ইলিশের বাড়ি মোহনপুর চাঁদপুরে একদিন

কী আনন্দ, আকাশে, বাতাসে!
কার না মন চায় বেড়াতে?
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং কোনো এক বিশেষ কারণে ঢাকায় ছোট আপুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। তখন কিন্তু বাংলা একাডেমীর উদ্যেগে একুশে বইমেলা চলছিল। অনেক আগে বইমেলায় গেলেও বেশ কয়েক বছর যাওয়া হয় নি। ঢাকায় গিয়েছি বইমেলাতে না গেলে কি হয়? বইমেলায় গিয়েছি, চারদিকে ঘুরেছি, বই কিনেছি সাথে সেলফিও তুলেছি। যাই হোক নিজের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে যখন বাড়ি ফিরব তখনই দুলাভাই জানায় আমাকে তাদের সাথে মোহনপুর, চাঁদপুর লঞ্চ ভ্রমণে বেড়াতে যেতে হবে। যদিও প্রথমে না বলেছি, ভাগিনী সামিহা ভাগিনা ত্বোহা’র জোড়াজোড়িতে শেষ পর্যন্ত যেতে বাধ্য হলাম। আদরের ছোট ভাগিনা তালহা কিছু বলতে না পারলেও বুঝতে পেরেছে আমি তাদের সাথে যাচ্ছি। তার আনন্দ ছিল সব চাইতে বেশি। আমি পরে জানতে পারলাম আপুদের বিল্ডিং শান্তিনগর আইডিয়া পয়েন্ট এসোসিয়েশন’র উদ্যেগে এই আয়োজন।
যদিও পূর্বে ছোট লঞ্চে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও বড় লঞ্চে ভ্রমণ করার তেমন সুযোগ হয়নি। ঈদ ও কুরবানীতে দেখতাম লঞ্চে মানুষদের উপড়ে পড়া ভীড়। সেই জন্য হয়ত আগ্রহটা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঔ মুহুর্তে লঞ্চ ভ্রমণটা ছিল আমার জন্য একটা আনন্দের নাম, উচ্ছ্বাসের নাম, একটা হঠাৎ পাওয়া ভালবাসার নাম।
দিনটা ছিল ১৬ ফেব্র“য়ারি ২০১৮ ইং, রোজ শুক্রবার। আগের রাতে তেমন ঘুমাতে পারি নি। শুধু সকালের আলোর অপেক্ষায় ছিলাম। সেদিন সকালে খুব ভোরে উঠে নামাজ ও গোসল সেরে নিলাম। সাথে হালকা নাস্তাও।
নাস্তা করার পর বিল্ডিং এর নিচে সবার উপস্থিতির অপেক্ষা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর সবাই একত্রিত হওয়ার পর সবাই বাসে উঠলাম এবং সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক পর সদর ঘাটে পৌঁছি। এক এক করে সবাই লঞ্চে উঠি। নিজেদের ব্যাগ কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য এবং বিশ্রাম করার জন্য সব ফ্যামিলিকে একটি করে কেবিন দেয়া হয়। বড় ফ্যামিলির জন্য দুই সিট বিশিষ্ট ছোট ফ্যামিলির জন্য এক সিট বিশিষ্ট কেবিন বন্ঠন করা হয়। আমাদেরকে বড় কেবিন দেয়া হয়। লঞ্চ ভ্রমণে কিসের আবার বিশ্রাম? লঞ্চে সবাই নিজেদের মত কিংবা গ্র“প হয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আমিও কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিছুক্ষণ পর সবাইকে সকালের নাস্তা করার জন্য ডাকা হলো। ইতিমধ্যে লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে। যাই হোক সকালে পরাটা ও ডাল-ভাজি দিয়ে নাস্তা পরিবেশন করা হয়। সবাই নাস্তা করার পর নিজেদের মধ্যে পরিচিত হই এবং আড্ডায় মেতে উঠি। লঞ্চ ভ্রমণে পুরোটাই ছিলো গান, কৌতুক, প্যারোডী গান এবং শেষ বিকেলে মেয়েদের বালিশ খেলা ও র ্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হয়। লঞ্চ ভ্রমণ যাওয়ার সময় পানির উপর রৌদ্রের ঝিলমিল ও অতিথি পাখিদের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখে মনটা নেচে উঠল এবং বেশীই আনন্দ পাই। তখন মনের সুরে গাইতে লাগলাম-
বাংলাদেশ তুমি আমার আশা, বাংলাদেশ তুমি আমার ভালবাসা।
বাংলাদেশ তুমি আমার অহংকার, বাংলাদেশ তুমি আমার অহংকার।
নীল আকাশে গাঙচিল উড়ে বেড়ে যায়…


যাত্রাপথে কোনো এক ঘাটে জুমআর নামাজের যাত্রা বিরতি দেয়া হয়। আমরা অনেকেই পাশে একটি মসজিদে নামাজ আদায় করতে যায়। নামাজ শেষে আবার লঞ্চে ফিরি। কিছুক্ষণ পর দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই যার যার মত আড্ডায় মগ্ন হই। বিকেল ৩.৩০ ঘটিকায় মোহনপুর, চাঁদপুর পৌঁছি। পড়ন্ত বিকেলে মোহনপুর, চাঁদপুরের সৌন্দর্য ছিল এক অসাধারণ। এটা একটি পুরোই গ্রাম্য পরিবেশ ছিলো। সেখানে ক্ষেত হতে কৃষকের কাছ থেকে শাক-সবজি কিনেছে অনেকেই। সেখানে অনেকেই সেলফি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। সেখানে সবাই বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর আবার পুনঃরায় লঞ্চে উঠি। ওহ একটি কথা বলতে বলা হয় নি ভাগিনী সামিহার আগের দিন হতে দুপুর পর্যন্ত পচন্ড জ্বর ছিল সাথে বমিও। তবে শেষ বিকেলে তার দুষ্টুমি চোখে পড়ার মত। শেষ বিকেলটা অনেকটা উপভোগ্য ছিলো। নিজ গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেই সাথে কাঙ্ক্ষিত ও বহুল প্রতীক্ষিত রোমাঞ্চকর মেয়েদের বালিশ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছোট ছোট শিশুদের দিয়ে কুপন তোলা শুরু হয়, টান টান উত্তেজনা, সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে; কেউ কেউ দু’আও পড়তেছে। র ্যাফেল ড্র মানেই ভাগ্যের খেলা। ভাগ্যের খেলা দেখতে কার না ভাল লাগে। ষোল নাম্বার পুরস্কার দিয়ে শুরু সেটাই ভাগিনী সামিহা পায়। যদিও আর পাওয়া হয় নি। যাই হোক একে একে ঘোষণা আসতে শুরু করে। ভাগ্যবান-ভাগ্যবতীদের মুখে এক চিলতে হাসি। বিজয়ীদের আনন্দ দেখে বঞ্চিতরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে র ্যাফেল ড্রও সম্পন্ন হয়। রাতে ভারবিকিয়োর আয়োজনও ছিলো। অবশেষে রাত ১০.০০ ঘটিকায় সবাই নিজ নিজ গন্তব্য স্থানে পৌঁছি। এর আগে একে একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং বিদায় জানায়। একই সাথে এই রকম রোমাঞ্চকর লঞ্চ ভ্রমণ আয়োজন করার জন্য আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাতে ভুলেন নি।

Comments

comments

About

Check Also

ইমাম সাব

ইমাম সাবের চেহারা দেখে টাসকি খেয়ে গেল হাসান। ‘ইহাও দেখার বাকি ছিল!’ ঝরে যাওয়া ঝাড়–র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *