অপরূপ গুলমার্গে একবেলা (ভ্রমণ কাহিনী)

কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে রওনা হলাম ভূস্বর্গ কাশ্মিরের অপূর্ব লীলাভূমি গুলমার্গ দেখতে। কাশ্মীরে এসে পৌঁছেছিলাম আগেই। সমতল ভূমি থেকে একসময় চলা শুরু হলো পাহাড়ে। মেঘের কাছাকাছি হচ্ছি বলে শীত বাড়ছিল হু হু করে। গরম কাপড় সাথে যা ছিল পরে নিলাম। জানালা দিয়ে দেখতে লাগলাম সবুজ পাইনগাছের অপূর্ব দৃশ্য। লম্বা লম্বা গাছগুলোর পাতায় পাতায় জমে আছে সাদা বরফ। ছবিতে বহুবার দেখছি এমন সুন্দর দৃশ্য। তখন মনের দরজায় ভিড় করত হাজারো স্বপ্ন। ইচ্ছে হতো, ওই বরফগুলোর মতো আমিও যদি পাইন গাছের শাখে শাখে ঘুরে বেড়াতাম! এখন দেখছি অতি কাছ থেকে। আমার জন্য এর থেকে রোমাঞ্চ আর কিছু হতে পারে না! পরস্পর গল্প আর হাসিঠাট্টা করতে করতে একসময় পৌঁছলাম গুলমার্গে। বরফে ঢাকা শুভ্র গুলমার্গ আহ কত সুন্দর! একেবারে ছবির মতো। সান্ধ্যকালীন আলোয় বরফগুলো নীলচে হয়ে মায়াবী রূপ ধারণ করে রেখেছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল আমিও মিশে যাই নীলচে ওই বরফে! কিন্তু মোশতাক ভাই বললেন, ‘যত আনন্দ করার কাল করা যাবে। আজ বিশ্রাম করুন।’
চার পাশে বরফে আবৃত একটি হোটেলে রুম বুক করা হলো। রাতে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়লাম। সারা দিনের কান্তিতে অল্পতেই ঘুম এসে জড়ো হলো চোখে। খুব ভোরে ঘুম ভাঙল একটানা টাপুরটুপুর শব্দে। শিশিরের পানি গড়াচ্ছে বরফের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে। আশা ছিল তুষারপাত দেখব। কিন্তু আজ তুষার পড়েনি একটুও। জানালা খুলে বাইরে তাকালাম। সকালের স্নিগ্ধ আলোয় শুভ্র পরিবেশ আরো মোহনীয় হয়ে ধরা দিলো দু’চোখে। অজু করে নামাজ পড়লাম। সকাল ১০টার দিকে নাশতা সেরে বেরুলাম হোটেল থেকে।
এজাজ ভাই বলে দিয়েছিলেন, বরফে যাওয়ার আগে বুট জুতা ভাড়া করে নিতে। না হয় সমস্যায় পড়তে হবে। পা পিছলে আহত হওয়ারও শঙ্কা আছে। একটা দোকান থেকে বুট জুতা ভাড়া করে নেমে পড়লাম বরফে। গুলমার্গের এই পর্যটন এলাকাকে ঘিরে এখানের মানুষের চলে রমরমা ব্যবসা। কেউ ভাড়া দেয় বরফে চালিত কাঠের বিশেষ ধরনের গাড়ি, কেউ স্কেটিং করার যন্ত্রপাতি। তাদের এগুলো ভাড়া নেয়ার জন্য আমাদের ঘিরে ধরল। বরফে স্কেটিং করার ইচ্ছে ছোটবেলা থেকেই। দরদাম করে ১০০ রুপিতে ভাড়া নিলাম স্কেটিংয়ের যন্ত্র। চালক আমাদের বুঝিয়ে দিলেন চালানোর সিস্টেম। দু-একবার করেই বুঝে ফেললাম। তার পরও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দড়াম করে পড়ে গেলাম একবার। চালক এসে টেনে তুললেন। নরম বরফ হওয়ায় ব্যথা পেলাম না একটুও। বেশ আনন্দ পেলাম স্কেটিং করে। কান্ত না হওয়া পর্যন্ত মেতে রইলাম এই আনন্দে।


যত দূর চোখ যায় কেবল বরফ আর বরফ। দূরের পাহাড়গুলোও বরফে সাদা হয়ে আছে। দণি দিকের কয়েকটি পাহাড়ের চূড়া মেঘের ওপরে। নিচে ভাসছে মেঘের ভেলা। ইচ্ছে হচ্ছিল আহ, উড়ে গিয়ে যদি মিশে যেতে পারতাম ওই শুভ্রতায়! কিন্তু নির্দিষ্ট উচ্চতার পর ওপরে যাওয়া নিষেধ। সব জায়গায় আর্মির পাহারা রয়েছে। তাই বরফে আবৃত এ প্রান্তর দেখে সাধ মেটাতে হলো।
মাঝে মধ্যে ছোট খালের ওপর নির্মিত হয়েছে সুন্দর সুন্দর সেতু। এসব খালে গরমকালে পানি থাকলেও এখন বরফে ঢাকা। সেতুর ওপর উঠে কাশ্মিরি পর্যটকদের সাথে সেলফি তুলে নিলাম কয়েকটা।
কোনো জায়গায় হাঁটু পর্যন্ত বরফ। বুট না নিয়ে এলে সত্যিই খুব মুশকিলে পড়তে হতো। এত বরফ দেখে আনন্দে সবাই লাফালাফি করতে লাগল। গোল পাঁকিয়ে পরস্পর ছোড়াছুড়ি করলাম। বরফের বালুতে ওপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়লাম। শুয়ে বসে সেলফি তুলে নিলাম। বরফে ঘুরে ঘুরে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম। ঠাণ্ডায় যেন হাত-পা জমে যাওয়ার অবস্থা। এ দিকে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো, জানতেই পারলাম না। বরফে হেঁটে হোটেলে ফিরে এলাম। জোহরের নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে ফের ছুটে চললাম শ্রীনগরের পথে। পেছনে রেখে গেলাম বরফে ঢাকা অপরূপ সৌন্দর্যের আধার প্রিয় গুলমার্গ।

Comments

comments

About

Check Also

ইমাম সাব

ইমাম সাবের চেহারা দেখে টাসকি খেয়ে গেল হাসান। ‘ইহাও দেখার বাকি ছিল!’ ঝরে যাওয়া ঝাড়–র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *