ভূতুড়ে নাটক

ঘুটঘুটে অন্ধকারে ইয়া মোটা মোটা দু’টি চোখ হঠাৎ জ্বলে উঠলো। চোখে নীল আগুনের হলকা এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন আস্ত গিলে ফেলবে। তিথি ভয়ে কাঁপছে। ঘামতে ঘামতে তাঁর শরীরের পোশাক ভিজে গেছে। সমস্ত রুম পিনপতন নীরব। বাইরে বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে করুন কান্নার বিলাপ। তিথি জোরে শ্বাস প্রশ্বাস ফেলতেও ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। টেবিলের উপর পানির জগ ও গ্লাস রাখা। হাত বাড়িয়ে গ্লাসে পানি ঢালবে সেই শক্তি ও সাহস তাঁর হলো না। এই বুঝি তাঁর প্রাণ বেরিয়ে গেলো। হঠাৎ গায়ের সমস্ত শক্তি একত্র করে সে প্রচণ্ড শব্দে চিৎকার করে বলতে লাগলো – ‘পানি পানি পা..নি।’ তার চিৎকার কেউ শুনতে পেলো না। ঘরে এতো মানুষ থাকতে কেউ তার ডাকে সাড়া দিলো না। তিথি খুব ঘাবড়ে গেলো। সে আবারও চিৎকার দিলো পানি পানি বলে। এবার সে লক্ষ্য করলো কণ্ঠ দিয়ে কোনো শব্দই বাইরে আসছে না। গলাটি কেউ যেন চেপে ধরে রেখেছে। নিজের চিৎকার কেবল নিজেই শুনছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। হাসফাস করতে করতে হাত পা ছুড়তে লাগলো সে। এবার মনে হলো সমস্ত শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। যতো শক্তি দিয়েই হাত পা ছুড়ুক না কেন কোনো কাজে আসছে না। যেন অবশ হয়ে গেছে সমস্ত শরীর।
রাতে একই বিছানায় নিজের বড় আপার সাথে ঘুমায় তিথি। পাশের রুমে থাকেন তার মা-বাবা। তিথির গলার বিকৃত শব্দে ঘুম ভেঙে গেল বড় বোন মিথির। তিথির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন। কেমন গলাকাটা মুরগির মতো চটকাচ্ছে সে। মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে। মিথি চিৎকার দিয়ে বললো- ‘মা, বাবা দেখে যাও তিথি কেমন করছে।’


মিথির ডাকে পাশের রুম থেকে মা বাবা তাড়াতাড়ি চলে এলেন। তিথির অবস্থা দেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেগে উঠলো তিথি। আতঙ্কে সে কাঁপছে। সে এখন সত্যিই জেগে উঠেছে নাকি আগের মতো স্বপ্নে আছে কিছুই মেলাতে পারছে না। ‘কি হয়েছে তিথি, এমন করছিস কেন?’ উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন তিথির মা। সে বাকরুদ্ধ। বড় বড় চোখে ফেলফেল করে সবার প্রতি তাকাচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সে এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না, জেগে উঠেছে নাকি এখনো ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর স্বপ্নে রয়ে গেছে। তার মা আবারও জানতে চাইলেন- ‘কি হয়েছেরে, খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?’ তিথি এবার মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিল। আস্তে ধীরে পানি চাইলো। পানি পান শেষে একটু থেমে বললো- ‘এমন খারাপ স্বপ্ন আমার জীবনে দেখিনি। ভয়ে আমি মরতে বসেছিলাম।’ মিথি একটু ধমকের সুরে বললো- ‘এজন্যে বারবার নিষেধ করি টিভির এসব ভৌতিক নাটক না দেখতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। তাও আবার রাতে একা-একা বসে দেখে।’ এবার তাদের মা আরেকটু বকাঝকা করে বললেন- ‘এই মেয়েটা দিন দিন কী যেন হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত নামাজও পড়তে দেখি না। টিভি আর মোবাইল নিয়ে সব সময় ব্যস্ত আছে।’ অতঃপর তিনি আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তিথির মাথায় ও মুখে ফুঁক দিয়ে বললেন- ‘এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়বি। নামাজ না পড়লে টিভি মোবাইল সব ভেঙে দেবো। ভূতপ্রেতাদি আছর করে নিলে পরে আর সহজে সুস্থ থাকতে পারবে না। একটার পর একটা রোগ লেগেই থাকবে। আগে থেকেই সাবধান হও।’ তিথি ভূত-প্রেতের নাটক দেখলেও ভূতে তার বিশ্বাস নেই। বাস্তবে সে কখনো এসব ঝামেলা মোকাবেলা করেনি। কিন্তু তার পরিবার ঠিকই ভূতে বিশ্বাস করে। সে আজকের স্বপ্নের পর ভূতের বাস্তবতা নিয়ে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। এর সাথে মনে মনে প্রতীক্ষা করলো- কখনো নামাজ ছেড়ে দেবে না। আর মায়ের কাছে কোরআন শরীফ পড়া শিখে নেবে। এতে ভূতপ্রেতাদি তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *