খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৬৮. মোল্লা জিউন (রহ.) অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তাঁর একটি বিবাহযোগ্য কন্যা ছিল। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে পাত্রস্থ করা সম্ভব ছিল না। অবশেষে তিনি তাঁর পুরাতন শিষ্য বাদশাহ আলমগীরের নিকট এ বিষয় উল্লেখ করলেন। বাদশাহ আলমগীর ভাবলেন যে, রাজ কোষাগারের অর্থ সন্দেহজনক বলে নিজে গ্রহণ করেন না, তা থেকে তাঁর পীর সাহেবকে দিবেন কি করে? শেষ পর্যন্ত বাদশাহ আলমগীর তাঁর নিজের শারীরিক পরিশ্রমলব্ধ চারি আনা পয়সা স্বীয় ওস্তাদকে দিয়ে দিলেন। কিন্তু কন্যা বিবাহদানের খরচের ক্ষেত্রে চারি আনা পয়সা একেবারেই হাস্যকর বস্তু ছিল। এতে মোল্লা (রহ.)’র মনটি দমে গেলেও এক সময়ের প্রিয় ছাত্রের দান গ্রহণ না করে পারলেন না। তিনি চারি আনা পয়সা নিয়েই গৃহে রওয়ানা করলেন। পথিমধ্যে মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এ চারি আনা পয়সা দিয়ে তিনি কি করবেন, শিষ্য এতবড় রাজ্যের বাদশাহ, তাঁর নিকট আসলাম এ আশায় যে, সে মেয়ের বিবাহ দেওয়ার একটা উপায় করে দিবে কিন্তু তা হলো না। যাই হোক আল্লাহপাক যা লিখে রেখেছেন তা হবেই এ কথা ভেবে চলতে লাগলেন। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখলেন, রাস্তার পাশে এক ব্যক্তি মাছ বিক্রি করার জন্য তা নিয়ে বসে আছে। বেলা শেষ হয়ে এসেছিলো কিন্তু কোনো খরিদ্দার না পাওয়ায় লোকটি যে কোনো লোক যে মূল্যই বলবে সে মূল্য দিয়ে বিক্রয় করার মনস্থ করলো।
মোল্লা জিউন (রহ.) বাদশাহ আলমগীরের দেওয়া সেই চারি আনা পয়সা দিয়ে মাছটি কিনে নিলেন। বাড়িতে পৌঁছে মাছটি তাঁর স্ত্রীর নিকট দিয়ে রান্না করার কথা বললেন। স্ত্রী মাছটি কেটে এর পেটের মধ্যে মুক্তার কতগুলি দানা দেখতে পেলেন, যা চকচক করছিল। এতে আশ্চর্যান্বিত হয়ে তার স্বামী মোল্লা জিউন (রহ.) ডেকে আনলেন এবং তা দেখালেন। তিনিও দেখে বিস্মিত হলেন। এটা কোন জিনিস তা পরীক্ষা করার জন্যে মোল্লা জিউন তা বাজারে নিয়ে গেলেন। জহুরীকে দেখালেন, জহুরী চিনতে পারল যে তা মূল্যবান মুক্তা দানা। সে বলল, হুজুর যদি আপনি তা বিক্রয় করেন, তবে আমি তা একশত দিনার মূল্যে কিনতে পারি। তিনি একশত দিনার দিয়েই তা বিক্রয় করলেন এবং ঐ দিনারগুলো দিয়েই পরম স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে তাঁর কন্যা বিবাহের কাজ সমাধা করলেন। তারপর একদিন বাকি দিনারগুলো নিয়ে তাঁর শিষ্য বাদশাহ আলমগীরের দরবারে গেলেন এবং তা তাঁর হাতে দিয়ে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করলেন। বাদশাহ ঘটনা শুনে সন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, হে আমার প্রিয় উস্তাদ! এ মুক্তাগুলো আপনি আমার হাতে দিলেন কেন? এগুলোর মালিক তো আপনি। তাতে আমার কোনো অধিকার নেই। তবে এরূপ ঘটনার কারণ কি বলতে পারেন হুজুর? আমার তো মনে হয় হালাল মালের বরকত। আপনার মনে হয়ত প্রশ্ন জেগে ছিল মাত্র চারি আনা পয়সা আমি আপনাকে দিয়েছিলাম কেন? আমার রাজ্য কোষাগার হতে যথোপযুক্ত টাকা দিলাম না কেন? কিন্তু হুজুর! যেই কোষাগারের অর্থ আমি আমার নিজের জন্য পছন্দ করি না, আপনি আমার উস্তাদ হিসেবে আপনার জন্যও তা গ্রহণ করা পছন্দ করি না। উক্ত ঘটনাটি বাদশাহ আলমগীরের খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতারই প্রমাণ বহন করে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী’র ভূমিকা)
৬৯. হজরত আবু হুরায়রা (রাদ্বি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (পূর্ব জামানায়) এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তি থেকে একখণ্ড জমি ক্রয় করলেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি যিনি জমিটি ক্রয় করেছেন-তিনি উক্ত জমির মধ্যে স্বর্ণের একটি কলসী পেলেন। যার মধ্যে স্বর্ণ (ভরা) রয়েছে। তখন সেই ব্যক্তি যিনি জমি ক্রয় করেছেন সেই জমি বিক্রেতাকে বললেন, আপনি আমার থেকে আপনার স্বর্ণভরা কলসী নিয়ে যান। আমি আপনার কাছ থেকে শুধু জমি ক্রয় করেছি, আপনার থেকে সেই স্বর্ণ ক্রয় করিনি।
তখন ঐ ব্যক্তি (জমি বিক্রেতা) বললেন, আমি আপনার নিকট জমিটি এবং যা জমির মধ্যে আছে সবই বিক্রয় করেছি। (কিন্তু এ কথা জমির খরিদকারী মানতে চাইলেন না। ফলে তাদের মাঝে এ নিয়ে মতানৈক্য হলো এবং মীমাংসার প্রয়োজন হলো।
এরপর তারা উভয়ে অপর এক ব্যক্তির নিকট মীমাংসার জন্য গেলেন। (তার কাছে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলেন এবং ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা চাইলেন।)
তখন বিচারক বললেন, আপনাদের কি কোনো সন্তান আছে? তাদের একজন বললেন আমার একটি ছেলে আছে এবং অপরজন বললেন, আমার একটি মেয়ে আছে। বিচারক বললেন, সেই ছেলেকে সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দিন এবং উক্ত স্বর্ণের কলস থেকে তাদের দু’জনের ব্যাপারে খরচ করুন। আর অবশিষ্টাংশ (আল্লাহর রাস্তায়) দান করুন। (তখন তারা দুজন উক্ত ফয়সালাকারীর নির্দেশনা মতো কাজ করলেন।) (সহিহ বুখারি)। চলবে

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *