আমার হাসানরে লইয়া গেলো-আমার হাসানের কি হইবো-আমার সরল পোলাডা কী ক্ষতি করছিলো তগোর- আমাগোর এহোন কী হইবো-জমিলা খাতুনের বুকফাটা আর্তনাদে কাশ্মীরের ছোট্ট এই গ্রামটির আকাশ ক্রমেই ভারী হতে থাকলো।
জমিলা খাতুনের এই আধভাঙ্গা নড়বড়ে কুটিরেই বাপহারা হাসানের জন্ম। সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে ওঠে। কেউ ছিল না তারপাশে। সকাল বেলার আধো আলোয় যখন তার হুশ ফেরে তখন শুনতে পায় হাসানের কান্নার আওয়াজ। আৎকে ওঠে সে। কোলের কাছে সন্তানের অস্তিত্ব টের পেয়ে আনন্দে ভরে ওঠে জমিলার মন।
সেদিন থেকে শুরু হয় তার নতুন সংগ্রাম। স্বামীহারা জমিলা সন্তানের মুখে খুঁজে ফেরে তার সবটুকু সুখ। নিজে দু’বেলা না খেয়ে থাকলেও ছেলের মুখে দু’মুঠো খাবার সে জোগাড় করে আনতো। দিন-মাস-বছর পেরিয়ে হাসান যখন ছয় বছরে পা দিয়েছে তখন বলে কয়ে স্থানীয় স্কুলে ভর্তিও করে দিয়েছিল তাকে। কিন্তু এতো অভাবের সংসারে স্কুলটি সে আর ধরে রাখতে পারলো না।
তবুও স্বপ্ন ঘুচে যায়নি জমিলা খাতুনের চোখ থেকে। সে স্বপ্ন দেখে যায়। এই তো আর কটা দিন। ছেলে বড় হয়ে উঠলো বলে। একদিন কষ্ট আর থাকবে না।
জমিলা খাতুনের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাদের সংসারে অভাব আর থাকেনি। হাসান বড় হয়েছে। তার আচার-ব্যবহারে পাড়া-প্রতিবেশি সবাই খুশী। তাই হাসানের কাজ-কর্মের অভাব হয়নি। ছেলের রোজগারে জমিলা খাতুন নড়বড়ে ঘরটি মেরামত করেছে। এখন মা-ছেলে বলা যায় সুখেই জীবন যাপন করছে। কিন্তু বিধিবাম। ভারত সরকারের কু-দৃষ্টি পড়েছে কাশ্মীরের ওপর। মুসলমানদের ওপর প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে তারা। পারলে এখনি কাশ্মীরের মুসলমানদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংশ করে দেয়।
২০১৯ সালের ২৫ শে আগস্ট রাত্রি দ্বিপ্রহর। ভারতীয় সেনা নামক একদল হায়েনা ঝাপিয়ে পড়ে হাসানদের গ্রামে। হাসানসহ আশেপাশের অধিকাংশ যুবকদের ধরে নিয়ে যায় তারা। কেউ প্রতিবাদ করতে আসলে মেরে তাড়িয়ে দেয় তাদের। গ্রামবাসী অসহায় হয়ে পড়ে তাদের কাছে। কারণ তাদের কাছে আছে পাওয়ার ফুল আগ্নেয়াস্ত্র।
একটি খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায় হাসানদের। তারপর সবার হাতপা বাঁধে শক্ত করে। আর শুরু হয় নির্যাতন। লাঠি নয়, রড দিয়ে বেদম প্রহার করা হয় তাদের। গোস্ত থেতলে দেয় প্রতিটি অঙ্গের। কারো হাত কারো পা আবার কারো মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয় পিটিয়ে। অকথ্য নির্যাতনে যখন তারা চিৎকার দিয়ে ওঠে তখন তাদের মুখে কাদা ভরে দেয় আবু জেহেলের উত্তরসূরীরা।
কী তাদের অপরাধ? প্রশ্ন করে কোন জবাব পায় না কেউ। অদৃশ্য হতে যেন কেউ জবাব দেয়-তোমরা মুসলমান এটাই তোমাদের অপরাধ। হায় নিয়তি-কাশ্মীরের মুসলমান হত্যা করে দুনিয়া থেকে ইসলামকে বিলুপ্ত করতে পারবি জারজ বীজধারী কুকুরের সন্তানেরা!
হায় ভারতীয় শুকরের ঔরসজাত সৈনিকেরা! তোরা মোটেই জানিস না, তোদের চেয়ে আরো ভয়ংকর শুকর ছিল আমাদের নবী সা. এর সময়ে। খোদার মদদে সেই হিং¯্র পশুগুলোর কি পরিণতি হয়েছিল তাই দেখ। মূর্খ থাকিস না। ইতিহাস পড়ে শিক্ষা নে।
পরদিন ভোরবেলা। সেই খোলা মাঠে পড়েছিল কারো মৃতদেহ অথবা কারো আধমরা পঙ্গু সন্তান। কাশ্মীরের মাটিতে তারা আর বিচার পেল না। একমাত্র আল্লাহর কাছেই এর বিচার ন্যাস্ত করে সহ্য করল সব।
দু’দিন পর এই গ্রামে আবার আসলো তারা। জমিলা খাতুন ঘরের মধ্যেই ছিল। সেনা হায়নাদের গলার আওয়াজ পেয়েই একগ্লাস পানি হাতে বেরিয়ে পড়ল সে। জামিলা খাতুনকে পাগলি মনে করে সৈন্যরা মজা করার জন্য সামনে এগিয়ে এলো। জমিলাও সুযোগ হাতছাড়া করল না। গ্লাসভরা এসিড ছুড়ে মারল ওদের মুখে তারপর দেখা গেল মজার দৃশ্য। এসিডে পুড়ে এবার সেনাদের চেহারা যেন শুকরের রূপ ধারণ করেছে। ধরাশায়ী হল পাঁচ সেনা সদস্য। তারপর পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে দিল উত্তেজিত গ্রামবাসী।