনে নভোচারীর ড্রেস, ইউনিফর্ম, মুখে অক্সিজেন মাক্স, পিটে স্পেস স্যুট রয়েছে। সবাই নিজেকে সিটের সাথে বেল্ট বেধে সেটে রেখেছেন।
‘ডিকিউ-১০’ রকেটে ক্রু হিসেবে রয়েছে অসংখ্য পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানী ধূম্র। ধূম্রদের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ল্যাবরেটরির গোপন কক্ষ থেকে রকেটটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছেন ড. আশরাফ।
কন্ট্রোল প্যানেলের সুইচ স্পর্শ করে মাঝে মধ্যে রকেটের গতিপথ পাল্টাচ্ছেন ড. আশরাফ। রকেটের ইঞ্জিন গর্জন করছে, গুম গুম শব্দ সমস্ত কক্ষজুড়ে। গতি বাড়ানোর সময় গতির ত্বরণ সবাই অনুভব করছেন। রকেটের কাউন্ট ডাউনের সময় সবাই কেঁপে কেঁপে উঠছেন। অর্থাৎ এই কক্ষটি রকেট বা মহাকাশ যানের পুরোপুরি ক্রু ককপিট। পৃথিবীর মহাকর্ষ থেকে যখন রকেটটি বের হলো তখন ড. আশরাফ সবাইকে সতর্ক করে বললেন-‘এখন আমরা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। অসংখ্য গ্রহানু এবং কৃত্রিম উপগ্রহকে পাশ কাটিয়ে আমাদেরকে যেতে হবে। সবার সিট বেল্টটি পরীক্ষা করে নিন। ক্রাশ ডাউনেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।’ কথাগুলো অনুরূপভাবে রকেটের ককপিটে থাক। ধূম্ররাও শুনতে পেলো। তারা এর উত্তর পাঠালো। ধূম্র ক্রুদের এই নিখুর্ঁত তথ্য আদান-প্রদান দেখে কক্ষে থাকা নতুন ক্রুরা একে অপরের দিকে হালকা চেয়ে আশ্চর্য প্রকাশ করলেন। তারা ড. আশরাফকে যতই দেখছেন ততোই অবাক হচ্ছেন।
মহাকাশ ওজনশূন্য। মহাকাশযানের ভেতর পাখির পালকের মতো লাগে নিজেদের। এই কক্ষে সেই ভরশূন্য অনুভূতি হচ্ছে সবার।
ড. আশরাফের নির্দেশ পেয়ে সবাই নিজেদের বেল্ট পরীক্ষা করে দেখলেন। পুরো ১ ঘন্টা ‘ডি.কিউ-১০’ একই গতিতে চলল। ড. আশরাফ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে কন্ট্রোল প্যানেলটি ড. মাহফুজের দায়িত্বে দেবেন বলে মনস্থির করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এমার্জেন্সি সাইরেন বেজে উঠল। সাথে সাথে ধূম্র ক্রদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে ডা. আশরাফের হাত কেঁপে উঠল। তিনি তৎক্ষনাৎ বললেন-আমাদের মহাকাশ যানটিকে কেউ ফলো করছে। তাড়াতাড়ি টেলিস্কোপের সুইচ সচল করো’। টেলিস্কোপের সুইচ স্পর্শ করতেই আরেকটি বৃহৎ মনিটরে বিভিন্ন রঙের পর্দা উঠানামা করতে থাকল। ড. আশরাফ আইপীসে চোখ রাখলেন। দেখে আৎকে উঠলেন। কাঁপা কণ্ঠে বললেন-‘তিন দিক থেকে তিনটি রকেট ফলো করে এগুচ্ছে। এগুলো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে চলে আসলে ‘ডিকিউ-১০’ কে আক্রমণ করবে। তখন কোনো উপায় থাকবে না।’
ড. আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে ‘বিএস-৭১’ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই নাসা সমস্ত মহাকাশকে বাড়তি নজরদারিতে ঘিরে ফেলেছে। নাসার বিজ্ঞানীরা ড. আশরাফের ঘোষণা নিয়ে যতোই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুক-না কেন ভেতরে ভেতরে তারা নিশ্চিত ছিলো ড. আশরাফের দ্বারা এই অভিযান সফল হওয়া সম্ভব। তাই সাথে সাথে মহাকাশ স্টেশনে বিশেষ সতর্ক সিগন্যাল পাঠিয়ে দেয়। ড. আশরাফ পাঠানো রকেটকে বিস্ফোরিত করতে অত্যাধুনিক প্রায় শতাধিক রকেট পাহারাদার হিসেবে মোতায়েন করে। এই রকেটগুলোর ক্রু স্বয়ংক্রিয় রোবট এবং প্রতিটি রকেটে শক্তিশালী মিসাইল সেট করা।
ড. আশরাফ বলেন-‘আগন্তুক যানগুলোকে কোনো অবস্থায় আক্রমণ করা যাবে না। আক্রমণ করলেই তাদের পাতানো ফাঁদে ফেসে যাবো। তখন অন্য দিকে ছড়িয়ে থাকা যানগুলোও এদিকে এসে আমাদের গতি পথের সমস্ত মহাকাশ ছেয়ে ফেলবে। আমাদের পালানোর উপায় থাকবে না। এই তিনটি রকেটকে ধোকায় ফেলে আমরা গতিপথ পাল্টে নেবো। আর তাদের নাগালের বাইরে চলে গেলে অন্য যানগুলো এসে আমাদের খোঁজ জানতে পারবে না।’
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা সিকিউরিটি ফোর্স ‘অভিযাত্রা’। যার সদস্য সংখ্যা মাত্র আট। এই আট সদস্যই শুধু জানে ড. আশরাফের পরামর্শে সরকার তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় ক্বলক্বলা পার্টির মহাসচিব অধ্যাপক আবু সালেহকে গ্রেফতার করার।
১০ম পর্ব

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *