কষ্টি পাথর

সুন্দরী শিক্ষিতা নারী মুক্তি। বিয়ের বয়স হয়ে পার হবার উপক্রম হয়েছে তবুও ভালো পাত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তার পিতামাতার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। সচ্চরিত্র, মেধাবী ছেলে ছাড়া একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ফেলতে চান না তারা। ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর যতেœ কোলেপীঠে করে মানুষ করার পর এমন কারো হাতে সমর্পণ করতে চান না যে কিনা তাদের মেয়েকে অবহেলা করবে। কারণ তারা জানেন প্রতিটি মেয়ে বাবার কাছে রাজকন্যা হলেও স্বামীর কাছে রাজরাণী হতে পারে না; কখনও কখনও কৃতদাসীর মতো আচরণ পেয়ে থাকে যদিও কৃতদাস প্রথা আইন করে বাতিল করা হয়েছে সমাজ থেকে বহু যুগ আগেই তবুও বৈবাহিক জীবনে অনেক নারী বা পুরুষ এই প্রথার বলি হয়ে থাকে সঙ্গী ভালো না হলে। তাই জীবনে ভালো সঙ্গীর গুরুত্ব অপরিসীম যে কিনা তার সঙ্গীর দিকে খেয়াল রাখে আর যার পরশে জীবনে পরিপূর্ণতা আসে।
মুক্তির বান্ধবীদের মধ্যে প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে যায় আর তাদের কারো কারো দুয়েকজন সন্তানও আছে। কিন্তু মুক্তির বিয়ের ফুল ফুটেনি এখনও। পড়াশোনা শেষ করে শহরের একটি নামকরা মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করছে সে। সময়গুলো ছাত্রীদের মাঝে ভালোই কাটে যায় তার। তবুও কেমন যেন এক শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু তার কেন এমন হয় সেটা কাউকে কিছু বলতে পারে না।
স্কুলে পড়াকালীন সময় হতেই তার জন্য বাড়ি-গাড়ি ওয়ালা পাত্রপক্ষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু তখন মুক্তির বাবার একটিই কথা ছিল, ‘মেয়ের বিয়ের বয়স না হলে বিয়ে দেব না। বিয়ের বয়স হোক …উপযুক্ত পাত্র পেলে তবেই আমরা মুক্তিকে বিয়ে দেব।’
মুক্তিকে লেখাপড়া থেকে শুরু করে ধর্ম কর্ম, রান্না বান্না সব কিছুই তারা যতœ করে শিখিয়েছেন। একটি দিনের জন্যও তারা মুক্তিকে একাকী দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে দেননি …সব সময়ই খেয়াল রেখেছেন কারণ এই সমাজে প্রতিটি পরিবারে মেয়েদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে যেকোন ধরণের খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে যা জীবনকে কখনও কখনও অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে আবার কখনও বা জীবনের প্রদীপ একেবারে নিভিয়ে দিতে পারে। তাই তার নিরাপত্তার কথা ভেবে নারী শিক্ষিকা রেখে বাসায় প্রাইভেটে পড়ানো হত অংক, ইংরেজি এবং আরবি আবার প্রাইমারী স্কুলের পর মাধ্যমিকে ভর্তি করানো হয় বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করে হোম ইকনমিক্সে ভর্তি করানো হয়েছিল। বাসায় কোন ছেলে বা পুরুষ মেহমান আসলে ছোটবেলা থেকেই মুক্তির বাবা-মা বিশেষ খেয়াল রেখেছেন যেন মুক্তির সাথে নিভৃতে খোশগল্প করতে না পারে এমনকি তার রুমে একা থাকা অবস্থায় ঢুকতে না পারে। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে একা কোথাও বেড়াতে যেতে দেননি তারা। ছোটবেলায় বিকালে খেলার মাঠে খেলা করলেও মুক্তির মা অদূরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। মুক্তির নানী একটি কথা শিখিয়েছিলেন তার মাকে,
‘সন্তানদের সবসময়ই আগলে রাখবে। কখনও ওদের রেখে দূরে থাকবে না। খুব খেয়াল রাখবে কারণ যে মুরগী তার ছানাদের পাখা দিয়ে আগলে ঢেকে রাখে, সবসময়ই কাছে কাছে থাকে সে মুরগীর ছানাদের কখনও চিলে নিতে পারে না। অথচ যে মুরগী তার ছানাদের রেখে দূরে সরে একা একা ঘুরতে থাকে সে মুরগীর ছানাদের চিলে ছোঁ মেরে নিয়ে খেয়ে ফেলে।’
অবসরে মাঝেমধ্যে মুক্তির বাবা মা তাকে আর তার ছোট দুই ভাইকে নিয়ে একসাথে বেড়াতে যেত, ঘুরে বেড়াত কোন নদীর ধারে অথবা পার্কে বা মেলায় যেভাবে দলবদ্ধভাবে রাজহাঁসেরা ঘুরে বেড়ায়। সবাই একসাথে বসে বাদাম খেত, কখনও কখনও বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে এসে সবাই মজা করে খেত আর খেলা করত বা বসে বসে গল্প করত। এই সময় ব্যাগে করে মুক্তির মা একটি ফুটবল, তিনটি ব্যাট ও একটি কর্ক নিয়ে আসতেন খেলার জন্য।
মুক্তির পরিবার তার দিকে খেয়াল রেখেছেল বলেই আলহামদুলিল্লাহ সে সবসময়ই নিরাপদে খেলাধূলা, লেখাপড়া সবকিছুই করতে পেরেছে। স্কুলের গণ্ডি পার হবার আগেই তার অনেক বান্ধবী প্রেমের দুষ্ট ফাঁদে পা দিয়ে হারিয়ে ফেলে চরিত্রের পবিত্রতা নামক অমূল্য সম্পদ অথচ যাদের মাধ্যমে অপবিত্র হয়ে যাওয়া তাদের সাথে পরবর্তীতে অনেকেরই আর বিয়ে হয়নি। আবার বিয়ে হলেও সুখে ছিল না তাদের কেউ কেউ। কারণ নর্দমার জল মরুভূমির বুকে হেঁটে চলা পথিকের প্রচণ্ড তৃষ্ণার সময় কিঞ্চিৎ পিপাসা মিটালেও তা বদহজম হয়ে যায় যেহেতু তা বিশুদ্ধ জল নয়। বিশুদ্ধ জল পানের মাঝে স্রষ্টার যে রহমত থাকে তা নর্দমার জলপানে থাকে না।
মুক্তির বাবার এক বন্ধুর ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ভালো একটি জব করছে। মাসিক আয় যথেষ্ট ভালো। কিন্তু প্রস্তাব দেওয়া হলেও মুক্তির বাবা রাজি হননি কারণ ছেলেটি নামাজী ছিল না। যে সময় মুক্তির বাবা তার দুই ভাইকে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন সে সময়ে তার বন্ধু নামাজ না পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন আর ঘরে বসে ছেলেটি অবসরে ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত থাকত। এতে তার শরীরও পরিশ্রমের অভাবে দুর্বল হয়ে গেছে যদিও ভালো ভালো খাবার খাওয়ার কারণে যথেষ্ট পুষ্ট মনে হত আবদ্ধ ফার্মের মুরগির মত। মুক্তির বাবা সবসময়ই তার বন্ধুকে নামাজের জন্য মসজিদে ছেলেকে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করলেও তার নাকি সময় থাকত না!
আরেকটি ছেলের প্রস্তাব এসেছিল মুক্তির জন্য যে ছিল একজন সরকারী অফিসার। ছেলেটি দেখতে সুদর্শন থাকলেও তার মাঝে কিছুটা প্রেমরোগ বিদ্যমান ছিল যে কারণে সে কোন মেয়ে দেখলেই তার সাথে প্রেমালাপ করতে চাইত। ছেলেটি মুক্তিকেও পছন্দ করে তবে মুক্তি ছেলের এই ধরণের স্বভাবকে অপছন্দ করে বলে নিষেধ করে দেয়।
এমনই করে নিষেধ হয়ে যায় অনেক ছেলে। মুক্তি যেমন সুন্দরী, শিক্ষিতা, পর্দানশীন, বুদ্ধিমতী, নামাজী মেয়ে তার জন্য তেমনই রাজপুত্র প্রয়োজন যে কিনা তার সাথে মানানসই হবে। মুক্তির বাবা বলেন, ‘পশুর সাবকের পশু হবার জন্য চেষ্টা করতে হয় না কিন্তু মানব সন্তানকে অনেক সাধনা করেই তবে মানুষ হতে হয়। আর বর্তমানের পিতামাতা এতটাই আধুনিক হয়ে গেছেন যে, নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন আর সন্তানদের এমনভাবে ছেড়ে দেন যে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান না করার কারণে প্রায়ই ভ্রান্ত পথের পথিক হয়ে যায় তারা।’
মুক্তির পিতামাতা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মুক্তির জন্য ভালো পাত্র কামনা করতে থাকেন আর সেই সাথে খবর রাখতে থাকেন আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে। যদি কোন প্রস্তাব আসে তাহলে পাত্রপক্ষকে সরাসরি মুক্তিকে দেখানো হয় না। প্রথমে মুক্তির বাবা ছেলের সাথে কথাবার্তা বলেন। এরপর যদি উপযুক্ত মনে করেন তবেই শুধু মুক্তিকে দেখান। একবার এক ছেলে তাকে দেখার সাথে সাথেই আংটি পড়াতে চায়। কিন্তু মুক্তির বাবা রাজি হননি কারণ ছেলেটি ভীষণ অহংকারী টাইপের ছিল। প্রথমে বিষয়টি টের না পেলেও পরবর্তীতে মুক্তিকে দেখতে আসার পর বুঝতে পারেন। ছেলেটির বাবা ছিলেন একজন নামকরা ব্যবসায়ী। টাকা- পয়সা, বাড়ি গাড়ি ইত্যাদির জন্য এক ধরণের অহমিকা ফুটে ওঠে তার কথাবার্তার মাঝে।
মুক্তির বাবা যে অফিসে জব করেন সেখানে সদ্য জয়েন দেয় আকাশ নামের এক ছেলে। তার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হলে আকাশও মুক্তির বাবার সাথে অফিস প্রাঙ্গণে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। এভাবে করেই বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে দু’জনার মধ্যে। একদিন গ্রাম থেকে আকাশের বাবা টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিজেদের পালা মুরগির মাংসের ঝোল, ছোট মাছের চচ্চড়ি ও সাদা ভাত রান্না করে নিয়ে আসেন। মা আকাশের জন্য রেঁধে পাঠিয়েছেন। ছেলে ম্যাচে কী খায় না খায় ঠিকমতো খেতে পারে কিনা সেই চিন্তায় মা ব্যাকুল হয়ে ছেলের জন্য পরম যতেœ নিজের হাতে রেঁধেছেন। অফিসের গেস্ট রুমে তাকে বসতে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আকাশ বেরিয়ে আসে কাজ কিছুটা গুছিয়ে। মুক্তির বাবা বিষয়টি টের পেয়ে একজন কর্মচারীকে তাকে ফলো করার জন্য বলেন। আকাশ তার বাবাকে অফিসের অতিথি কক্ষে বসা দেখে একটু রাগান্বিত হয়ে বলে, ‘আপনি এখানে আসছেন কেন? আমি তো কয়েকদিন পরেই বাড়ি যেতাম। এখানে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না? এমন পুরানো পোশাকে আমার আব্বা থাকেন এটা জানতে পারলে তো আমার চাকরিই থাকবে না। এখানে সবই বড়লোকের ছেলেরা চাকরি করে। আপনি চলে যান।’
কথাগুলো শুনে চোখের জল মুছতে মুছতে টিফিন ক্যারিয়ার একপাশে রেখে আকাশের বাবা বের হয়ে যান অতিথি কক্ষ থেকে। আড়ালে লুকিয়ে থেকে এসব দেখে মুক্তির বাবাকে জানান বিশ্বস্ত সেই কর্মচারীটি। মুক্তির বাবা বলেন, ‘যেসব সন্তান তাদের ভালো অবস্থানে আসার পর পিতামাতাকে অসম্মানিত করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তাদের নামাজ, রোজা সহ যাবতীয় সৎকর্ম ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলো কোন কাজে আসবে না। যারা অবস্থার পরিবর্তন হলেও আগের অবস্থাকে অস্বীকার করে না বরং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে তারাই প্রকৃত মানুষ।’


মুক্তির বাবা আকাশকে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন। প্রায় ছয়মাস ধরে তাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন যার সবগুলোতে পাস করলেও শেষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার কারণে আকাশকেও বাতিল করে দেন মুক্তির বাবা তার বর হিসেবে নির্বাচনের জন্য। মুক্তির বাবার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। আবার আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন সুপাত্রের জন্য।
মুক্তির মনটা ইদানীং খুব বিমর্ষ থাকে। সে তার অবসর সময়গুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা ভাবনা করে। এমতাবস্থায় সে তার একজন বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারে তাদের এলাকার মসজিদে নারীদের কোরআন হেফজ করার জন্য একটি বিশেষ মিশন চালু করা হয়েছে যেখানে নারী হাফেজাদের তত্ত্বাবধানে হাফেজে কোরআন হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুক্তি পবিত্র কোরআন পড়তে পারে আর ছোট ছোট কিছু সূরাও তার মুখস্থ আছে বটে কিন্তু বড় সূরাগুলো মুখস্থ নেই। সে জানে যে কোরআনের হাফেজদের অনেক মর্যাদা। বেশ কিছু হাদিস ও কোরআনের আয়াত তাকে এই কাজে উৎসাহিত করে তোলে। যেমন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত এক হাদিস রয়েছে যেখানে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কুরআন মজিদে দক্ষ ব্যক্তি (আখেরাতে) সম্মানিত নেককার লিপিকার ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। যে ব্যক্তি ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে কুরআন পড়ে সে দু’টি পুরষ্কার পাবে। আবার আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণীত আরেক হাদিস পড়েও সে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে যেখানে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কোরআনের বাহককে জান্নাতে প্রবেশকালে বলা হবে, তুমি পাঠ করতে থাক এবং উপরে আরোহণ করতে থাক। অতঃপর সে পড়তে থাকবে এবং প্রতিটি আয়াত পড়ার সাথে সাথে একটি স্তর অতিক্রম করবে। এভাবে সে তার জ্ঞাত শেষ আয়াতটি পর্যন্ত পড়বে।’ কাজেই তার বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায় যে, যারা হাফেজে কোরআন ও তদনুসারে আমলকারী তারা পরকালে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করবে। তাই মুক্তি সিদ্ধান্ত নেয় যতদিনই লাগুক না কেন সে হাফেজে কোরআন হবে ইনশাআল্লাহ্। যেমন কথা তেমন কাজ। হাজির হয় মসজিদে গিয়ে। সেখানে প্রতিদিন বিকালে এক ঘন্টা করে কোরআন শরীফ অর্থ জেনে মুখস্থ করতে থাকে। সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে সেখানে অনেক বয়স্ক নারীরাও গিয়েছে আর খুব আগ্রহ নিয়ে শেখার চেষ্টা করছে। সে তাদের সহযোগিতা করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি সবার মন জয় করে নেয় বিশেষত বয়স্ক মহিলাদের। তাদের ভিতরে একজন বয়স্ক নারী মুক্তির দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকেন। একদিন কথাচ্ছলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় এত ভালো মেয়ে থাকতে এতদিন কিনা আমরা মেয়েই খুঁজে পাচ্ছিলাম না! নিশ্চয়ই আমার ছেলে তোমাকে দেখে পছন্দ না করে পারবে না।’
মুক্তি লজ্জায় মাথা অবনত করে ফেলে লজ্জাপতি লতার মতো। মুক্তির বাবার ফোন নম্বর নিয়ে যান তিনি। নিজের ছেলের সম্পর্কেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, ‘আমার ছেলে রাজ্য মাশাআল্লাহ অনেক ভালো। বর্তমান যুগের ছেলেদের মতো নয়। ও আমাদের দিকে খুব খেয়াল রাখে। নিজের চেম্বারে যাবার পথে আমাকে গাড়িতে করে এখানে নামিয়ে দিয়ে যায়।’
পরদিন দূর থেকে মুক্তি লক্ষ্য করে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ধরে মাকে নিয়ে মসজিদের দরজায় পৌঁছে দিয়ে রাজ্য চলে যাচ্ছে। রাজ্যকে দেখে মুক্তির মনে হল যেন সারাটি জীবন তাকেই খুঁজেছে সে। এই তার স্বপ্নপুরুষ যার প্রতিক্ষাতে সে এতকাল অপেক্ষায় ছিল উদাসিনী হয়ে। মায়ের কাছে মুক্তির ছবি দেখে আর গল্প শুনে রাজ্যও তাকে বেশ পছন্দ করে ফেলে। কিন্তু মুক্তির বাবার কষ্টি পাথরে যাচাই না করা পর্যন্ত কোন কিছুই যে ফাইনাল নয় এটা মুক্তির অজানা নয়। মুক্তি মনে মনে দোয়া করতে থাকে যেন রাজ্য তার বাবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে।
মুক্তির ছোট চাচা তার বাবার পরামর্শমতো এক সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাজির হন রাজ্যের চেম্বারে। সেখানে গিয়ে সত্যিই অবাক হয়ে যান তিনি। বিভিন্ন ডাক্তারি বইয়ের একপাশে সাজানো ছিল পবিত্র কোরআন শরীফ আর তার চেম্বারে বড় করে লেখা ছিল ‘ফী দিতে সমস্যা হলে ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না’। রাজ্যের ব্যবহারে মুক্তির চাচা সত্যি মুগ্ধ হয়ে যান। অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষে তাদের বিয়ের সানাই বাজতে থাকে।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *