মিতালির দুই পাখি

মিতালি খুব শৌখিন একটি মেয়ে। পড়ালেখা তাঁর ততটাই খারাপ লাগে যতটা ভালো লাগে পাখিদের সাথে প্রেম করতে। যদিও সে স্কুল পড়ুয়া তবুও তাঁর পছন্দ হলো ইসলামিক জীবনযাপন। এজন্যই শখ করে তাঁর পাখি দুটির নাম দিয়েছে ‘হুজুর এবং হুজুরানি’। পাখি দুটি খাচার ভিতর সারাক্ষণই একসাথে মিশে থাকে। হঠাৎ যদি আলাদা হতে দেখে মিতালি ভাবে বোধ হয় অভিমান করেছে ওরা। মিতালির মনে ভেসে উঠে ওদের কথোপকথন এভাবে,

  • এই যে হুজুর, আমাকে আদর করে ডাক না দিলে খাবো না আজ।
  • ওরে আমার অভিমানী হুজুরানিটা,আমি খেলেই তো তোমার খাওয়া হয়, জানো না বুঝি!
  • হয়েছে হয়েছে, আদর করে ডাক না দিলে সত্যি সত্যি খাবো না।
  • ও আমার মহারাণী গো!
  • এই তো আমার গুড হুজুর!
    মিতালির কাল্পনিক কথোপকথন শেষ হতেই দেখে পাখি দুটি আবার এক হয়ে গেছে। মিতালি আনমনে পাখি দুটির খুনসুটি উপভোগ করে আর কেটে যায় তার বেলা। মিতালি ভাবে, এই হুজুর -হুজুরানি পাখির ভালোবাসা সত্যিই ‘অন্যরকম’। হঠাৎ মিনার হতে আজানের ধ্বনি বেজে উঠল। মিতালির মনে আবারো পাখিদের মধ্যকার কথোপকথন কাল্পনিক হয়ে জাগলো এভাবে যে, হুজুরানি পাখি ঐ হুজুরটাকে বলছে-নামাজে যাও এখন
  • হুম্মম যাচ্ছি
    -এই যে, দিয়ে যাও!
    হুজুর পাখির ঠোট স্পর্শ করল হুজুরানি পাখির কপাল। এ যেন এক অন্যরকম সুখানুভূতি। পাখি দুটির দিকে তাকিয়ে আলতো হাসি দিল মিতালি। এমন ভাবনায় সে পুলকিত হয় সুখানন্দে। মিতালি জানে,পাখি দুটি একে অপরকে কত যে ভালোবাসে! এজন্যই তো একটি আরেকটি কে সারাক্ষণ আগলে রাখে। পাখিদের মধ্যকার এই সীমাহীন, অনন্য, অন্যরকম ‘ভালোবাসা’ মিতালিকে অনেক বেশি অবাক করে।
    হঠাৎ এক রাতে প্রচণ্ড ঝড় আসলো। বারান্দায় থাকা খাচাটাকে লণ্ডভণ্ড করে অনেক দূরে ফেলে দেয় প্রকান্ড ঝড়। পাখি দুটি ঝড়ের কবলে পড়ে একে অন্যকে ছেড়ে হারিয়ে যায়। হয়ত চিরকালের জন্যই!
    ঘুম থেকে উঠে মিতালি যখন দেখল তাঁর ‘হুজুর-হুজুরানি’ বারান্দায় নেই, সাথে সাথেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। মিতালি এখনো কাল্পনিক জগতে পাখিগুলোর সাথে গল্প করে ‘ভালোবাসার’, ‘অভিমানের’। হৃদয়ে বুনে “হুজুর-হুজুরানি’র” হাজারো অন্যরকম ভালোবাসাময় খুনসুটি…!

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *