স্নেহ ও সম্মান, যথার্থ ঈমান

আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগেও বাসে-বাহনে বয়স্ক লোক দেখলে অন্যরা তাকে বসার সুযোগ করে দিত। এমনকি নিজে দাঁড়িয়ে হলেও। এ দৃশ্য সর্বত্র সুলভ না হলেও অধিকাংশ সময় এমনটি ঘটত।
আজকের দৃশ্য প্রায়ই উল্টো; পারলে দাদার বয়সী মুরব্বীকে দাঁড় করিয়ে নিজে বসে পড়ে। দেখেও না দেখার ভান করে। পরের লোক তো পরের কথা, ঘরের লোক তথা আপনজন হলেও যেন অসংলগ্ন আচরণের ব্যতিক্রম মিলছে না। পারলে সিগারেটের অর্ধেক খেয়ে বাকিটা চাচাকে অফার করে। অর্থাৎ, সর্বত্র এক বল্গাহীন বেআদবী। অথচ এই সামান্য মুরব্বিজ্ঞান ছিল কমন সেন্স-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ ও স্বাভাবিক শিষ্টাচারের দাবি।
আমরা নানা তত্ত্ব, তথ্য ও প্রযুক্তিতে ক্রমাগতভাবে সমৃদ্ধ হয়ে চলছি। একই সাথে সত্যিকার সভ্যতা, ভব্যতা, মানবিকতা ও সহৃদয় যুক্তিতে পিছিয়ে পড়ছি। সমান বা ততোধিক গতিতে।
বিষয়টি তো যুগপৎ মুসলমানি জিন্দেগীরও অংশ। নবিজী স. পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত কেউ না। ভাবুন তো, এই লোকটি কি মহাজটিলতার মুখোমুখী না হয়ে জান্নাতে যেতে পারবে? সরল হিসাব তা বলে না।
এ ব্যাপারে মহানবী স. পার্থিব পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন। নবীজীর ভাষায়, যে ব্যক্তি কোন বৃদ্ধকে তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান করবে, আল্লাহ তাআলা তার বার্ধক্যে এমন লোক নিয়োগ করে রাখবেন, যে তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।


অবশ্য মুদ্রার অপর পিঠেও মুরব্বিদের নজর দেয়ার দায়িত্ব আছে। এবং সে দায়িত্বই র‌্যাংকিং-এ এগিয়ে। প্রিয়তম নবীজীর ভাষায়, যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত কেউ নয়। (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক)। অতঃপর, হাদিসের দ্বিতীয় অংশে গিয়ে বলেছেন, বড়দেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার কথা।
মুরব্বিরা যদি তাদের দায়িত্বগুলো ঠিকঠাক আনজাম দেন, ছোট বা অধীনস্তরা তাহলে রেজাল্টটা ঠিকঠাক ডেলিভারি দেবে বলে আশা করা যায়। যদি নাও দেয়, আমার জবাবদিহি থেকে তো আমি মুক্ত থাকলাম। এবং সেটাই বড় কথা।
বাবা-মা ও অভিভাকরা যদি বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেন তাহলে খুব ভাল হয়। পারিবারিক সুশিক্ষা ছাড়া কিছুতেই এই শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। হাদিসে আছে, একজন পিতা তার সন্তানকে সর্বোচ্চ যা দিতে পারেন, তা হচ্ছে শিষ্টাচার ও সুশিক্ষা। কোন দান অবদানই এর সাথে তুল্য হতে পারে না। এমন সন্তান পেছনে রেখে কবরেও সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
আর ছোটদেরকেও ভুলে গেলে চলবে না যে, মুরব্বিকে সম্মান করে কেউ কোন দিন ঠকবে না ইনশাআল্লাহ। ¯্রষ্টা বলতে যদি কেউ থেকেই থাকেন, তিনি অন্তত আমার সদাচারের জবাব দিতে ভুল করবেন না। আসুন, সর্বশক্তিমান সেই প্রেমময়ের সুন্দর জবাবটি পেতে একপায়ে দাঁড়িয়ে যাই। আগামী কাল থেকে নয়। এক্ষুণি।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *