আমার ভাষা আমার অহংকার! (প্রচ্ছদ প্রতিবেদন)

মাতৃভাষা! আহামরি বাঙলা ভাষা!
মাতৃভাষা মহান আল্লাহ তাআলার মহাদান! বাঙালি জাতির জন্য সেরা দান। মনের ভাব আদান-প্রদান করার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে দান করেছেন ভাব বিনিময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম মানবভাষা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেই তাকে ভাব প্রকাশের জন্যে ভাষা শিখিয়েছেন। কুরআনে বর্ণিত “দয়াময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করার বর্ণনা।
(সূরা আর-রহমান)
আমাদের মাতৃভাষা বাঙলা।
প্রত্যেক ভাষার মূল দুটি রূপ থাকে।
যা কথার মাধ্যমে আমরা ভাষায় প্রকাশ করি। আবার লিখনীর মাধ্যমেও আমাদের নিত্যদিনের সব ধরনের যোগাযোগ, সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনাতিপাত করে থাকি।
এজন্যে আমাদের জীবনে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
ভাষার মাঝে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। কেননা গোষ্ঠী, জাতি ও অঞ্চলভেদে মানুষের ভাষার ভেতরে পরিলক্ষিত হয় অনেক ব্যবধান। একেক দেশের ভাষা একেক রকম। হরেক রকমের ভাষায় রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষার স্বকীয়তা। আরো রয়েছে মাধুর্যতা। বিভিন্ন এলাকায় ও অঞ্চলে একেক ভাষার প্রচলন। স্থানীয় ও স্বজাতির ভাষার সঙ্গে মানুষের থাকে এক সম্পূর্ণ ঘনিষ্ট সম্পর্ক।
যা নিবিড়তম এবং স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে। একজন মানুষ ভুমিষ্ট হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজের থেকেই মানুষ নিজের স্বগোত্রের ভাষায় দীক্ষিত ও অভ্যস্থ হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে ঐ স্বগোত্রীয়ো ভাষায় মনের একান্ত ভাব আলাপচারিতায় প্রকাশ করতে সবচে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। শুধু নিজের মনের ভাব নয়, অন্যের মনের ভাব বুঝার ক্ষেত্রেও নিজের ভাষার কোনো তুলনা নেই।
এজন্যেই প্রতিটি মানুষ তার সেই ভাষার কাছে দায়বদ্ধ! কেননা মহান আল্লাহ তাকে সেই ভাষার ওপর সৃষ্টি করেছেন।
সেই স্বগোত্রীয় মাতৃভাষাকে, ভাষার যথার্থ সম্মান-মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার নিমিত্তে একঝাঁক বাঙালি তরুণকে প্রাণ বিসির্জন দিতে হয়েছে।
পেশীশক্তি আর ক্ষমতার জোরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা কেড়ে নিতে চেয়েছিলো আমাদের মাতৃভাষা বাঙলাকে। তারা জোরপূর্বক আমাদের উপর উর্দুভাষাকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো।

তারা কি জানতো না যে ভাষা একটি মহান আল্লাহর নিয়ামত। যা মানবজাতির একান্ত স্বভাবজাত ও স্বতঃফূর্ত বিষয়। ভাষা চাপিয়ে দেওয়া আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের মধ্যে বলপ্রয়োগ করা। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতত্ত্বের ওপর বিপরীত রেখাপাত করা হয়।
কিন্তু তাদের এই অন্যায় অহংকার, আর একপেশে স্বৈরাচার মেনে মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে রাজী ছিলাম না।
আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের এ আদেশ মেনে নেয়নি বরং তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের বুককে টান করে রাজপথে নেমেছে। মাতৃভাষা বাঙলাকে তার নিজস্ব স্বকীয়তা অক্ষুণœ রাখতে, নিজের ভাষার ওপর অযোক্তিক আগ্রাসন মেনে না নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলো।
আন্দোলন করেছে বায়ান্নোতে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে নিজেদের বুককে বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা করে দিয়েছে এদেশের অনেক টগবগে বাঙালী তরুণ।
বুলেটের আঘাতে তাদের জীবনপ্রদীপ নিভে গেলেও সমুন্নত হয়েছে বাঙালি জাতির গৌরব। রচিত হয়েছে বেদনাদায়ক ইতিহাস। ভাষার জন্যে নিজের জীবনকে সপে দিয়েছে আব্দুস সালাম, বরকত, শহিদ, আব্দুল জব্বার আরো অনেকেই!
তারা তাদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ভাসিয়ে দিয়েছে। তাদের এ আন্দোলন ছিলো বাঙলা ভাষার স্বপক্ষে অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করার সেরা আন্দোলন, জীবনের চেয়েও সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার এক অদম্যসাহসী আন্দোলন। এ সত্য আন্দোলনকে স্বযতেœ লালন করাই আমাদের কর্তব্য! আমাদের সকলের দায়িত্ব।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তাঁদের স্মরণে আমরা প্রকৃত কোনো কর্ম করছি না যা তাদের রূহের মাগফিরাত হবে। তাদের নামে বিভিন্ন ভাস্কর্য বানিয়ে রেখেছি। তাদেরকে গোনাহের ভাগী বানাচ্ছি। জাহান্নামের অতল গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছি। এ দিনে তাদের নিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতি পালনে নিমগ্ন রয়েছি, যত্তসব ফস্টিনস্টিতে কাটিয়ে দিচ্ছি।
তাদের এ সত্যের আন্দোলন, এই ত্যাগের আমরা অবমাননা করছি।
আসুন। প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্য, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। গান বাজনা করে তাদের রূহে আযাবের কারণ না বনে যাই!
আল্লাহ। তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আমাদেরকে সিরাতে মুস্তাকিমের পথে নিয়ে চলো। সকলকে হিদায়াত দাও।
আমিন।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *