ঈমানের স্বাদ মোছা যায় না

মাআলিমুত তানযিল কিতাবে বর্ণিত আছে, মাশেতা নামক একজন মহিলা ফেরাউন কন্যার চুল আঁচড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিলো। একদিন ফেরাউনের কন্যার চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুণিটি হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়। তা উঠাতে যেয়ে তার মুখ থেকে বের হয়ে গেল, হে খোদা! তোমাকে অমান্যকারী ধ্বংস হোক। এ কথা শুনে ফেরাউনের কন্যা জিজ্ঞেস করলো, ফেরাউন ছাড়াও তোমার কোনো খোদা আছে নাকি? দাসী জবাবে বললো, আমার খোদা সেই খোদা যে ফেরাউনেরও খোদা। শুধু ফেরাউনের নয় আসমান জমিনেরও খোদা। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। একথা শুনে সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে পিতার কাছে গিয়ে বললো, আব্বা আমার চুল বিন্যাসকারিণী বলে, আমার খোদা সেই খোদা যে ফেরাউনেরও খোদা, আসমান জমিনেরও খোদা। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। ফেরাউন বললো, তাকে এক্ষুণি হাজির করো। সাথে সাথে তাকে হাজির করা হলো। সেও নির্ভয়ে হাজির হলো।
আজ তার আল্লাহ’র প্রতি ভালোবাসার ঈমানী পরীক্ষার দিন। এতে প্রাণ দিতে হলেও দিবে। তার ভালোবাসায় যদি জীবন দেয়া যায় তবেই তো ধন্য। ফেরাউন জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো? সে বললো, হ্যাঁ। ফেরাউন বললো, সে খোদাকে ছেড়ে এখনই আমার সামনে আমার খোদায়ী স্বীকার কর। মাসেতা বললো, কিয়ামত পর্যন্ত তা আমারা দ্বারা সম্ভব হবে না। নির্দেশ দেয়া হলো, তাকে পেরেক মার।

তৎক্ষণাৎ তাকে শুইয়ে হাতে ও পায়ে পেরেক মারা হলো। বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু এনে তার উপর ছেড়ে দেয়া হলো। বলা হলো, এখনও সময় আছে তোমার খোদাকে ছাড় নতুবা ২ মাস পর্যন্ত তোমাকে লাগাতার এ শাস্তি দেওয়া হবে। মাশেতা বললো, তুমি আমাকে দুই মাসের শাস্তির ভয় দেখাচ্ছো ৭০ মাস পর্যন্ত আমাকে শাস্তি দিয়ে দেখ, আল্লাহ’র ভালোবাসা এক বিন্দুও কমবে না, বরং বাড়বে। হে ফেরাউন শুনে রাখ, তুমি যদি বছরের পর বছর আমাকে শাস্তি দিতে থাকো তবুও আমি আমার মহান প্রভুকে পরিহার করবো না। এ নেক মহিলার দু’টি সন্তান ছিলো। একটি পাঁচ বছরের, আরেকটি দুগ্ধপোষ্য। ফেরাউন উভয় সন্তানকে তার মায়ের সামনে এনে প্রথমে বড় সন্তানকে মায়ের বুকের উপর রেখে জবাই করলো। তারপর বললো, এখনও সুযোগ আছে না হয় তোমার দুগ্ধপোষ্য এ শিশুটিকেও হত্যা করা হবে। মাশেতা বললো, যদি তুমি সমগ্র পৃথিবীকে আমার বুকের উপর এনে জবাই কর তবুও আমি আমার প্রিয়তম খোদাকে ভুলতে পারবো না। একথা শুনে হুকুম দেয়া হলো, এ শিশুটিকেও তার ভুকের উপর রেখে জবাই করো। ওই শিশু সন্তান যে বুকের উপর চড়ে দুধ পান করতো আজ সেখানে রেখে তাকে জবাই করা হবে এ অবস্থা দেখে মায়ের চোখে পানি এলো। ৬ মাসের এ শিশুর মুখ থেকে তখন বের হলো, মা কেন কাঁদো? জান্নাত তোমার জন্য সুসজ্জিত করা হচ্ছে। মা জান্নাতে পৌঁছে খোদার দীদার হাসিল হবে। এখনো কথা বলতে পারে না এমন শিশুর মুখ থেকে একথা শুনে মা অবাক হলেন। তাঁর ঈমান আরো মজবুত হলো। জালিমরা শিশুটিকে হত্যা করলো। মা প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চির জান্নাত বাসিনী হলেন।
তাফসিরে দুররে মানসুরে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মেরাজে যাচ্ছিলেন, বোরাক মিসরের কাছাকাছি এসে ময়দানে পৌঁছল, তখন জান্নাতের খুশবু তিনি অনুভব করলেন। বললেন, খুব সুন্দর সুঘ্রাণ পাচ্ছি, মনে হয় এটা জান্নাতের সুঘ্রাণ। জিবরাইল বললেন, জান্নাততো অনেক দূরে। মনে হয় ফেরাউন কন্যার কেশ বিন্যাসকারিণী মহিলা মাশেতার কবর থেকে এ সুঘ্রাণ আসছে।

Comments

comments

About

Check Also

কারবালার শিক্ষা

শাফীর বয়স বারো পেরুলো। ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা ওকে সব সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের …

One comment

  1. Nice story

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *