উত্তম কে?

(গত সংখ্যা প্রকাশের পর)
নৌকায় থাকাবস্বায়ই খিজির (আ.) একটি কুড়াল নিয়ে নৌকার একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আ.) অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, খিজির (আ.) কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন-‘আপনি একি করলেন? নৌকার মালিক বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলো, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন।’ খিযির (আ.) বললেন-‘আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না।’ মূসা (আ.) বললেন-‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে দয়াকরে আমার প্রতি কঠোর হবেন না।’
অতঃপর তাঁরা যখন সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা এক বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলায় রতো ছিল। খিযির (আ.) তরবারি দিয়ে ছেলেটির মাথা দেহ হতে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মুসা (আ.) বললেন-‘আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন।’ খিজির (আ.) বললেন-‘আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না।’ মূসা (আ.) বললেন-‘এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করি তাহলে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না। এবারের মতো দয়া করুন।

অতঃপর উভয়ে আবার চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদবাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।

২.
সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। হযরত খিযির (আ.) প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন। হযরত মুসা (আ.) বললেন-‘এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম। তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অথচ আপনি এদের দেয়াল সুন্দরভাবে নির্মাণ করে দিলেন। আপনি-তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।’ হযরত খিযির বললেন-‘এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। এতোক্ষণে যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য এখন বলে দিচ্ছি।’
‘…নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটিকে কেড়ে নিতে রাজার লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত নৌকা দেখে আর নিলো না। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নেবে। আর বালকটি সূচনা লগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা-মায়ের বড়ই আদরের সন্তান । আমি দেখলাম যে, এই বালকটি বড় হয়ে অবাধ্যতা ও কুফরি দ্বারা পিতা-মাতাকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে তার চেয়ে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুন। আর প্রাচীরের ব্যাপার এই যে, সেটি ছিল নগরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আমাদের পালনকর্তা দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ হয়ে নিজেদের গুপ্তধন ফিরে পাক। আমি নিজ ইচ্ছায় এসব করিনি, আপনি যে বিষয়গুলোতে ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, এই হল তার ব্যাখ্যা।’
বাস্তব গল্পটি বলা শেষ হলে মাওলানা জুবায়ের আহমদ সবার কাছে জানতে চাইলেন-“এবার সবাই বলোতো দেখি, হযরত মুসা (আ.) এবং হযরত খিজির (আ.) এ দু’জনের মধ্যে কে অধিক জ্ঞানী ও উত্তম”’ শিক্ষার্থীরা সমস্বরে উত্তর দিলো-“দু’জনই জ্ঞানী ও উত্তম। তবে সব জ্ঞানের উৎস আল্লাহ তায়ালা। তিনি যাকে যে বিষয়ে ইচ্ছা গভীর জ্ঞান দান করেন এবং উত্তম ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করেন।” মাওলানা জুবায়ের আহমদ তাদের উত্তরে সন্তুষ প্রকাশ করে বললেন-‘জ্ঞানী ও উত্তম ব্যক্তি সঠিকভাবে নির্বাচন করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। তবে কেউ নিজেকে বেশি জ্ঞানী ভাবা কখনো উচিত নয়। এতে মনের ভেতর অহংকার বাসা বেঁধে গোপনে সব পুণ্য বিনাশ করে দেবে। সব সময় অন্যকে বেশী জ্ঞানী ও উত্তম ব্যক্তি ধারনা নিয়ে চলা প্রয়োজন। ফলে আল্লাহর কাছে উত্তম ব্যক্তি হিসেবে তুমিই নির্বাচিত হয়ে যেতে পারো।’

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *