নহে আশরাফ আছে যার শুধু বংশের পরিচয়,
সেই আশরাফ জীবন যাহার পূণ্য কর্মময় ।
ষাড়ের লড়াই নিয়ে ইতিপূর্বে লিখেছি। বেঁচে থাকলে আরো লিখতে হবে। কারণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে বিষয়টি আজ একটি অপসংস্কৃতি। আমাদের প্রাণের ইসলাম ধর্ম মতে এটি একটি পাপকাজ (হারাম) হিসেবে স্বীকৃত। সেটি আবার ঐতিহ্য (!) হয় কিভাবে? গতবছর শুনলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে রুল জারি হয়েছে যে, ‘ষাড়ের লড়াই নিষিদ্ধ’ এবং এর অনুলিপি প্রত্যেক জেলা প্রশাসক-এর কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। এবছর শুনি সেই রুল উহ্য করা হয়েছে এবং ষাড়ের লড়াই আনুষ্ঠানিকভাবে করার জন্য প্রশাসনের অনুমতিসহ সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে! ধন্যবাদ প্রশাসন। যেখানে ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানের অনুমতি (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) চেয়েও পাওয়া যায়না। সেখানে ষাড়ের লড়াইয়ে অনুমতিসহ সহযোগিতা! আর সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনুষ্ঠানের খবর যদি ছাপা হয়, জাতীয় দৈনিক “প্রথম আলো” পত্রিকায়। তাহলে অবাক হওয়ার কিছু আছে কি? না হওয়ার কথাও না। কারণ তারা তো আসলে এরকম একটি বাংলাদেশ চাইছে। গত কয়েকদিন আগে কবি ও কলামিস্ট মাওলানা ছাদিক সিরাজী ‘ষাড়ের লড়াই এবং যাত্রাগান’ নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন ফেইসবুকে। এই লেখাটার কিছু কথা তার লেখা থেকে কপি করেছি। মানুষের আশরাফ (শ্রেষ্ঠ), আফদ্বাল (সর্বোত্তম), আতহার (সর্বপবিত্র), আকরাম (সর্বসম্মানী) হওয়া না হওয়ার বিষয়টা মোটেই জন্ম বা বংশ পরিচয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা তার কর্মের সাথে জড়িত। একটা মানবাকৃতির প্রাণী কেন মনে করে সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি? হাত-পা, পেট-পিট আছে বলে? হাত-পা, পেট-পিট, নাক-কান তো কুকুর এবং শুয়োরেরও আছে! তাহলে মানবাকৃতির প্রাণীরা কেন নিজেকে কুকুর ও শুওরের থেকে নিজেকে আলাদা মনে করে? মানুষকে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সম্মানী বলে ঘোষণা করেছেন, তা কখন? যখন সে তার নিজের পরিচয়টা অন্ততপক্ষে জানে, বুঝে, অনুধাবন করে। তাকে কেন পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। তা যখন সে বুঝে, তার শেষ গন্তব্য কোনটা। তার চুড়ান্ত প্রত্যাবর্তনের রাস্তা কোনদিকে, এসব সমীকরণ যদি সে মিলাতে পারে। তখন সে আশরাফুল মাখলুকাত বা আটারো হাজারের বেশি সৃষ্টিরাজীর মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। প্রায়সময়ই এসব আকৃতিগত মানুষগুলোকে সত্যিকারের বন্য পশুর মতো হয়ে যেতে দেখি। তখন কষ্ট লাগে যে, আল্লাহর এতো পছন্দের সৃষ্টি মানুষ কতটা ইতরের পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে! মানুষ হয়ে দুটি হায়ওয়ানকে সামনা-সামনি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় ষাঁড়ের লড়াই-এর মাঠে। এমন কুকর্ম আয়োজন করা হয়, যা একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে আদিম চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করে শিক্ষা-দীক্ষাকে কলুষিতই শুধু করেনা, বরং মানবিকতার দাবিকে ভুলুন্ঠিত করে। ভাবতেও বড় লজ্জা লাগে যে, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে মানুষ, পশু দিয়ে লাড়াইয়ের আয়োজন করে কিসের আনন্দ
উপভোগ করে? যা পৃথিবীর কোন ধর্মই সমর্থন করেনা। দর্শক-শ্রোতামণ্ডলী বাহবা দিবে, হাত তালি দিবে, লড়াই শেষে বিজয়ী পশুদের মালিক।
মানুষ নামধারী পশুদের হাতে কিছু পুরস্কার দেওয়া হবে, এইতো! বিপরীতে ধ্বংসের অতল গহ্বরে পৌছে যাবে একটি হতভাগা জাতি। কারণ রাজা দোষ করলে যে রাজ্য পুড়ে? মানুষ নামক হিংস্র জানোয়ারদের পাপের বোঝা বইতে হবে গোটা নিরীহ বনী আদমকে। যেভাবে বনি ইসরাইলের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল যে, তোমরা যখন পবিত্র নগরীতে প্রবেশ করবে তখন তোমরা বিনয় ও নম্রতার সহিত ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তারা ক্ষমা না চেয়ে আল্লাহর কথার বিপরীত করে। যার ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি আজাব ও গজব নাজিল করেন। আল্লাহ বলেন- অতঃপর, জালেমরা কথা পাল্টে দিয়েছে, যা কিছু তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল তা থেকে। তারপর আমি আসমান থেকে যালেমদের উপর আজাব অবতীর্ণ করেছি, আমার নির্দেশ লংঘন করার কারণে। (সুরা বাকারা : আয়াত ৫৯) বনি ইসরাইল যখন মান্না-সালওয়ার পরিবর্তে খাবার চাইলো, তখন আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র নগরীতে প্রবেশের নির্দেশ দেন এবং হিত্তাহ বা ক্ষমা চাইতে বললেন। কিন্তু তারা হিত্তার পরিবর্তে হিনতাহ বললো অর্থাৎ গম চাইলো। যা ছিল আল্লাহর নির্দেশের সরাসরি বরখেলাফ। তাই আল্লাহ তাআলা অত্যাচারীদের উপর একটি আসমানি বিপদ অবতীর্ণ করলেন। কেননা তারা আদেশ অমান্য করেছিল। আজ টাকা আর ক্ষমতার জোরে যারা বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে বজায় রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা কি ভেবে দেখবেন যে, যা দিয়ে বাঙালী জাতির প্রাণ রক্ষা হয়। সেই ভাত এবং মাছের উপর বছরের পর বছর ধরে খোদায়ী গজব কেন? মানুষের মাথার উপর থেকে বিপদের বোঝা দূর হচ্ছে না কেন? বনী ইসরাইলের বিপদের ব্যাখ্যায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ বিপদ ছিল প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব। এ মহামারীর কারণে মাত্র এক ঘণ্টা সময়ে বনি ইসরাইল জাতির ৭০ হাজার লোক মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছিল। এ শাস্তির কারণ ছিল এই যে-
ক) তাদেরকে বলা হয়েছিল বিনীতভাবে নগরে প্রবেশ করতে, কিন্তু তারা গর্বভরে শির উঁচু করে প্রবেশ করেছিল ।
খ) তাদেরকে বলা হয় সিজদারত অবস্থায় প্রবেশ করতে। কিন্তু তারা সেই স্থলে নিতম্বের উপর ভর করে উক্ত নগরে প্রবেশ করে ।
গ) তাদেরকে বলা হয় হিত্তাহ বলতে তারা বলে হিনতাহ।
সুতরাং, আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হলে আল্লাহ তাআলা অবাধ্য জাতির উপর আজাব এবং গজব প্রেরণ করেন। যা আমরা ইতিপূর্বে হাজারবার প্রমাণ পেয়েছি।