(পূর্ব প্রকাশের পর)
-হুম কথা তো সেটাই তুই আর রাদি এক না। ও যদি তোর মতো হতো তাহলে আমার কোন চিন্তা ছিলো না। জানিস ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই আমার ওকে নিয়ে টেনশন শুরু করতে হয়। আমি আর পারবো না।
-মা ও কি রাজি হবে?
-ওকে বুঝানোর দায়িত্ব তোর। মানার মধ্যে এখন তোকে যা একটু আধটু মানে। তোর বাবা ও দেশে থাকে না দুই দুইটা অবিবাহিত মেয়ে নিয়ে ঘরে আমি একা একা থাকি বলা তো যায় না কখন কি হয়। বিপদের তো আর হাত পা নাই।
-হুম আমি দেখি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফিয়া বললো, ও মা! তোমাদের জামাই নাকি আজ বিকালেই চলে যাবে।
-কি বলছিস কি? এটা হবে না। এতদিন পর এসেছে ছেলেটা আর দুটা দিন না থেকে চলে যাবে।
-মা আমার শশুরের হার্টে রিং বসাতে হবে সেটা নিয়ে নাকি হাসপাতালে কথা বলতে হবে ডাক্তারদের সাথে।
-হুম বুঝছি কিন্তু আজ কোনভাবে যাওয়া হবে না যেতে হলে কাল সকালে তুই ওকে বলে দিস।
আচ্ছা বলে আফিয়া দুকাপ চা নিয়ে রুমের দিকে গেলো।
শাফী বিছানায় শুয়ে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীমের সূরা ফাতিহার তাফসীরের বইটা পড়ছিলো। শুধুমাত্র সূরা ফাতিহার তাফসীরে যে মহামূল্যবান ব্যাখ্যাগুলো আছে শুধুমাত্র এই সূরার মর্মার্থ গুলো মানুষ অনুধাবন করতে পারলেই মানবজীবন পুরোটাই সার্থক হইতো। এই একটি সূরা পুরো কোরআনের ব্যাখ্যাটা অনুধাবন করাতে পারবে। শাফী বইটির অনেক গভীরে ঢুকে গেছে আফিয়া কখন এসে পাশে বসেছে ও টের পায়নি। আফিয়া আস্তে করে বইটা সরিয়ে নিলো। শাফীর মনোযোগ এবার আফিয়ার দিকে গেলো, তুৃমি কখন আসলে?
-সেই অনেকক্ষন হলো। আপনি তো বই পড়ার মধ্যে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন।
-শাফী বললো, আরে চা এনেছো? দাও তো!
-আফিয়া শাফীর হাতে কাপ দিয়ে বললো, জানেন আমার না মাঝে মাঝে খুব হিংসে হয়।
- শাফী চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, হিংসে হয়? কেন বলতো? আর কার উপর?
-আপনার বইয়ের উপর।
-বই কি দোষ করলো?
-বই পড়তে বসলে আপনার অন্য কোন দিকে খেয়াল থাকে না। এমনকি আপনার যে একটা বউ আছে তা আপনি ভুলে যান। এই বইকে মাঝে মাঝে আমার সতীন মনে হয়।
-শাফী গগনবিধারী এক হাসি দেয়।
-আফিয়া খানিক রাগতস্বরে বললো, হাসবেন না। সতীন থাকলেও হয়তো এত কষ্ট লাগে না।
-আরে বউটা আমার রাগ করেছে দেখছি। রাগ ভাঙাতে কি করতে হবে শুনি?
-আমি মোটেও রাগ করিনি।
-ও আচ্ছা রাগ করোমি তাহলে তো আমি বেঁচে গেলাম। আফিয়ার কাছ থেকে জবাব না পেয়ে শাফী ওর দিকে তাকালো।
আফিয়াকে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে শাফী বললো, কি হয়েছে, এত চিন্তিত কেনো?
-না তেমন কিছু না।
-যেমন কিছুই হোক আমাকে বলো। তোমাকে চিন্তিত দেখলে আমার আরো বেশি চিন্তা হয়।
-না আসলে ব্যাপারটা রাদিয়াকে নিয়ে।
-কেনো ও আবার কি করেছে?
-কিছু করেনি তবে ওর চলাফেরা গুলো কেমন যেনো হয়ে গেছে। কিছুটা উশৃঙ্খলতা ওর মধ্যে আছে আগে এতটা ছিলো না।
-হুম। তো এখন কি করবে!
-মা চাইছে ওকে বিয়ে দিয়ে দিতে। মার ধারনা বিয়ে হলে কিছুটা হলে ও লাইনে আসবে।
-তোমার কি মত?
-ও মাত্র ইন্টার দিলো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে? আর ও কি রাজি হবে?
-দেখো মার কথা কিছুটা হলে ও যৌক্তিক। এখনো ও হাতের মধ্যে আছে। আজকাল ভার্সিটি গুলোর যা অবস্থা এখন যতটা লাইনে আছে হয়তো এটা ও থাকবে না। তাই সময় থাকতে সৎপাত্রে ওকে বিয়ে দেয়াটা তোমাদের নৈতিক দায়িত্ব আমার মনে হয়।
-এটা আপনি ও বলছেন?
-হুম বলছি। আর তুমি এসব বিষয় নিয়ে কেন এতো চিন্তা করছো আমার বুঝে আসে না। মনে নেই ডাক্তার তোমাকে টেনশন নিতে না করেছে। এমনিতে সবসময় প্রেশার হাই হয়ে থাকে।
-আরে বাদ দেনতো! সব কাজে ডাক্তারি ফলাবেন না। বিরক্ত লাগে। আপনার অতিরিক্ত টেক কেয়ার দেখে মনে হয় দুনিয়াতে আর কারো বাচ্ছা হয় না আমিই প্রথম।
-আফিয়া আমি অতিরিক্ত টেক কেয়ার করছি তোমার মনে হয়?
-আরে অতোটা সিরিয়াস নিচ্ছেন কেনো? আমি তো দুষ্টুমি করে বলেছি।
-এটা দুষ্টুমির কোন কথা নয়। অন্য সবার মতো যদি তোমার স্বাভাবিক ভাবে হতো তাহলে আমার এতো চিন্তা ছিলোনা। ডাক্তার তোমাকে ফুল বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। কিন্তু দেশে আসার পর থেকে কি করছো তুমি? একমিনিট ঠিক করে বসে থেকেছো। আসার পর থেকে টইটই শুরু করে দিয়েছো।
-আপনি এটা একটা কথা বললেন?
-শাফী এক হাতে আফিয়াকে কাছে টেনে, ওরে বাবা আমার পাগলীটা রাগ করেছে? তুমি দুষ্টুমি করতে পারবে আর আমি একটু করলেই তুমি মন খারাপ করবে? আফিয়ার মুখটা তুলে ধরে, দেখিতো আমার বাবুর আম্মুর কি হয়েছে?
-উফ! আপনি না!
-এইতো হেসেছে। আচ্ছা শুনো, আমি কিন্তু বিকালে চলে যাবো মাকে বলেছো তো?
-হুম কিন্তু মা আপনাকে আজ যেতে দেবে না।
-আরে কি বলছো আমাকে যেতেই হবে। কাফী যদি দেশে থাকতো আমার এতো চিন্তা করতে হতো না বাবাকে নিয়ে।
-কেন ভাইয়া আবার কোথায় গেলো?
-ওর অফিসের একটা ট্যুরে আজ সকালে ইন্ডিয়া যেতে হয়েছে।
-ওহ আচ্ছা। কিন্তু মা এতো করে বলছে।
-সম্ভব না গো।
-আফিয়া মন খারাপ করে, একটা রাতেরই তো ব্যাপার এমন করছেন কেনো।
-থাকলে তুমি খুশি হবে?
-সেটাও কি বলে দিতে হবে?
-না বুঝে গেছি।
-থাকবেন তো?
-শাফী মুচকি হেসে বললো, জী আপনি এত করে বলছেন না থেকে কি করবো।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে রাদিয়া এখনো বাসায় ফিরেনি। আফিয়া ড্রয়িংরুমে বসে আছে। এই মেয়ের এত সাহস কি করে হয়? সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাহিরে এভাবে কাটানোর সাহস কোত্থেকে আসে আজ জিজ্ঞেস করতেই হবে। আফিয়া মনে মনে ভাবে আজ কিছু কথা বলতেই হবে এই মেয়েকে।
সাড়ে সাতটার দিকে দরজার বেলটা বেজে উঠলো। আফিয়া সামিহাকে ডেকে বলতেই ও গিয়ে দরজা খুলে দিলো। রাদিয়া ভীরু পায়ে ঘরের ভিতর ডুকলো। বড় বোন বাসায় না থাকলে এত চিন্তা হতোনা। রাদিয়া আসার আগে শাফী উঠে রুমে চলে গেলো। আফিয়া ভয়ংকর রাগী দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রাদিয়া ওখানেই জমে গেলো। রাদিয়া ভালো করে জানে আফিয়া অতিরিক্ত রেগে আছে এখন ও যখন খুব বেশি রেগে যায় তখন ওর চোখমুখ লাল হয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রাদিয়া বুঝতে পারছে আজ কিছু একটা তো হবেই ঘূর্নিঝড় বলো আর সাইক্লোন বা ভূমিকম্প। এ যেন ঝড়ের পূর্বাবাস…
(চলবে) - অঙ্গীকার (১ম পর্ব)