লোভের ৪৮০ টাকা

নাঈম। একটি ছেলের নাম। সে খুব গরিব ছিল। লেখাপড়ার খরচটা তার কোনোমতে চলত। যাই হোক, একদিন নাঈম তার স্কুলে বিরতির সময় আক্কাস নামের এক ব্যক্তির দোকানে গিয়ে হালকা নাস্তা করে। নাস্তা করার পর বিল হয় ২০ টাকা। নাঈম দোকানদারকে (আক্কাসকে) পঞ্চাশ টাকার একটি নোট দিল। আক্কাস ৫০ টাকার নোটকে ৫০০ টাকা ভেবে নাঈমকে ৪৮০ টাকা ফিরিয়ে দিল। নাঈম লোভাতুর হয়ে ৪৮০ টাকা নিয়ে চলে গেল।
কেটে গেল অনেক বছর। নাঈম শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। গাড়ি-বাড়ি, ধন-ধৌলত, টাকা-পয়সার অভাব নেই তার। খুবই সুখে-স্বাচ্ছন্দে কাটছিল নাঈমের বিবাহিত জীবন। কিন্তু হঠাৎ একসময় নাঈম তার জীবনের পথচলা থেকে থেমে যায়। দিনরাত তাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখা যায়। মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শহরের অলিতে-গলিতে। মনে হয় কাকে যেন খুঁজতেছে নাঈম। আর সবাইকে জিজ্ঞেস করে, ‘আক্কাস নামের কাউকে চিনেন?’ অনেক চেষ্টা চালিয়ে যায় নাঈম আক্কাসকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। নাঈম প্রায় সময় মনে ভাবত, ‘এখন আমার কোনো কিছুর অভাব নেই, কিন্তু স্কুল জীবনে মাত্র ৪৮০ টাকার লোভে পড়ে আক্কাসকে কত বড় ধোকা দিয়েছি।’ নাঈম মূলত এই চিন্তাই করত যে, আক্কাসকে পেলে তার ৪৮০ টাকা ফিরিয়ে দিবে। একদিন নাঈমের অফিসের এক সহযোগী তাকে আক্কাস নামে একজন ব্যক্তির সন্ধান দিল। কিন্তু নাঈম পেরেশান হয়ে বলল, ‘না, আমি আক্কাসকে আর খুঁজে পাব না, আমার এই লোভ নামের পাপের কোনোদিন ক্ষমা পাব না।’ তখন তার সহযোগী তাকে সন্ধান দেওয়া আক্কাসের একটা ফটো দেখালো, ফটো দেখেই নাঈম চমকে গেল, আর বলতে লাগল, ‘এইতো সেই আক্কাস, তাকেই তো আমি এতদিন খুঁজতেছি।’ অতঃপর নাঈম আক্কাসের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারল, আক্কাস মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তখন নাঈম তার স্কুল জীবনে আক্কাসকে ধোঁকা দেওয়ার ঘটনা বলতে লাগল এবং আক্কাসকে না পেয়ে কাঁদতে লাগল।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *