ধৈর্যশীল বিস্ময়কর রোগীর চমকপদ কাহিনী

মহান আল্লাহ তাআলার এমন অনেক ধৈর্যশীল বান্দা এই পৃথিবীতে ছিলেন, যারা মুসিবতকে এমন ভাবে আলিঙ্গন করেছেন, মহান আল্লাহ তাআলার কাছে ঐ সমস্ত মুসিবত দূরীভূত হওয়ার জন্য দুআ করাকেও তাসলীম ও রিয়া (আল্লাহর সন্তুষ্টি) স্তরের বিপরীত মনে করে জান্নাতী হয়েছেন।
এমনই দুটি বিস্ময়কর রোগীর চমকপদ ঘটনা পাঠকদের খেদমতে প্রেরণ করা হলো।
এক. হযরত সাইয়্যেদুনা ইউনুস আলাইহিস-সালাম হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম কে বললেন, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আবিদ (অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতকারী) কে দেখতে চাই। হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম হযরত সাইয়্যেদুনা ইউনুস আলাইহিস-সালাম কে এমন এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে গেলেন যার হাত-পা গুলো কুষ্ট রোগের কারণে গলে ঝরে পৃথক হয়ে গেছে। আর তিনি মুখে বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা করেছো, এই অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আমাকে ফায়দা দান করেছো আর যখন ইচ্ছা নিয়ে নিয়েছো এবং আমার আশা শুধু তোমার সত্ত্বায় অবশিষ্ট রেখেছ। হে আমার সৃষ্টিকর্তা! আমার মাকসুদতো শুধু তুমি আর তুমিই।
হযরত সাইয়্যেদুনা ইউনুস আলাইহিস-সালাম বললেন, হে জিবরাঈল আমীন (আলাইহিস-সালাম)! আমি আপনাকে নামাজী, রোজাদার মানুষ দেখাতে বলেছি। হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম জবাবে বললেন, এ মুসিবতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ইনি এমনই ছিলেন। এখন আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে, তাঁর চক্ষুদয় যেন উঠিয়ে নেই। তখন হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম ইশারা করতেই তাঁর চক্ষুদ্বয় বের হয়ে গেলো। কিন্তু তখনও আবিদ লোকটির মুখ থেকে বের হয়ে এলো, ইয়া আল্লাহ! যত দিন তুমি ইচ্ছা করেছো, এ চোখের মাধ্যমে আমাকে ফায়দা দান করেছো আর যখন ইচ্ছা করেছো এগুলো ফিরিয়ে নিয়েছো। হে আল্লাহ! আমার আশার স্থল শুধুমাত্র আপন সত্ত্বাকে রেখেছি। সুতরাং আমার উদ্দেশ্যতো তুমি আর তুমিই।
হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম আবিদ লোকটিকে বললেন, এসো আমি আর তুমি একত্রে মিলে দুআ করি। আল্লাহ তাআলা তোমাকে পরিপূর্ণ সুস্থ্য করে দিন আর তুমি আগের মতো ইবাদত করতে পারো। আবিদ লোকটি বললো, কখনো না। হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম জিজ্ঞেস করলেন, কেন দুআ করতে চান না? জবাবে তিনি বললেন, যখন আমার আল্লাহ তাআলা এর সন্তুষ্টি এরই মধ্যে রয়েছে তাহলে আমি সুস্থ্যতা চাই না।
হযরত সাইয়্যেদুনা ইউনুস আলাইহিস-সালাম বললেন, সত্যিই আমি এর চেয়ে বড় আবিদ অন্য কাউকে কখনো দেখিনি। হযরত জিবরাঈল আমীন আলাইহিস-সালাম বললেন, এটা ঐ পথ, আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য এ থেকে উত্তম কোনো রাস্তা আর নেই। (রাউজুর রিয়াহীন, পৃষ্ঠা ১৫৫; ফয়জানে সুন্নাত, ২য় খন্ড, আদাবে তুআন, পৃষ্ঠা ১৬৩)
দুই. আতা বিন আবি রাবাহ রহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের একজন নারীকে দেখাবো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এই কালো মহিলাটিকে দেখ। একদিন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর দরবারে এসে বললো, আমার মৃগী রোগ আছে এবং অজ্ঞান অবস্থায় আমার গায়ে কোনো কাপড় থাকে না। দয়া করে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যদি চাও এই রোগের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে তাহলে এটা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবো। মহিলাটি বললো, তাহলে আমি এই রোগের ব্যাপারে ধৈর্য ধরবো। কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায় আমার গায়ে কোনো কাপড় থাকে না। আমার জন্য দু’আ করুন, যাতে এরুপ না হয়। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম দু’আ করলেন। (বুখারী, ৭ম খন্ড, হাদিস নং ৫৫৫)
সম্মানিত পাঠক! একবার চিন্তা করুন। ধৈর্যধারণকারী হলে এমনই হওয়া উচিত। তারা এতটা মুসিবতের পরও ধৈর্যশীলতার অনু পরিমানও পার্থক্য আসলো না। মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হলেন। তারা মহান আল্লাহ তাআলার কাছে আরোগ্য প্রত্যাশা করার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন না। আল্লাহ তাআলা যখন অসুস্থ রাখতে পছন্দ করেন, তাই আমরা সুস্থ্য হতে চাই না। (সুবহানআল্লাহ)
আমাদের স্বরণ রাখতে হবে! মুসিবত, বিপদ আপদ অনেক সময় মু’মিনদের জন্য রহমত হয়ে আসে। আর ধৈর্য ধারণ করে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্ববস্থায় ধৈর্যধারণ করার ও ফেতনার এ যামানায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শে চলার এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

Comments

comments

About

Check Also

কারবালার শিক্ষা

শাফীর বয়স বারো পেরুলো। ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা ওকে সব সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *